ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

ফিচার

রিকশার শহর ময়মনসিংহ!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৪
রিকশার শহর ময়মনসিংহ! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ এখন তিন চাকার অযান্ত্রিক পা-চালিত বাহন রিকশার শহরে পরিণত হয়েছে। গোটা শহর দখল করে আছে রিকশা।



নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের শহর জীবন রিকশাবিহীন চিন্তাই করা যায় না। এখানে যানজটের অন্যতম কারণও রিকশা। পরিবেশবান্ধব এ রিকশার কারণেই আবার শহরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।

জানা গেছে, পরিবেশবান্ধব রিকশা প্রথমে ময়মনসিংহে আসে ১৯১৭ সালে। সেই সময়ে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষ রিকশায় চলাচল করতেন। বলা হয়, শতাব্দীপ্রাচীন শহর ময়মনসিংহের মাধ্যমেই বাংলাদেশে রিকশার আগমন ঘটে।

বর্তমানে শহরের পরিধি যেমন বাড়েছে, তেমনি এর লোকসংখ্যা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও তেমনি বেড়েছে। ফলে, রিকশারোহীর সংখ্যাও ক্রমাগত হারে বাড়ছে ভাড়া কম বলে।

ময়মনসিংহবাসীর ধারণা, বর্তমানে বৃহত্তর ময়মনসিংহে রিকশা চলাচল করে প্রায় পাঁচ লাখ। এর মধ্যে শুধু ময়মনসিংহ শহরেই রিকশা চলে প্রায় ৩০ হাজার। কয়েক মাস আগেও ময়মনসিংহ শহরে রিকশার সংখ্যা বেশি থাকলেও ইদানিং ব্যাটারিচালিত রিকশা ‘ইজিবাইক’-এর দাপটে রিকশার চলাচল কিছুটা কমেছে।

তবে গ্রামে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই তারা রিকশা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। ময়মনসিংহের রাস্তায় এখন রিকশার দাপট।  

ময়মনসিংহ পৌরসভা সূত্র জানায়, ১৯১৭ সালে পৌরসভায় লাইসেন্সধারী রিকশার সংখ্যা ছিল দুইশ। বর্তমানে শহরে লাইসেন্সধারী রিকশার সংখ্যা ১২ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। রিকশা গ্যারেজের সংখ্যা ৩৮২টি।

কিন্তু, শহরবাসীর হিসাবে, শহরে প্রায় ৩০ হাজার রিকশা চলাচল করছে। কিন্তু পৌরসভার হিসাবে তা ১২ হাজার।

শহরবাসী ও পৌরসভার এ হিসাবের বিশাল ফারাকের কারণ সম্পর্কে ময়মনসিংহ পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক মোর্শেদুল আলম বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলা থেকে অবৈধ রিকশা শহরে এসে ঢোকে। এতে করে রিকশার সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে যায়।

তবে ময়মনসিংহ শহরে কোনো অবৈধ রিকশা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, যেগুলো চলতো, সেগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

দেশের জেলা সদরগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি রিকশা চলাচলের কারণ সম্পর্কে জানতে কথা হয়, কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে। তাদের একজন আব্দুর রশিদ। বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারইন্দা ইউনিয়নের শাকুয়া গ্রামে।

তিনি জানান, গ্রামে প্রচণ্ড অভাব। কাজ নেই। তাছাড়া গ্রামে রিকশা চালালে দিনে একশ থেকে দেড়শ টাকার বেশি ইনকাম (আয়) করা যায় না। আর ময়মনসিংহ শহরে প্রতিদিন রিকশা চালালে ইনকাম হয় তিনশ থেকে চারশ টাকা।

তিনি বলেন, অভাবী সংসারে খাবারের যোগান দিতে তাই বাধ্য হয়েই শহরে রিকশা চালাতে আসি।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থেকে বিভিন্ন পরিবহন চেপে প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে এক থেকে দেড় হাজার রিকশাচালক শহরে আসেন। একইভাবে প্রতিদিন জেলার ১২টি উপজেলা থেকে রিকশাচালকরা হামলে পড়েন প্রাচীন এ শহরে।

ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে সকালে গিয়ে দেখা যায়, বাস থামার সঙ্গে সঙ্গেই রিকশাওয়ালাদের বিশাল বহর নামছে। এরপর ঝটপট বাস থেকে নেমেই যার যার রিকশার গ্যারেজে চলে যাচ্ছেন।

কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল তাদের বাড়ি ফুলবাড়িয়ায়। তবে গ্রাম ভিন্ন।

রিকশা চালানোর ব্যাপারে তারা একই সুরে বলেন, ভাই, বড় অভাব। কাজ নাই। খাবার নাই। জান বাঁচাতে চলে আসি রিকশা চালাতে।

অভাব যে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, তা দেখেই বোঝা যায়। ফুলবাড়িয়ার জোরবাড়িয়া গ্রামের হাসেম আলী টানা ১০ বছর ধরে ময়মনসিংহ শহরে রিকশা চালাচ্ছেন। গ্রামে কোনো কাজ না পেয়ে প্রতিদিন রিকশা চালানোর জন্য তার শহরে আসা।

তিনি তার নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, চাল-ডালসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় রিকশা ভাড়াও বেড়ে গেছে। ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় প্যাসেঞ্জারের (যাত্রী) সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়।

হাসেম আলী বলেন, অনেক সময় প্যাসেঞ্জার গালমন্দ করেন। কোনো সময় চর-থাপ্পড়ও খেতে হয়। ট্রাফিক পুলিশ মাঝে-মধ্যেই একটু রংসাইডে গাড়ি চালালেই চাকা ফুটো করে দেয়। ব্যাস, ১০ টাকার ডন্ডি (দণ্ড)! 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।