ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বনের বানর ব্যস্ততার শহরে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
বনের বানর ব্যস্ততার শহরে আবাসিক এলাকার টিনের চালে বসে আছে বানর। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: শহরে আসছে বনের বানর! বলা নেই, কওয়া নেই! বাসা-বাড়িতে হঠাৎ নতুন প্রাণীর আবির্ভাব! বীরদর্পে সে হাঁটছে টিনের চালে অথবা ছাদের নির্জন কোণে।  

এ দৃশ্যে কেউ কেউ দারুণ অবাক! কেউ কেউ গভীরভাবে ভয়ার্ত! আবার কেউ কেউ মারাত্মক মারমুখী ভূমিকায় – সেই সদ্য আগন্তুক প্রাণীটির প্রতি।

কিন্তু কেন এমন ঘটছে? এর কারণই বা কী?

শ্রীমঙ্গলের শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সম্প্রতি বানর (Rhesus Macaque) প্রজাতির বন্যপ্রাণীগুলোকে দেখা গেছে।

একদিন নয়, একাধিক দিন। কেউ কেউ বলছেন- খাদ্যের সন্ধানে বিভিন্ন সময়ে লোকালয়ে বন্যপ্রাণীদের দেখা মেলে। শীতকালের ফলের সময় তাদের চলাফেরা আরও বাড়ে। এবার শীতের মৌসুমে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরে দেখা মিলেছে বানরের।

সম্প্রতি মাস্টারপাড়া আবাসিক এলাকা, জয়নগরপাড়া আবাসিক এলাকা, কলেজ রোড এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনের দেয়ালে দেখা মিলছে এসব বানরের।

এ প্রাণীগুলোকে ঘিরে স্থানীয়দের কৌতূহল আর ভিড় দেখা গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বন উজাড় হওয়ার কারণে খাদ্যের সরবরাহ কমে যাওয়ায় নানা সময়ে বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে আসতে দেখা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শহরে এবার দেখা মিলেছে বানরের। খাদ্যের সঙ্কটে লোকালয়ে এসেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

শ্রীমঙ্গল শহরের বাসিন্দা সজীব চৌধুরী জানান, বেশ কিছুদিন ধরে কলেজ রোডের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশে জনবহুল এলাকায় বানর দেখা যাচ্ছে। কখনো একা আবার কখনো দলবেঁধে তারা চলাফেরা করে। বিশেষ করে বিভিন্ন খাবারের দোকানের সামনে খাবারের জন্য ওৎপেতে থাকে। অনেকেই তাদের খাবার দেয়। কখনো কখনো বিরক্ত করলে ঝাপটাও দেয় এসব বানর। তবে নগরীর বেশির ভাগ মানুষ এসব বানর দেখে দেখে বিনোদন বা মজা অনুভব করেন।

তিনি আরও জানান, শহরের কলেজ রোড এলাকা ছাড়াও জালালিয়া রোড ও কালিঘাট রোড এমন বানরের দেখা মিলেছে। বানরগুলো খাবার সংগ্রহের জন্যই মূলত শহরে ঢুকে পড়ছে বলে আমার ধারণা।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, কয়েক বছর ধরে লাউয়াছড়ায় বানরের প্রজনন সংখ্যা বেড়ে গেছে। তারা তাদের দলগত অবস্থানের লক্ষ্য হিসেবে একেক সময় একেক স্থানে আশ্রয় নিয়ে থাকে। বনের বানরগুলো সাধারণত বনেই থাকে, তবে বনের আশপাশে ফলের মৌসুমে বিভিন্ন ফল খেতে যায়, আবার চলেও আসে। বানরগুলো দলবেঁধে যায়, অনেক সময় তারা দলছুটও হয়ে যায়। আমাদের ধারণা, তারা খাবারের জন্যই বনের বাইরে চলে আসছে।

তিনি বলেন, বনের বানরগুলো লোকালয়ে গেলেও ওরা গাছে গাছে দৌড়ায়। এদেরকে ধরা আমাদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য। এদেরকে ধরতে হলে ট্রাংকুলাইলার গান (বিশেষ রকমের ইঞ্জেকশন দিতে হয়) বা ক্যাটামিন (অচেতন করার ইঞ্জেকশন) এর সাহায্যে তাদের শরীরে পুশ করে তারপর ধরতে হয়। খুব বেশি অসুবিধা না করলে এগুলোকে সাধারণত ধরা হয় না। স্বভাবতই তারা আবার নিজ থেকেই লোকালয় থেকে বনে ফিরে যায়।

এছাড়াও বানরের দলের যে প্রধানপুরুষ থাকে সে কয়েক বছর তার দলে রাজত্ব করার পর নতুন ক্ষমতাধর কোনো শক্তিশালী পুরুষ বানর এসে তাকে যুদ্ধে পরাজিত করে সে দলটির নেতৃত্ব নিয়ে সেই পূর্বের প্রধান পুরুষটিকে দল থেকে বিতাড়িত করে। তখন সে একা হয়ে যায় এবং পথে পথে ঘুরে বেড়ায় বলে জানান তিনি।

শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, শ্রীমঙ্গল শহরের পার্শ্ববর্তী বন লাউয়াছড়া। সেই বনে খাদ্য ও বাসস্থান সঙ্কটের কারণে বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীরা শ্রীমঙ্গল শহরের দিকে চলে আসছে এবং এদের কোনো কোনোটা মানুষের হাতে ধরাও পড়ছে। তখন আমাদের খবর দিলে আমরা তাদের মানুষের কাছ থেকে উদ্ধার করে বন বিভাগের হাতে তুলে দেই।

তিনি আরও বলেন, শহরে প্রায়ই এখন দলছুট বানর দেখা যায়। এরা বিভিন্ন দোকানে গিয়ে চিপসসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেলে আমরা ছুটে গিয়ে সেগুলোকে উদ্ধার করি। এখন যে হারে প্রাণীরা শহরমুখী হচ্ছে, এতে তারা আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে। শহরে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের ধাক্কায় বা বৈদ্যুতিক তারে লেগে বন্যপ্রাণীদের মৃত্যুও হয়ে থাকে। এ প্রাণীগুলোর মধ্যে বানরের সংখ্যাই বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।