ঢাকা: আদিকাল থেকেই মসলা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, উপাসনা, সংরক্ষণ, ওষুধ ও নানাকাজে মানুষের জীবনের অংশ হয়ে রয়েছে। এখন থেকে প্রায় সাত হাজার বছর আগে গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় মসলার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
অন্যদিকে ভারতে বৈদেশিক বাণিজ্যের মূল উপাদান ছিল মসলা। সুগন্ধী ও কাপড়ের সঙ্গে মেসোপটেমিয়া, চীন, সুমেরিয়া, মিশর ও আরবে মসলার বাণিজ্য করতো ভারত।
প্রথম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন লেখালেখিতেও এর কথা পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে উটের কাফেলায় করে এসব মসলা কালিকট, গোয়া ও পূর্ব থেকে কার্থেজ, আলেকজান্দ্রিয়া ও রোমে পাঠানো হতো। বর্তমানে এসব মসলা প্রস্তুত হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। এমন একটি সময় ছিল যখন মানুষ ভারতীয় মসলা পেতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতো বণিকরা।
গুণগত মানের মসলা বাণিজ্য আয়ত্ত করার জন্য উৎসুক অন্যান্য শক্তিশালী সাম্রাজ্য থেকে ভারতে লম্বাপথ ও কঠিন সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে আসতো ব্যবসায়ীরা।
সপ্তম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে আরব বণিকরা পশ্চিমে ভারতীয় মসলা সরবরাহ করে। কিন্তু তারা মসলার মূল উৎসকে গোপন রাখে। ইউরোপীয়রা তাদের নিষ্প্রাণ খাবারকে সুস্বাদু করতে মসলার উৎসের খোঁজে সমুদ্র অভিযানে বের হয়। কিন্তু চাহিদা যত বেশি ছিল, মসলা সংগ্রহ ছিল ততটাই কঠিন। ওই সময় মসলার মূল্য ছিল সোনার চেয়েও বেশি।
কথিত রয়েছে, মধ্যযুগে এক পাউন্ড আদা ছিল একটি ভেড়ার সমান মূল্যবান। এক পাউন্ড জয়ত্রী ছিল তিনটি ভেড়া বা অর্ধেক গরুর সমান। অন্যদিকে এক বস্তা মরিচের দাম ছিল একজন মানুষের জীবনের দামে!
অন্য একটি হিসাব অনুযায়ী, মধ্যযুগের শেষভাগে পশ্চিম ইউরোপ প্রায় এক হাজার টন মরিচ ও আরও এক হাজার টন অন্যান্য সাধারণ মশলা প্রতিবছর আমদানি করতো। এসব মসলার মূল্য ছিল ১৫ লাখ লোকের জন্য বার্ষিক শস্য সরবরাহের সমতুল্য।
এক পর্যায়ে মসলার চাহিদা যুদ্ধ, চুক্তি ও সমুদ্রপথ আবিষ্কারের নেতৃত্ব দিলো।
বিশ্বাস করা হয়, পার্থিয়ান যুদ্ধের মূল কারণ, রোমানরা নিশ্চিত করতে চাইছিল ভারতে মসলার বাণিজ্য রুট তাদের জন্যই খোলা থাকবে। তারা ভারত ও চীন থেকে মসলা ও সিল্ক রুট খুঁজে পেতে পশ্চিম ইউরোপকে সাহায্য করেছিল।
ফার্দিনান্দ ম্যাগেল্লান, ক্রিস্টোফার কলম্বাস ও ভাস্কো দা গামা তাদের ঐতিহাসিক অভিযানে এশিয়ার মসলা ভূখণ্ডে নতুন রুট খুঁজে পেয়েছিলেন। এখানেও ছিল মসলা মরিচের গন্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১২ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
এসআই