ঢাকা: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের বছরের সেরা দশ আয়োজন বা ইভেন্টের তালিকায় উঠে এসেছে ভারতের গুজরাটের আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব। ২০২৪ সালে ভ্রমণ পিপাসুরা অংশগ্রহণ করতে ভালোবাসবে, বিশ্বের এমন ১০টি সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ইভেন্টগুলো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।
গুজরাটের আকাশে এখন চোখ রাখলেই দেখা যাবে পত পত করে উড়ছে নানা আকৃতির রঙিন ঘুড়ি। এদের মধ্যে আছে অতিকায় গোখরা, জেলিফিশ আর ঝুঁটিওলা মোরগসহ নানা ধরনের ঘুড়ি। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও দেখা যেতে পারে এক ঝলক। গুজরাটের আহমেদাবাদে শুরু হয়েছে এই আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব। আর সেখানেই এই নানা রঙের ঘুড়িগুলো দোল খাচ্ছে বাতাসে।
গত ৮ জানুয়ারি গুজরাটে শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। সবরমতি নদীর পাড়ে উৎসবটির উদ্বোধন করেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে মেতে ওঠেন। রাজ্যের বেশির ভাগ শহরের আকাশে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রংবেরঙের ঘুড়ি ওড়ে।
রাতের বেলায়ও ঘুড়ি যোদ্ধারা অন্ধকারে দেখা যায় এমন ঘুড়ি ওড়ান। বিভিন্ন আকার ও রঙের ঘুড়ি ওড়ানো হয় এ সময়। শুধু তাই নয়, কার ঘুড়ি কতক্ষণ আকাশে উড়তে পারে তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতাও। কাছাকাছি কোনো ঘুড়ি অন্য ঘুড়ির কাছে গেলেই সুতা কাটার যুদ্ধ শুরু হয়।
ঐতিহ্যবাহী এই ঘুড়ি উৎসব নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক লিখেছে, “শীতের শেষে সূর্যের আলো ফিরে আসার আনন্দে ছেয়ে গিয়েছে আহমেদাবাদের আকাশ! বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ঘুড়ি নির্মাতারা এসে জমিয়েছে এই উৎসব। তাদের অসাধারণ সৃষ্টি শূন্যে নাচছে। জাপানের ঐতিহ্যবাহী ‘রোকাকু’ (যুদ্ধ ঘুড়ি) থেকে মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়াউ বুলান’ (চাঁদ ঘুড়ি) দেখে সকলে মুগ্ধ হবেন। স্থানীয়রা এবং দর্শকরাও উৎসবে মেতে ওঠে, তাই আপনিও আপনার ঘুড়ি নিয়ে এসে যোগ দিতে পারেন এই উৎসবে! আর নান্দনিক এই উৎসবটি অনুষ্ঠিত গুজরাট রাজ্যের বৃহত্তম মহানগর এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য শহর হচ্ছে আহমেদাবাদে। ”
উৎসবটি হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়, যা মকর সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ নামে পরিচিত। উত্তরায়ণে গুজরাটের আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে ঘুড়িতে। যেদিকেই নজর যায়, গুজরাটের আকাশ নানান রঙে সেজে থাকে। আর বিশাল এই ঘুড়ি উৎসবকে গত কয়েকবছরে আন্তর্জাতিক মানের তৈরি করেছে গুজরাট সরকার। এই উত্তরায়ণকে কেন্দ্র করে দেশে প্রায় সর্বত্র ঘুড়ি ব্যবসায়ীদের রমরমা থাকে। মাঞ্জা, লাটাইয়ের চাহিদাও থাকে তুঙ্গে।
গুজরাটের আহমেদাবাদ ছাড়াও ভাদোদরা, কেবড়িয়া, দ্বারকা, সুরাত, রাজকোট, ধোরদোতেও উড়েবে ঘুড়ি। ভারতের ১২ রাজ্যের ৬৮ ঘুড়ি বিশারদের পাশাপাশি এখানে ঘুড়ি নিয়ে হাজির হয়েছেন ৫৫ দেশের ১৫৩ জন ঘুড়িপ্রেমী। ঘুড়ির সুতাগুলো যতটা সম্ভব মাঞ্জা দিয়ে ধারালো করা হয় প্রতিযোগিতার জন্য। নভেম্বর থেকেই আহমেদাবাদের রাস্তায় ঘুড়ি উৎসবের প্রস্তুতি দেখা যায়। পুরনো শহরের বিশেষ ঘুড়ির বাজারে নানা ধরনের ঘুড়িতে ভরে ওঠে এবং বাজার ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এ সময় বিশেষ ধরনের খাবারও প্রস্তুত করা হয়। রাজ্যের সবাই স্বাভাবিক কাজকর্ম ফেলে ঘুড়ি ওড়ানোর নেশায় ছাদে জড়ো হয়, বন্ধু ও প্রতিবেশীরা দলগতভাবে ঘুড়ি ওড়ায় এবং মজা করে।
১৯৮৯ সাল থেকে আমেদাবাদ শহর আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে। সারা বিশ্ব থেকে ঘুড়ি প্রস্তুতকারক ঘুড়ি দিয়ে জনতাকে মুগ্ধ করার জন্য এখানে চলে আসে। গুজরাটের শহরগুলোর হাজারখানেক ঘুড়িপ্রেমীও নিজেদের জাহির করেন নগরীর আকাশে। বিগত বছরগুলোতে মালয়েশিয়ার ঘুড়ি নির্মাতারা তাদের ওয়াউ-বালং ঘুড়ি নিয়ে এসেছেন, ইন্দোনেশিয়া থেকে লায়াং-লায়াংহাভে এসেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঘুড়ি উদ্ভাবকরা এসেছেন বিশাল ব্যানারের ঘুড়ি নিয়ে। এ ছাড়া জাপানি রোক্কাকু ফাইটিং ঘুড়ি, ইতালীয় ভাস্কর্যের ঘুড়িসহ চীনা উড়ন্ত ড্রাগন গুজরাটের আকাশে উড়েছে। মকর সংক্রান্তির শুরুর দিকে উজ্জ্বল সূর্যালোকের সঙ্গে থাকে ঝিরঝিরে বাতাস। ঘুড়ি ওড়ানোর এ উৎসবের জন্য তাই এই সময়টাকেই বেছে নেয় গুজরাটের বাসিন্দারা।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, গুজরাট ট্যুরিজম, ইটিভি ভারত, ট্রাভেল ইন্ডিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
এইচএমএস/এমজেএফ