ঢাকা: সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃসাহসী আর কঠিন চাকরি ছিল সেটি! পদের নাম ‘ফুড টেস্টার’। না, খাবারের গুণগত মান পরীক্ষার কাজ নয় এটি।
আর খাবারটি নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের, শুধু এই একটি লাইনই যথেষ্ট সেই চাকরির ভয়াবহতা বোঝানোর জন্যে! যেকোনো সময় মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। আর হয়েছিলও তাই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন হিটলারের প্রুসিয়ান হেড কোয়ার্টারে ১৫ জন নারী ছিলেন খাবার পরীক্ষার জন্য। এর মধ্যে ১৪ জনই পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। সৌভাগ্যক্রমে একজন মাত্র বেঁচে যান সেই নিশ্চিত মৃত্যুর দরজা থেকে। তিনি মার্গো ওক। তার বয়স এখন ৯৬।
সম্প্রতি মার্গো বার্লিনের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর গল্প শুনিয়েছেন।
গল্প শোনার আগে একটু পেছনে তাকানো যাক। হিটলার তখন প্রবল পরাক্রমে একের পর এক দেশ দখল করতে করতে এগিয়ে চলেছেন। পোল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক দখলের পর জয় করেন ফ্রাণ্স। এরপর একে একে দখল করেন যুগোস্লাভিয়া ও গ্রিস। অর্ধেক ইউরোপ তখন হিটলারের দখলে। গোটা ইউরোপ তার পদতলে দেখার নেশায় তিনি তখন উন্মত্ত। ঠিক করলেন তৎকালীন ইউরোপের মূল শক্তি রাশিয়া আক্রমণ করবেন। তার অনেক সেনাপতি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, অনেক হয়েছে, এবার থামা উচিৎ। কিন্তু তিনি তো হিটলার!
সেসময় তার সেনাপতিদের মধ্যে অনেকেই তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। এজন্য হিটলার তার আশেপাশের কাউকে বিশ্বাস করতেন না। আর ব্রিটিশরা যেকোনো উপায়ে তার খাবারে বিষ মেশাতে পারে, এই কাল্পনিক ভূত তো তার মাথায় ছিলই। এজন্যই ফুড টেস্টার। তাদের মধ্যে বেঁচে যাওয়া একমাত্র ব্যক্তিটি হলেন মার্গো।
অনেক হলো হিটলারের কথা। শোনা যাক মার্গোদের সেই লোমহর্ষক গল্প।
‘কিছু মেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই খাবার খাওয়া শুরু করত। কারণ প্রচণ্ড মৃত্যুভয় নিয়ে আমাদের সব খাবার খেতে হতো। খাওয়ার পর আমরা অপেক্ষা করতাম কোনো প্রতিক্রিয়া হয় কিনা। যখন দেখতাম আমরা বেঁচে আছি, তখন সবাই কুকুরের মতো চিৎকার করে কাঁদতাম। ’
কী খেতেন হিটলার, যার জন্য তাদের পার করতে হয়েছে দুর্বিষহ জীবন! জানান, তিনি কখনো মাংস খেতেন না। ভাত, নুডলস, গোলমরিচ, মটর দানা ও ফুলকপি ছিল রোজকার মেন্যু।
মার্গোর এই প্রাণনাশক চাকরিতে যোগ দেওয়াটাও এক দুর্ঘটনা। স্বামীসহ তিনি থাকতেন হিটলারের বাড়ি ‘উলফ’স লিয়ার’ এর সামনেই। ১৯৪১ সালে জোরপূর্বক তার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয় সেনাদলে আর তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় হিটলারের ফুড টেস্টার হিসেবে।
রোজ আমাকে খাবার পরীক্ষার জন্য একটি স্কুল ভবনে নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু আমি কখনও হিটলারকে দেখি নি। তবে তার এক রক্ষী দ্বারা আমি ধর্ষিত হই, বলেন মার্গো।
হিটলার আত্মহত্যা করার পরও তার দুঃস্বপ্ন কাটেনি। ১৯৪৫ সালে রাশিয়ান সেনাদের হাতে ধরা পড়েন মার্গো। অন্য এক বিভীষিকার দিকে মোড় নেয় তার জীবন। ১৪ দিন রাশিয়ান সেনাদের হাতে ধর্ষণের পর ছাড়া পান তিনি।
শোনা যাক তার মুখেই, আমরা বয়স্ক নারীদের মতো সেজে থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তারা টেনে হিঁচড়ে আমাদের জামাকাপড় খুলে নিত। সেটা ছিল পৃথিবীর নরক।
সেই নরকের আগুন এখনও তাকে পোড়ায়। ১৯৪৬ সালে স্বামী ফিরে এলেও, চিরতরে সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। অথচ তার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল একটি ফুটফুটে মেয়ের।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪