ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

মিঁউ সাহেবদের গ্রাম

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১০
মিঁউ সাহেবদের গ্রাম

বিড়ালের প্রতি কখনই তার ভালোবাসা ছিল না। বিড়াল পোষার কথা তিনি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেননি।

অথচ তিনিই আজ হয়ে উঠেছেন পৃথিবীতে বিড়ালের সবচেয়ে বড় বন্ধু। আশ্রয়হীন বিড়ালদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন বিশাল এক বিড়ালগ্রাম। যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডার বিড়ালবান্ধব এই মানুষটির নাম ক্রেইগ গ্র্যান্ট।

ক্রেইগের ছেলে বিড়াল পুষত। তার একটা মেয়ে বিড়াল ছিল। কিন্তু পড়াশোনার জন্য তাকে অন্য শহরে চলে যেতে হলো। সেখানে বিড়াল নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। আর তাই ছেলের শখের ওই বিড়ালের দেখাশোনার ভার পড়ল ক্রেইগের ওপর। কী আর করা! তাকে ওই বিড়ালের যতœ নিতেই হলো। একদিন দেখলেন বিড়ালটি মা হতে চলেছে। হঠাৎ এক ভোরে দেখলেন ওটা পাঁচ বাচ্চার মা হয়ে গেছে। বেচারা ক্রেইগ পড়লেন মহা ফাঁপড়ে। কী করবেন বুঝতে না পেরে ছেলেকে ফোন করলেন। ছেলে জানিয়ে দিল কীভাবে ওগুলোর যতœ নিতে হবে আর খাওয়াতে হবে। তিনি তাই করলেন।
 
বাচ্চাগুলো যখন একটু বড় হয়ে উঠল তখন শুরু হলো আরেক যন্ত্রণা। ওগুলোর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে প্রতিবেশীরা তার কাছে নালিশ শুরু করলেন। একদিন তো এক প্রতিবেশী একটি বাচ্চাকে এয়ারগান দিয়ে গুলিই করে বসলেন। ক্রেইগ ব্যথিত হলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন বিড়ালগুলোর জন্য আলাদা বাসস্থান বানাবেন।

এরই মধ্যে বিড়ালের জন্য তার ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে অনেক। তিনি পরিকল্পনা করলেন, ভবঘুরে বিড়ালদের জন্য একটি গ্রাম তৈরি করবেন, যেখানে থাকবে শুধু বিড়াল আর বিড়াল। তিনি জায়গা খুঁজতে লাগলেন। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে তার বাড়ি জ্যাকসনভিল থেকে ১০০ মাইল দূরে একটি গাছপালাঘেরা খামার কিনে নিলেন। একশ একরের ওই জায়গার ঠিক মাঝখানে ৩০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি করলেন বিড়ালের আকৃতি অনুযায়ী ছোট ছোট বাড়ি, রাস্তা, মার্কেট, বিশ্রামের জায়গা, পার্ক আর বিড়ালদের আড্ডার জায়গা। এজন্য সেখানে তিনি অফিসও গড়ে তুললেন।

২০০৩ সালে ক্রেইগ বিড়ালগুলোকে সেখানে স্থানান্তর করলেন। তখন তার কাছে ছিল মাত্র ১১টি বিড়াল। এরপর তিনি ভবঘুরে বিড়াল সংগ্রহ শুরু করলেন। এক বছর পর তার বিড়ালের সংখ্যা দাঁড়াল ২২। এভাবেই তার বিড়াল গ্রামের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শুরু। বর্তমানে তার সেই বিড়ালগ্রামে বাস করে ৬৬০টি বিড়াল। সেখানে ওরা নির্ভাবনায়, নিঃসঙ্কোচে চলাফেরা করে। খায়, ঘুমায় আর আড্ডা দেয়। ওদের ভীতিহীন জীবন দেখে ভরে ওঠে ক্রেইগের মন।

সম্প্রতি ক্রেইগ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এতগুলো বিড়াল পোষা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। তিনি দিনের প্রায় ১৪ ঘণ্টাই বিড়ালদের পেছনে ব্যয় করেন। আর প্রতিটি বিড়ালের খাবার ও পরিচর্যা বাবদ এখন তার বছরে খরচ হচ্ছে ৫৫০ ডলার।

এদিকে তার ওই বিড়ালগ্রামের কথা দেশ ছেড়ে পৌঁছে গেছে বিদেশের পর্যটকদের কানেও। বর্তমানে ওই বিড়ালগ্রাম দেখার জন্য একটু একটু করে পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। ক্রেইগ মনে করেন বিড়ালের সংখ্যা বাড়লে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে। আর তখন বিড়ালগুলোর খাবার কিংবা যতেœর খরচের কথা চিন্তা করতে হবে না।
 
বিড়ালগুলো পোষার জন্য যে খরচ হচ্ছে তা তিনি নিজের তহবিল থেকেই দিচ্ছেন। তবে সহায়তা তহবিলও খুলেছেন। যে কেউ ইচ্ছা করলে সেখানে সাহায্য করতে পারেন।

ক্রেইগের এই বিড়ালগ্রাম থেকে পোষার জন্য কাউকে বিড়াল দেওয়া হয় না বা বিক্রিও করা হয় না। কারণ ভবঘুরে, অশ্রয়হীন বিড়ালদেরই সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, এটাই তাদের চিরকালের ঠিকানা।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০১০, অক্টোবর ০৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।