ঢাকা: গেল কয়েক বছরের চেয়ে এবার শীতের দাপট বেশ তীব্র। শৈত্যপ্রবাহসহ পৌষ থেকেই জেঁকে বসেছে শীত, যাকে বলে হাড় কাঁপানো শীত।
দেশের কোনো কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নিচেও নেমেছে। এমন তীব্র শীত ও সূর্য ঢাকা কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবন। শীতে এবার কাঁপছে ঢাকা চিড়িয়াখানার হিংস্র পশুসহ অন্যান্য পশুপাখিও। মানুষের মতোই নাকাল তারা।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা মিলল এমনই চিত্র। দেখা গেল শীতের দাপটে খাঁচায় জুবুথুবু অবস্থা প্রাণিদের। গায়ের লোম ফুলিয়ে জড়সড় হয়ে বসে শীতকে নিবারণ করছে তারা। শীতে অনেকটা ‘প্রাণহীন’অবস্থা তাদের।
চিড়িয়াখানায় শীত একটু বেশিই। ৪০-৪৫ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এই চিড়িয়াখানার মধ্যে রয়েছে হাজারও রকমের বড়-ছোট গাছ। যেখানে গাছপালা বেশি থাকে। সেখানে মূলত শীতও একটু বেশি লাগে। তার ওপর গাছের ছায়ায় নির্মিত পশু-পাখিদের খাঁচায় সেভাবে রোদ পৌঁছায় না। তাই শীতটা তাদের গায়ে বেশি লাগাই স্বাভাবিক।
চিড়িয়াখানায় ঘুরে দেখা যায়, গায়ের লোম ফুলিয়ে দলবদ্ধ অবস্থায় ঘাপটি মেরে বসে আছে পশুপাখিগুলো। আবার কেউ কেউ একা একা শীত থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে।
পশু-পাখির মধ্যে বিশেষ করে বানার, ইমুপাখি, ময়ূরপাখিগুলো শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছে এবং মাটিতে মুখ ঠেকিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে।
বলা হয়, মাঘের শীত বাঘের গায়ে। তবে এবার পৌষের শীতেই নাজেহাল অবস্থা রয়াল বেঙ্গল টাইগারের। খাঁচায় জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে বাঘগুলো। চলাফেরা বা গর্জন নেই তেমন।
শীতে গা গরম করতে দলবদ্ধ হয়ে থাকছে হরিণগুলো। দলছুট হয় না কখনও। যতোটা ঘেষাঘেষি করে শীত নিবারণ করা যায় সেই চেষ্টায় তারা।
শীতে নড়াচড়ায় রাজি নয় পাখিটি। ডানা ঝাপটাতে আগ্রহী নয় সে। ্নিজেকে যতোটা গুটিয়ে রেখে গায়ের তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এই পাখিটিরও একই অবস্থা। শীতে গলাই বের করতে আগ্রহী নয় সে।
শীতে কঠিন পরিস্থিতি বানর, হনুমান, শিম্পাঞ্জিদের। গায়ের লোম ফুলিয়ে রাখতে হচ্ছে তাদের। বাচ্চাগুলো মায়ের কোলে তাপ নিয়ে শীত নিবারণ করছে।
পশুপাখিদের শীত নিবারণে সাধ্যমতো ব্যবস্থা নিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। মোটা বালুর বিছানা করে দেওয়া হয়েছে অনেকগুলোর খাঁচায়। অনেক প্রাণির খাঁচা পাটের চট দিয়ে কিছু অংশ ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।
শীতে পশুপাখির অবস্থা জানাতে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো.রফিকুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, এবারের শীতে আমাদের পশু-পাখির তেমন কোন ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা এখনও পর্যন্ত একটি প্রণী অসুস্থ হয়নি। তবে, আমরা প্রথম থেকেই প্রতিবছরের মতো পশু-পাখিদের যেন ঠাণ্ডা না লাগে তার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।
পশুপাখিদের শীত নিবারণের বিষয়ে তিনি বলেন, বাঘ, সিংহের খাঁচায় মোটা বালু দিয়েছি। বানার ময়ূর ও অন্যান্য পাখিদের মধ্যে যাদের শীত লাগার সম্ভাবনা বেশি তাদেরকে পাটের চট দিয়ে খাঁচাগুলো রাতের বেলায় ঢেকে রাখছি, সকাল হলেই দর্শনার্থীদের দেখার জন্য আবার চট গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। আবার কিছু বড় প্রাণীদের বেলায় তাদের খাঁচার মধ্যে আমরা খড় বিছিয়ে দিয়েছি, যাতে তাদের শীত কম লাগে।
দর্শনার্থী মো. রবিউল ইসলাম (৫৪) বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা। দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এর আগেও চিড়িয়াখানাতে আসছি। তবে এবার শীতের মধ্যেও এসে দেখতে পেলাম কিছু পশুপাখি শীতের কারণে ঘাপটি মেরে বসে আছে। পশুপাখিদের শীত থেকে বাঁচার জন্য চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ যদি আরো ভালো ব্যবস্থা নিতো এরা আরও ভালো থাকতে পারতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা ১২, ২০২৩
জিএমএম/এসএএইচ