ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

পাশার তালে নৌকা চলে হেইয়ো...

ইসমাইল হোসেন ও গোলাম রসুল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪
পাশার তালে নৌকা চলে হেইয়ো... ছবি: কাশেম হারুন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বেরাইদ, বালু নদীর ঘাট থেকে ফিরে: ‘আম হায়ো (খাও) রসো রঙে/কাঁঠাল হায়ো কুশে (কোষ)/চিনি চম্পা কলা হায়ো মনেরও বিলাসে’- এমন কোরাস আর পাশার তালে তালে ৬৭ জন মাঝি-মাল্লা গাইছেন। সেইসাথে বৈঠা ঠেলে নদীর বুক চিরে ‘হেইয়ো’ বলে এগিয়ে চলেছে ৬৯ হাত লম্বা ছুরির মত তীক্ষ্ণ ‘সারঙ্গ’।

নদীর দু’কূলে হাজার হাজার দর্শকের হাততালি। বৃষ্টির মধ্যেও বিকেলটা যেন অন্যরকম!
 
রাজধানীর অদূরে বাড্ডার বেরাইদ ইউনিয়নের বালু নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। নৌকা বাইচকে ঘিরে বসেছিল নাগরদোলা, ছেলে ভুলানো খেলনা আর মিষ্টান্নের দোকান। জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার উৎসুক জনতা।
 
শনিবার বিকেল তিনটায় বালু নদীর ঘাটে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বেরাইদ ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় এবার ২০টি দল অংশ নেয়। গতবছর শুরু হওয়া প্রতিযোগিতাটি এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হয়।
 
চারটি গ্রুপে বিভিন্ন রঙে রাঙানো সারঙ্গ নৌকাগুলো এগিয়ে চলেছে। চারদিকে তখন উৎসাহ যোগানো হাজারো জনতার তালি। ফকিরখালী পয়েন্ট থেকে বেরাইদ ঘাটের লাল নিশানায় প্রথম নৌকাটি যখন পৌঁছয়, তখন সবার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়।
 
মাসুদ রানা-১, আবার চ্যাম্পিয়ন
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে খিলগাঁও নাসিরাবাদের মাসুদ রানা-১ নামের নৌকাটি। দ্বিতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন হওয়া মাসুদ রানা-১ নৌকার দল পায় একটি ওয়ালটন মোটরসাইকেল।
 
বিজয়ী নৌকার দলনেতা হাবিবুর রহমান পলাশ বাংলানিউজকে জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি নৌকাবাইচে অংশ নেন। গতবারের প্রতিযোগিতার পর এবারও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভালো লাগছে।
 
দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নবাবগঞ্জের ‘খানবাড়ি’। তাদের জন্য পুরস্কার একটি ৩২ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন। আর অংশ নেয়া প্রত্যেক দল একটি করে ২১ ইঞ্চি টেলিভিশন পাবে।
 
নবাবগঞ্জ, মান্ডা, ত্রিমোহনী, নাসিরাবাদ, ভৈরব, গাজীপুর, দক্ষিণখান, মানিকদী, সাঁতারকূল, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া এলাকার মাঝি-মাল্লা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
 
আনন্দে নাচল ছেলেবুড়ো
বালু নদীর দু’ধারে প্রায় তিন কিলোমিটার অব্দি জড়ো হয়েছিলেন জনতা। দর্শনার্থীরা কেউ কেউ এসেছিলেন নৌকা বা স্পিডবোট নিয়ে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই উল্লাসে নেচেছে ছেলেবুড়ো সবাই।
 
রাজধানীর স্কাইলার মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী রাইয়ান রহমান রায়ান এসেছিল বাবা হাসিদুর রহমানের সঙ্গে। নৌকা বাইচ দেখল বাবার ঘাড়ে চড়ে। প্রথমবার নৌকা বাইচ দেখে অনেক আনন্দ হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানায় রায়ান।
 
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সরাইল শাহবাজপুরের ষাটোর্ধ্ব শামসু মিয়া প্রতিযোগিতায় এসেছেন ‘মায়ের দোয়া’ নৌকা নিয়ে।
 
পাকিস্তান আমল থেকে নৌকা বাইচে অংশ নেয়া শামসু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, দু’টি বাস ভাড়া করে এলাকা থেকে প্রায় একশজন এসেছেন তারা। আর বাইচের নৌকাটি আনা হয়েছে ট্রলারে করে। ‘মায়ের দোয়া’র মাঝি ছিল তারই ছেলে আবুল কাশেম।
 
শামসু মিয়া আরো জানান, কোরাসের তালে তালে নদীতে নৌকা এগিয়ে চলে। আনন্দের জন্যই তাদের বাইচে অংশ নেয়া।
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, এক সময় গ্রাম বাংলায় নৌকা বাইচের আয়োজন করা হলেও তা এখন প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এ ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নৌকা বাইচ সত্যিকারের বিনোদন দেয়।
 
বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বেরাইদ ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাম বাংলার এ আয়োজনে যুবসমাজ মাদক থেকে দূরে থাকবে, এজন্যই এই আয়োজন।
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ, বিটিভি’র মহাপরিচালক আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।