ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

ফিচার

সন্ধ্যা নামলেই যেখানে বসে ‘খিচুড়ির হাট’

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৪
সন্ধ্যা নামলেই যেখানে বসে ‘খিচুড়ির হাট’

মাদারীপুর: বাঙালির লোভনীয় খাবারের তালিকায় প্রথম সারিতেই থাকবে ভুনা খিচুড়ি। আর তাতে যদি যোগ হয় পর্যাপ্ত গরুর মাংস, আচার আর প্রচুর পরিমাণে সালাদ তাহলে তো কথাই নেই, তার নাম হয়ে যাবে ‘অমৃত’।

 

আর গরুর মাংসে ভরপুর ধোঁয়া ওঠা গরম খিচুড়ি পাওয়া যায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট সংলগ্ন বেইলিব্রিজ এলাকায়।

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুধু খিচুড়ি খেতেই অগণিত লোকের সমাগম হয় এখানে। রীতিমতো খিচুড়ি খাওয়ার মেলা বা হাট বসে।

শুধু গরুর মাংস দিয়ে ভুনা খিচুরিই নয়; এখানে রান্না হয় ইলিশ খিচুড়িও। ইলিশ মাছের টুকরো আর শুকনো মরিচ ভাজা দিয়ে পরিবেশন হয় এই খিচুড়ি। যার যার পছন্দমতো খিচুড়ি খেতে দূর-দূরান্ত থেকে চলে আসেন নানা বয়সীরা।  

পদ্মা সেতু হওয়ার আগে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের কাওড়াকান্দি ঘাট ছিল ব্যস্ততম জায়গা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই হাজার হাজার মানুষের পদচারণা ছিল এই এলাকায়। তখনই সেখানে গড়ে উঠে অসংখ্য খাবার হোটেল।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালের নাস্তা, দুপুরের ভাত আর রাতে থাকতো খিচুড়ি। ঢাকায় যাওয়া-আসা হাজার হাজার মানুষের ক্ষুধা মেটাতো কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকার শতাধিক খাবার হোটেল। পদ্মা সেতু তৈরির পর থেকেই বদলে যায় কাওড়াকান্দি ঘাটের সেই চিত্র।  

কাওড়াকান্দি থেকে লঞ্চ-স্পিডবোট ও ফেরিঘাট সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কাঁঠালবাড়ী এলাকায়। কাওড়াকান্দি এলাকার পদ্মা নদীর পাড়ে শুরু হয় নদী শাসন বাঁধ। ঘাট সরিয়ে নেওয়ায় মুহূর্তেই স্থবিরতা নেমে আসে এই এলাকায়। হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসা।  

তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকা হয়ে উঠতে শুরু করে ভ্রমণপিপাসুদের আদর্শ স্থান। কোলাহলমুক্ত, পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করে হাজারো মানুষ। কাওড়াকান্দি ঘাট সংলগ্ন বেইলিব্রিজ সড়কের পাশে গড়ে উঠতে শুরু করে খাবার হোটেল। পুরানো হোটেলগুলোও নতুন করে শুরু হয় এখানে। তবে এসব হোটেল শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে। শুধুমাত্র খিচুড়ি বিক্রি হয় এসব হোটেলে।  

বেইলিব্রিজে মূলত ‘শুক্কুরের খিচুড়ি’ নামের এক দোকানকে ঘিরে পরিচিতি পায় ভুনা খিচুড়ির ব্যবসাটি। স্বাদে অতুলনীয় শুক্কুরের খিচুড়ি হোটেল পরিচিতি এনে দেয় বেইলিব্রিজ এলাকাকেও।  

বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে একাধিক খিচুড়ির হোটেল। সন্ধ্যার পর পদ্মার পাড়ে ভ্রমণ শেষে খিচুড়ি বিলাসে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে এখানে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জমে উঠে খিচুরির হাট! 

স্থানীয়রা জানান, শিবচরের বেইলিব্রিজ এখন খিচুড়ির জন্য বিখ্যাত এলাকা। এখানে ‘শুক্কুরের খিচুড়ি’ এখন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত শুক্কুরের দোকানে ভিড় থাকে ক্রেতাদের। পদ্মা সেতু হওয়ার পর ঢাকা থেকেও অনেকে এখানে আসেন খিচুড়ি খেতে। যারা পদ্মা সেতু এলাকায় ঘুরতে আসেন, তারা রাতে এখানকার খিচুড়ি খেয়ে বাড়ি ফেরেন। শুক্কুরের দোকান ছাড়াও এখন আরো কয়েকটি দোকান গড়ে উঠেছে। সবগুলোতেই প্রতিযোগিতা চলে ভালো খাবারের। গরুর মাংস এবং ইলিশ খিচুড়ি ছাড়াও গরুর তেহারি বিক্রি হয় হোটেলে। বর্তমানে কাওড়াকান্দি কোনো ব্যস্ততম এলাকা না হলেও শুধুমাত্র খিচুড়ির স্বাদ নিতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় জমে উঠে বেইলিব্রিজ এলাকা।

এখানকার দোকানিরা জানান, বর্তমানে গরুর মাংসের ভুনা খিচুড়ি ১২০ টাকা প্রতি প্লেটের দাম। খিচুড়িতে ছোট ছোট পিস করা পর্যাপ্ত মাংস দেওয়া হয়। শসার সঙ্গে সরিষার তেল আর আচার মিক্সড করে সালাদা থাকে প্রচুর পরিমাণে। এছাড়া শুধু আচারও দেওয়া হয়। পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, শসা, টমেটোর মিক্সড সালাদও থাকে। ইলিশ খিচুড়ির তুলনায় মাংসের খিচুড়ির চাহিদা বেশি। দোকান ভেদে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৮/১০ ডেগ বিক্রি হয়। প্রতি ডেগে ১০০ প্লেট খিচুড়ি থাকে।

ভাঙ্গা এলাকা থেকে আসা নবীন নামের এক তরুণ বলেন,‘বেইলিব্রিজে বেশ কয়েকটি খিচুড়ির দোকান আছে। শুক্কুরের খিচুড়ি সবচেয়ে জনপ্রিয়। অন্যদেরটাও ভালো। অনেক লোক এখানে খিচুড়ি খেতে আসেনে। আমিও আসি সুযোগ পেলে।

‘বিসমিল্লাহ বিরিয়ানি হাউস অ্যান্ড শুক্কুরের ভুনা খিচুড়ি’হোটেলের স্বত্বাধিকারী আর.কে শুক্কুর মাহমুদ ফরাজী বলেন, আমার এখানে এই অঞ্চলের বাইরের অনেক লোক আসেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত লোকের সমাগম থাকে দোকানে। ভালো রান্নার স্বাদেই দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন খেতে।

মো.খলিল নামে আরেক হোটেল মালিক বলেন, বেইলিব্রিজ খিচুড়ির জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যায় এখানে মানুষের মিলনমেলা হয়ে যায়। আমরা মাশাআল্লাহ ভালো বিক্রি করি। বেইলিব্রিজ মানেই এখন ভুনা খিচুড়ির হাট!

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু উদরপূর্তির জন্য নয়; খিচুড়ি খাওয়া এখন শুধু শখ হয়ে উঠেছে বেইলিব্রিজ এলাকায়। সন্ধ্যায় সেখানে খিচুড়ি খেতে ভোজনরসিকদের ভিড় লেগে থাকে। সেই ভিড় গভীর রাত অবধি থাকে। শুক্কুর, খলিল বা লতিফসহ অন্যান্য হোটেলে খিচুড়ি খেতে আসন খালির অপেক্ষায় বাইরে দাঁড়িয়েও থাকতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।