ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ফেব্রুয়ারি ছাড়া কদর পায় না সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪
ফেব্রুয়ারি ছাড়া কদর পায় না সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

ফেনী: ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় ভাষা আন্দোলনের শহীদ আবদুস সালামের স্মৃতিরক্ষার্থে নির্মাণ করা হয় ‘ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’। উপজেলার সালাম নগর গ্রামে আবদুস সালামের বাড়ির অদূরে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারটির একতলা ভবনের ১১টি আলমারিতে হাজার তিনেক বই ঠাসা থাকলেও নেই পাঠক।

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি ছাড়া খোলাও হয় না নিয়মিত। জাদুঘরে শহীদ সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই।

সারাবছরে সাকুল্যে কয়েকজন দর্শনার্থী মিললেও খাতা-কলমে একজন পাঠকেরও হদিস মেলেনি ভাষাশহীদ সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে। পাওয়া যায়নি পাঠক রেজিস্টার খাতাও। ২০০৮ সালে সরকার এটি প্রতিষ্ঠা করলেও জমিয়ে তোলা যায়নি ১৬ বছরেও। জেলা পরিষদ থেকে একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে; তারাও কাটান অলস সময়।

স্থানীয় সচেতন মহল আক্ষেপ করে বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া কদর পায় না শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এটি সরব করে তোলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাবসহ নানা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  

স্থানীয় সংবাদকর্মী ইফতেখারুল ইসলাম জানান, এখানে পাঠাগার ও স্মৃতি জাদুঘর করা হলেও পাঠক-দর্শনার্থী টানার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদি আশপাশের বিদ্যালয়গুলোকে সম্পৃক্ত করে ভাষাচর্চার বিষয়ে এটিকে কাজে লাগানো যেতো, তাহলে শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হতো, গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরও মুখর থাকতো।

শহীদ সালামের পরিবারের ভাই-বোনদের মধ্যে বেঁচে আছেন তার ভাই আবদুল করিম। গ্রন্থাগারটির নানা অব্যবস্থাপনার কথা জানান জীবনের শেষ প্রান্তে আসা মানুষটিও।  

স্থানীয় সচেতন সমাজ বলছে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মত যথাযথ সম্মান ভাষাশহীদরা পাননি।  

ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দাগনভূঞাঁর বাসিন্দা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলেও ভাষাসৈনিক কিংবা শহীদদের পরিবারকে তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি।  

গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটিকে সরগরম করে পাঠক ও দর্শনার্থী বাড়াতে গ্রন্থাগারের পাশের নদীর পাড়ে একটি পার্ক করার দাবি স্থানীয়দের। এ বিষয়ে অবশ্য উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানালেন স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন। তিনি জানান, বিষয়টি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।

শহীদ আবদুস সালামের গ্রামের সাবেক নাম লক্ষ্মণপুর; এখন পরিচিত ‘ভাষাশহীদ সালাম নগর’ নামে। গ্রামটি ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের পাশে দাগনভূঞা উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার ও ফেনী শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।  

২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগে সম্প্রতি গ্রন্থাগারটিতে গিয়ে দেখা যায়, বই রাখার আলমিরাগুলো ভেঙে পড়ে আছে। টেবিলে, মেঝেতে পড়ে আছে মূল্যবান বইগুলো। ভেঙে গেছে কিছু আসবাবও।  

তবে এসব মেরামতের বিষয়ে প্রকল্প তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে ফেনী জেলা পরিষদ। পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার মজুমদার তপন বলেন, ইতোমধ্যে এটির জন্য একটি বাজেট তৈরি হয়েছে। শীঘ্রই মেরামত কাজ শুরু হবে।

১৯২৫ সালে শহীদ আব্দুস সালাম দাগনভূঁঞা উপজেলার মাতুভূঁঞা ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সালামের পিতা ফজিল মিয়া শিল্প বিভাগে পিয়ন পদে চাকরি করতেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে নীলক্ষেত ব্যারাকের ৩৬বি নং কোয়ার্টারে বসবাস করতেন।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা বিক্ষোভ করলে তাতে পুলিশ গুলি চালায়। সালাম পুলিশের গুলিতে আহত হন। তিনি দেড় মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৫২ সালের ৭ এপ্রিল সালাম মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।  

এডিপির অর্থায়নে ১২ শতক জমিতে সাড়ে তেষট্টি লাখ টাকা ব্যয়ে সালামনগরে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়। শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ২০০৮ সালের ২৬ মে ভাষা শহীদ আবদু সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪
এসএইচডি/এইচএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।