বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের খোঁজে বেরিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পাঁচ শিক্ষার্থী! শুনে আশ্চর্য লাগছে? লাগারই কথা।
দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ! এটা আবার খুঁজে বের করার বিষয় হলো নাকি।
প্রথম মূল বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে। একসময় আমরা সবাই জানতাম কেওক্রাডাং সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়।
পরে জানা যায়, তাজিংডং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এখনো অনেক পাঠ্যপুস্তক এবং সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে কেওক্রাডাংকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
পরে ইংরেজ পর্বতারোহী জিনজে ফোলেনের মতে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মৌদুক মুয়াল। এর আরেক নাম সাকা হ্যাপহং। এটি বান্দরবান জেলার বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। ২০০৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে পর্বতারোহী ফোলেন জিপিএস দিয়ে মৌদুক মুয়ালের উচ্চতা রেকর্ড করেন ১০৬৪ মিটার। এই রেকর্ডটি রাশিয়া-পরিচালিত এসআরটিএম উপাত্তের সাথে মিলে যায়। ওই উপাত্তে মৌদুক মুয়ালের উচ্চতা বলা হয় ১০৫২ মিটার। বাংলাদেশেরও একটি পর্বতারোহী দল মৌদুক মুয়ালের উচ্চতা রেকর্ড করেন ১০৬২ মিটার। এসব উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মৌদুক মুয়াল।
আর এসব বির্তকের সমাধান দিতেই বেরিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিার্থী। তারা হলেন এবি এম খায়রুল আলম আরিফ (দলনেতা), মোজাম্মেল হক মিলকি, রায়হান আহমদে রানা, মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, আবদুল্লাহ আল মামুন।
শাবিপ্রবির তরুণ পর্বতারোহী দলটি বর্তমানে বান্দরবানের থানচি উপজেলায় আছেন। ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে তারা রওনা হয়েছেন তাদের অভিযানে। প্রায় দশ দিন তারা বান্দরবানের বিভিন্ন পর্বতে আরোহণ করবেন। জিপিএস দিয়ে এগুলোর উচ্চতা রেকর্ড করবেন। তরুণ এ দলটির সাথে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমসহ ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয়ের সব আধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর বুধবার দুপুরে তারা তাজিংডংয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা রেকর্ড করবেন। সেখান থেকে তারা চলে যাবেন মৌদুক মুয়াল এবং এর শৃঙ্গের উচ্চতা রেকর্ড করবেন। তারপর তারা চলে যাবেন কেওক্রাডাং এবং যথারীতি জিপিএস দিয়ে এর উচ্চতা রেকর্ড করবেন। তারপর রুমা উপজেলা হয়ে বান্দরবান ফিরে আসবেন। এভাবেই শেষ হবে তাদের অভিযান।
পর্বতারোহী দলটি শুধু বিভিন্ন শৃঙ্গের উচ্চতাই মাপবেন না, এ সময় তারা সমাজসেবামূলক কাজও করবেন। তারা সাথে প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন ও ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। ভ্রমণের সময় বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসীদের তা থেকে ওষুধ সরবারহ করবেন। কেননা ওইসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব ওষুধপত্র খুবই মূল্যবান। সেখানকার অধিকাংশ মানুষই বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
এ দলটি ইন্টারনেট থেকে পর্বত আরোহণের তাত্ত্বিক পাঠ নিয়েছেন। এরপর সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন পাহাড়ে আরোহণ করে নিয়েছেন হাতে কলমের শিক্ষা।
দলনেতা এ বি এম খায়রুল আলম আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম জানি না। এটা মনে হলেই আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তাই এ বিতর্কের সমাধান দিতেই আমাদের এই অভিযান। যদি আমরা এবার সফল না হতে পারি মাস ছয়েক পর আরও প্রস্তুতি নিয়ে আবারও বের হব। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ খুঁজে বের করার পরই আমরা শান্ত হব। ’
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১৫০, নভেম্বর ২৩, ২০১০