ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

ফিচার

জাপানিরা গড়ে ৬০০, বাংলাদেশিরা খায় ৫০ডিম!

মফিজুল সাদিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৪
জাপানিরা গড়ে ৬০০, বাংলাদেশিরা খায় ৫০ডিম! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বছরে গড়ে বাংলাদেশের মানুষ ৫০টি ডিম খায়। অপরদিকে একই সময়ে জাপানের মানুষ খায় ৫৫০ থেকে ৬০০টি ডিম।

অবশ্য বাংলাদেশে প্রতিদিনই ডিমের চাহিদা বেড়ে চলেছে। কিন্তু সেই তুলনায় উৎপাদন কম। বর্তমানে প্রতিদিন ২ কোটি ২৫ লাখ ডিম উৎপাদন হচ্ছে। ডিমের চাহিদা বাড়লেও, সে তুলনায় কমছে ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা। বাংলাদেশ ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতি সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য।

উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ কম ডিম খায়। কারণ প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশের মানুষ বছরে কম করে হলেও ৩৬৫টি ডিম খায়। এর মানে উন্নত দেশের মানুষের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ ৩১৫টি ডিম কম খায়।
Eat_Egg_1
অপরদিকে জাপানিদের তুলনায় প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০টি ডিম কম খায় বাংলাদেশিরা।

বাংলাদেশ ডিম ব্যবসায়ী বহুমূখী সমিতির দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে আজ থেকে ১০ বছর আগে প্রতিজন বছরে গড়ে ১৭ টা ডিম খেতো। কিন্তু বর্তমানে খাবারের ভিন্নতায় প্রতিজন ৫০টা ডিম খাচ্ছে। সেই হিসেবে আগামি ৫ বছর পরে প্রতি জনের ডিমের চাহিদা দাঁড়াবে ১০০টি। এর ফলে দৈনিক ডিমের চাহিদা দাঁড়াবে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে খামারিরা ডিম উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছেন।
Eat_Egg_5
বাংলাদেশ ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির উপদেষ্টা মাসুম খান বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ বছরে গড়ে ৫০টা ডিম খাচ্ছে। আমাদের টার্গেট আছে এই সংখ্যা ১০০তে উন্নত করার। কিন্তু সেই তুলনায় ডিমের উৎপাদন অনেক কম। উন্নত দেশের মানুষ বছরে ৩৫০টি ডিম খায়। সেখানে আমরা মাত্র ৫০টি ডিম খাই।

অথচ জাপানে গড়ে প্রতিটি মানুষ ৫৫০ থেকে ৬০০টি ডিম খায়। ’

‘বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা পুরণ করতে হলে খামারিদের নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। তাদের জন্য পোল্ট্রি খাদ্যের দাম কমাতো হবে। ভূট্টা উৎপাদের প্রতি সরকারকে নজর দিতে হবে। ’
Eat_Egg_2
বাংলাদেশ ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশে পোল্ট্রি খাদ্যের জন্য ভূট্টার চাহিদা প্রায় ২১ লাখ টন। অথচ দেশে মাত্র ১২ থেকে ১৪ লাখ টন ভূট্টা উৎপাদিত হয়। যার ফলে পোল্ট্রি খাদ্য আমদানি-নির্ভর হয়ে পড়েছে।  

ডিম উৎপাদন কম হাওয়ার কারণে রমজানের পরে কিছুটা ডিমের দাম বাড়তি। তবে উৎপাদন খরচার তুলনায় বাড়েনি।

রমজানের পরে বাজারে এখন ফার্মের লাল ও সাদা ডিমের হালি ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা দরে  বিক্রি হচ্ছে। দেশী ও হাঁসের ডিম নেই বললেই চলে।   রমজান মাসে এক হালি ফার্মের ডিম ২৬ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রমজানের পর থেকে বর্তমানে একহালি ডিমে ৮ টাকা বেড়ে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
Eat_Egg_7
রমজান মাসে একহালি হাঁসের ডিম ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে হালিপ্রতি হাঁসের ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। তবে নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেশি মুরগির ডিম দেখা যায়নি। খুচরা বাজারে পাকিস্তানি মুরগির ডিম দেশী মুরগি ডিম বলে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বাজারেও ডিমের আমদানি কমেছে। নগরীর অন্যতম ডিমের পাইকারী বাজার তেজগাঁয়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ লাখ ডিম আমদানি হচ্ছে। কয়েক মাস আগে যেখানে ৭০ থেকে ৮৫ লাখ ডিম আমদানি হয়েছিল।

পাইকারী বাজারে এক মাস আগে  ১’শ লাল ডিম ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল বর্তমানে ৭১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Eat_Egg_3
অপরদিকে সাদা ডিমও ৫৫০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে মাসের ব্যবধানে পাইকারিতে ১’শটি ডিম সাদা ডিমে বেড়েছে ১৪০ এবং লাল ডিমে বেড়েছে ১১০ টাকা।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান,  সারাবছর ডিমের দাম কম থাকায় রমজান ও ঈদের পরে অনেক খামারই বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে চাহিদার তুলনায় এখন ডিম উৎপাদন কম।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লা বাংলানিউজকে জানান, ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে ডিমের দাম বাড়তি। কয়েক মাস আগে এই পাইকারী বাজারে ৭০ থেকে ৮৫ লাখ ডিম বেচাকেনা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমদানি কমে এসে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ ডিম বেচাকেনা হচ্ছে। ’

তিনি জানান, অনেক মুরগির খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। ফলে চাহিদার তুলনায় পাইকারি বাজারে ডিম কম আসছে। ’
Eat_Egg_4
নগরীর কাপ্তান বাজারেও ডিমের আমদানি কমে এসেছে। ১০ লাখ ডিমের আমদানি কমে এখন ১৮ থেকে ২২ লাখ ডিম বেচাকেনা হয় এখানে। নগরীতে সাধারণত গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের খামারিদের কাছ থেকে ডিম প্রবেশ করে।

খামারিরা জানান, ডিমের উৎপাদন খরচাও বেড়েছে  এখন প্রতিটি ডিমে উৎপাদন খরচা ৬ টাকা ৮০ পয়সা। হ্যাচারির কাছ থেকে প্রতিটি মুরগির বাচ্চা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুরগির খাবারের দামও বেড়েছে। সেই জন্য অনেক খামারির রয়েছে ব্যাংকঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে ঈদে অনেক খামারি মাংস হিসেবে ডিম পাড়া মুরগি বিক্রি করেছেন। এ কারণে রমজানের পরে ডিমের উৎপাদনও কমে গেছে। কিন্তু চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। যেমন এখন সব দিকে দিয়েই রমজানের তুলনায় ডিমের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ডিমের উৎপাদন হচ্ছে না।
Eat_Egg_6
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিমের উৎপাদন খরচা বাড়ার কারণে অনেক খামারি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ডিমের বাচ্চা কেনা থেকে শুরু করে  ডিম পাড়া পযর্ন্ত ১ হাজার মুরগির জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচা হচ্ছে। মুরগির খাবার, বাচ্চা, ঘর নির্মাণ, ভ্যাকসিন, বিদ্যুৎ বিলের তুলনায় ডিম বিক্রি করে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। এ কারণে অনেক ডিমপাড়া মুরগিও রমজানের ঈদে মাংসের দরে বিক্রি করেছেন অনেক খামারি।

গাজীপুর শ্রীপুর সর্দার পোল্ট্রি ফিড অ্যান্ড মেডিসিন  খামারির মালিক ইলিয়াস কাঞ্চন জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, উৎপাদন খরচার তুলনায় ডিমের দাম পাচ্ছি না। ঋণের বোঝার কারণে ৪০ হাজার মুরগির মধ্যে ২০ হাজার মুরগি বিক্রি করে দিয়েছি। কয়েক বছর ক্ষতিতে ডিম বিক্রি করেছি। সেই হিসেবে ঝুঁকি না নিয়ে রমজান ও ঈদে মাংসের দরে ডিমপাড়া মুরগি বিক্রি করে দিয়েছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।