ঢাকা, বুধবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নববর্ষের উৎসবের পেছনে আছে হাজার বছরের পথচলার ইতিহাস

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৫
নববর্ষের উৎসবের পেছনে আছে হাজার বছরের পথচলার ইতিহাস

বিশ্বজুড়ে নববর্ষের উদযাপন শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে, আর বাংলা সনের গোড়াপত্তন সে-ও বহু বছর আগে। মুঘল সম্রাট আকবরের হাত ধরে, ১৫৮৪ সালে।

কালের ইতিহাস হিসাব করলে এটি এই সেদিনকার কথা!

নতুন সূর্য ওঠে, পুরনোকে বিদায় জানায় মানুষ। ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন সংখ্যা, আর হৃদয়ে নতুন আশা। সময়ের এই চক্রবৃদ্ধির উদযাপন—নববর্ষ, যা আজকের সৃষ্টি নয়। ইতিহাস বলে, এই উৎসবের গোড়াপত্তন আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে, মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয়দের হাত ধরে।

খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে, সুমেরীয় সভ্যতায় ‘আকিতু উৎসব’ নামে উদযাপিত হতো নববর্ষ। যা শুরু হতো বসন্তের প্রথম চাঁদ দেখে। মূলত, কৃষিকাজের মৌসুম শুরু হওয়াই ছিল তাদের বর্ষগণনার ভিত্তি। ফসল, দেবতা, আর শাসকের পুনর্জন্ম ছিল এই উৎসবের কেন্দ্রে।

পরবর্তীতে প্রাচীন মিশরীয়রা নববর্ষ পালনের জন্য বেছে নেয় নীলনদের বার্ষিক প্লাবনকে। যা তাদের কাছে ছিল উর্বরতার প্রতীক। সেই সময় ছিল জুলাই মাস, যখন আকাশে উদিত হতো সিরিয়াস নক্ষত্র।

রোমানরাও বাদ ছিল না। প্রথমে মার্চে নববর্ষ উদযাপন করলেও, খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে, সম্রাট জুলিয়াস সিজার চালু করেন ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’। এতে ১ জানুয়ারি নির্ধারিত হয় নতুন বছরের শুরু হিসেবে। জানুয়ারি নামটি নেওয়া হয় জানুস নামক দ্বিমুখী রোমান দেবতার নাম থেকে, যিনি নাকি অতীত ও ভবিষ্যৎ উভয়ই দেখতে পেতেন।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে, তার সূচনা হয় মুঘল আমলে। সম্রাট আকবর কৃষিকাজে খাজনা আদায় সহজ করতে হিজরি চন্দ্র বছরের সঙ্গে মিলিয়ে ১৫৮৪ সালে একটি নতুন বাংলা সন প্রবর্তন করেন—যা পরে বাংলা ১১৮৬ সাল হিসেবে কার্যকর হয়। এই বাংলা সন পরে পরিচিত হয় ‘বাংলা নববর্ষ’ নামে, যার প্রথম দিন হলো পয়লা বৈশাখ। এটি সৌরবর্ষভিত্তিক, এবং প্রতি বছর ১৪ বা ১৫ এপ্রিলে পালিত হয়।

বিশ্বে আজও বহু জাতি তাদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নববর্ষ পালন করে। চীন, থাইল্যান্ড, ইরান, ইসরায়েল, এমনকি ইথিওপিয়াও তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ উদযাপন করে থাকে। নববর্ষ শুধুই সময়ের গণ্ডি পার হওয়া নয়, বরং তা স্মরণ করিয়ে দেয় সময়ের চিরচলমানতা আর মানুষের আশাবাদী মনোবৃত্তিকে।

নববর্ষ মূলত সময়ের ধারাবাহিকতা উদযাপনের এক সাংস্কৃতিক প্রতীক। এর মধ্যে রয়েছে কৃষিজীবনের চিহ্ন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাস, ধর্মীয় আচার, এবং মানবজাতির সময়কে ধরার প্রয়াস। আজও পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন বর্ষপঞ্জি অনুসারে নববর্ষ উদযাপন হয়ে থাকে—বৈশাখী, চৈত্র সংক্রান্তি, চীনা নববর্ষ, নওরোজ, রোশ হাশানা, থাই সনক্রান—সবই সময়কে নিয়ে মানুষের এক অদ্ভুত সুন্দর ভাষ্য।

ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে লিখেছেন মো. জুবাইর, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বাংলানিউজটোয়েন্টফোর.কম।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।