ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মা মুরগির সঙ্গে হাঁসের ১২ ছানা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
মা মুরগির সঙ্গে হাঁসের ১২ ছানা মা মুরগির সঙ্গে হাঁসের ছানারা। ছবি: বাংলানিউজ 

মৌলভীবাজার: প্রাণী রাজ্যে একটি ভিন্ন চরিত্রের গৃহপালিত প্রাণী এবং জলে-ডাঙায় বিচরণকারী গৃহপালিত উভচর প্রজাতির অপর এক প্রাণীর ছানারা পরম মমতায় মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। মা মুরগি আর হাঁসের ছানা-ওরা দুই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে অধিকারী।

তারপরও বড় আশ্চর্যজনকভাবে মাতৃস্নেহ ডোরে বাঁধা পড়েছে।

হাঁস নয়, ওই ছানাদের মা এখন মুরগি! মুরগি মায়ের শারীরিক লোমশ উত্তাপ থেকে জন্মলাভ করে বড় আশ্চর্যজনকভাবে জন্মের অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে বাধা পড়েছে হংসছানাগুলো! 

সম্প্রতি এক সকালে দেখা গেল চা বাগান অধ্যুষিত এলাকার এক নিভৃত পর্ণকুটিরে মুরগি মা কিছু হাঁসের ছানাদের নিয়ে আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একত্রে জড়ো হয়ে গাদাগাদি করে ছুটছে ওরা কখনো মায়ের আগে, কখনো মায়ের পিছু পিছু। কৌতূহল মাত্রার টানে কাছে যেতেই ওরা যে যার মতো করে উধাও! কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আবারও একইভাবে ছবি ধারণের চেষ্টা করার হলে ওরা বিরক্তবোধ করে নিজেরাই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। অগত্যা গৃহকর্তার সাহায্য চাওয়া হলো।  

গৃহকর্তা গোপাল দাস জানান, এক ডজন হাঁসের ডিম দিয়ে মা মুগরিকে ছানা ফুটানোর জন্য টুকরিতে বসানো হয়েছিল। প্রায় চার সপ্তাহ পর সবগুলোই ডিম ফুটে হাঁসের ছানা বের হয়েছে। একটি ডিমও নষ্ট হয়নি। মুরগিই এই হাঁসের ছানাদের সারাক্ষণ দেখাশোনা করে।   

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডিম হতে বের হওয়ার পর তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত সুষ্ঠু জীবনপদ্ধতি ও শরীর বাড়ার জন্য হাঁস-মুরগির বাচ্চাকে তাপ দেওয়া ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের ব্যবস্থা করা কে ‘ব্রডিং’ বলে। ছানাদের শরীরের তাপ রক্ষার জন্য পালক গজানোর আগ পর্যন্ত ব্রুডিং করতে হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখি ডিম ফুটানোর পর নিজেরাই (মা পাখি) অনুকূল পরিবেশে রাখার ব্যবস্থা বা ব্রিডিং করে থাকে।  

এরূপ ব্যতিক্রমী দৃশ্যের নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ মৌলভীবাজার জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম উপাদান হলো হাঁস-মুরগির পালন। গ্রামের প্রায় সবার ঘরে ঘরে দেখা যায় হাঁস-মুরগি। মুরগি দিয়ে হাঁসের ডিম ফোটানো আমাদের গ্রামবাংলা চিরন্তন ঐতিহ্য।  

শহরে এটি দেখা যায় না, তবে এখন গ্রামেও কমে গেছে। মুরগি যখন ডিম পাড়া শেষ করে যেটাকে ‘কচি মুরগি’ বলে আর আমরা এটাকে আমাদের ভাষায় ‘ব্রুডার’ বলি। তো ব্রুডারের নিচে হাঁসের ডিম মুরগির ডিম সবই দেওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, মুরগির শারীরিক ওজনের অর্ধেক ওজনের ডিম দিতে হবে। যেমন ধরুন, মুরগির ওজন যদি দেড় কেজি হয় তাহলে সাড়ে ৭শ গ্রামের ওজনের অনুপাতে ডিম দিতে হবে। সাড়ে ৭শ গ্রামের যতটা ডিম হয়। হাঁসের ডিম ২৮ দিন এবং মুরগির ডিম ২১ দিন তা (ডিমের ওপর মুরগি বসে ডিম থেকে ছানা ফোটানোর পদ্ধতি) দিতে হয়।

সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ মা মুরগির সঙ্গে হাঁসের ছানাদের রাখতে হবে। তারপর মার কাছ থেকে ছানাদের আলাদা করে ফেলতে হবে। তাতে করে কিছু দিনের মধ্যেই আবার মুরগিটি ডিম পাড়তে শুরু করবে। তা না হলে মুরগি ওই বাচ্চাগুলোকে নিয়ে ঘুরতেই থাকবে, ডিমে আর আসবে না।  

পৃথকীকরণের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, এটাকে আমাদের ভাষায় ‘আর্লি সেপারেশন’ (তাড়াতাড়ি পৃথকীকরণ) বলি। এটাতে দুই ধরনের সুবিধা রয়েছে। একটি হলো- বাচ্চাগুলো তাদের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হতে থাকবে। দ্বিতীয়টি হলো, মা তাড়াতাড়ি ডিমে চলে আসবে। মুরগি বা হাঁস উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। এরপর ছানাদের রুটিন মতো বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।  

প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুস্থ ও দরিদ্র কৃষক এবং ক্ষুদ্র খামারিদের যারা হ্যাচারি থেকে হাঁসের বাচ্চা কিনতে পারেন না তাদের আমরা এ বিষয়ে পরামর্শ এবং নানান টেকনিক শিখিয়ে থাকি বলে জানান ডা. আব্দুস ছামাদ।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।