কুয়াকাটা থেকে ফিরে: উত্তাল সমুদ্রের বুকে ‘ক্ষণিকের’ ঢেউটি যেমন ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব ‘অনিশ্চিত’ জেনেও লাফিয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি প্রতিটা মুহূর্ত অনিশ্চিত জেনেও সমুদ্রের বুকেই জীবিকা অনুসন্ধান করে বেড়ায় মৎসজীবী মানুষগুলো। সমুদ্রের জীবন সংগ্রাম অনেক বেশি ঝুঁকির, অনেক বেশি কষ্টের, অনেক বেশি দুঃসহনীয় হলেও এ লড়াই চলে আসছে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে বাস করা পরিবারগুলোর পরম্পরায়।
ঠিক যে লড়াই চলে আসছে সাগরকন্যা পটুয়াখালীর আঁচল বেয়ে গড়ে ওঠা দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার অদূরে বসবাস করা মৎস্যজীবী পরিবারগুলোর মধ্যে।
এখানকার জেলেদের অনেকের বাড়ি আছে, বাড়িতে থাকেন মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তান। কিন্তু তিনি প্রিয়জনদের ছেড়ে দিনের পর দিন থাকেন ট্রলারে আর সমুদ্র বুকে। একবার মাছ শিকারের নেশা ধরলে সমুদ্রগভীরে চলে গেলে তিনি আর ফিরে আসবেন কিনা সেটা অনিশ্চয়তায় ঘোরে প্রতিটা সেকেন্ডে-প্রতিটা মুহূর্তে। কিন্তু জীবন গাড়ি চালানোর তাগিদে কেউ তাকে ‘আর যেও না’ বলতে পারেন না।
আবার কেউ ট্রলার নোঙর করার ঘাটে বাড়ি বেঁধে মা বা স্ত্রীকে রেখে দিলেও প্রিয় পুত্র-সন্তানকেই করেন উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করার সঙ্গী।
নিয়মিতই কোনো না কোনো দুঃসংবাদ আসে এ জনপদে। কিন্তু সেটা ভীতির কোনো কারণ হতে পারে না। বরং সমুদ্রবুকে লড়াইয়ের নতুন ‘যান’ তৈরি হতে থাকে।
কেউ হয়তো নিজের প্রিয় বাবা-ভাইকে সমুদ্রগর্ভে চিরতরে হারিয়ে পরিবারকে সামলেছেন, এখন আবার নিজেই উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াইয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ জনপদের জীবন সংগ্রামের কোনো বয়স নেই। কেবল হাঁটতে শিখলেই উঠে পড়তে হবে মাছ ধরা ট্রলারে, নেমে যেতে হবে শিকারের অভিযানে।
দুই নং স্থানীয় সতর্কতা সংকেত হোক, আর ১০ নং মহাবিপদ সংকেত হোক-উপকূল ঘেঁষে জন্ম নেওয়া মানুষগুলোর পুরো জীবনটাই কাটে সংগ্রামে। এখানকার জীবনই ‘সংগ্রামী জীবন’।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৪