অংকে মাথা নেই বলে ভোলানাথরা কতই না মার খেয়েছে মায়েদের হাতে। চোখ রাঙানি তো বটেই, কঞ্চির পিটুনি, কানমলা, চড়-থাপ্পড়ও জুটেছে ম্যালা।
যে সন্তানটির মায়ের গর্ভাবস্থায় হরমোন থাইরোক্সাইনের মাত্রা খুব কম থাকে তাদের অংকের মেধা কম হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে মোটামুটি দ্বিগুন।
গর্ভাশয়েই মায়ের শরীর থেকে হরমোন থাইরোক্সাইন শিশুর শরীরে যায়। মস্তিষ্কের উন্নয়নের জন্য এই হরমোনের ভূমিকা অপরিমেয়। কিন্তু অনেক সন্তানসম্ভবার শরীরে এই হরমোনের পরিমান খুবই কম থাকে।
গবেষক মার্টিজন ফিনকেন ১২০০ শিশুকে গবেষণার আওতায় নিয়ে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। গর্ভাশয়ে থাকা অবস্থা থেকে শুরু করে জন্মগ্রহণ এবং পরে স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর ওপর এই গবেষণা চলে।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের থাইরোক্সাইনের মাত্রা টানা ১২ সপ্তাহ নিয়মিত পরিমাপ করেন এই গবেষক। আর পরে তাদের জন্ম নেওয়া সন্তানদের পাঁচ বছর বয়সে অংক আর ভাষা জ্ঞানের ওপর পরীক্ষা নেন। তাতেই বের হয়ে আসে এই তথ্য।
যে মায়েদের শরীরে থাইরোক্সাইনের মাত্রা কম ছিলো তাদের সন্তানদের ৯০ শতাংশই অংক ক্লাসে পেছনে পড়ে থাকছে।
শিশুর পারিবারিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য এসব কিছু বিবেচনায় নিলেও বিষয়টি সত্যি থেকে যাচ্ছে।
তবে আশ্চর্যজনক হচ্ছে হরমোনের এই মাত্রা শিশুর ভাষাজ্ঞান ও তার ভোকাবুলারির জন্য আবার প্রযোজ্য থাকছে না।
ড. ফিনকেন বললেন, এটা হতে পারে আমরা যে পরিবেশে আছি তার ভিত্তিতেই আমাদের ভাষা-দক্ষতা তৈরি হয়। আর অন্যদিকে অংকের মেধা অনেকাংশেই মস্তিষ্কের গঠনের ওপর নির্ভরশীল।
গবেষক ফিনকেন নিজেও একজন শিশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। আমাস্টারডামের ভিইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত। জানালেন, এই শিশুরা যখন তাদের স্কুল জীবন চালিয়ে যাবে তখনও এই গবেষণার আওতায় থাকবে।
এই সমস্যা প্রাপ্ত বয়স পর্যন্তও থেকে যায় কি-না সেটি দেখার জন্যই এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, বলেন ড. ফিনকেন।
তিনি বলেন, বিষয়টির সবচেয়ে সহজ সমাধানই হচ্ছে গভাবস্থায় মায়ের শরীরের হরমোন পরীক্ষা করে দেখা এবং কম হলে তার শরীরে প্রয়োজনীয় মাত্রায় হরমোন দেওয়া।
এতে হয়তো জন্ম নেবে অংকে মেধাবী শিশুরা। ফলে মায়ের হাতের চুল টানা খেয়ে মাথা ডলতে ডলতে, চোখের পানিতে আর অংক কষতে হবেনা শিশুদের।
বাংলাদেশ সময় ১১২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪