ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হাওয়াইয়ের রাস্তায় বিরল ‘নারকেল কাঁকড়া’

আতাউর রহমান রাইহান, রিপোর্টার, ফিচার বিভাগ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৫
হাওয়াইয়ের রাস্তায় বিরল ‘নারকেল কাঁকড়া’

ঢাকা: বিরল ঘটনাই বটে। যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেকের বাসিন্দাদের চোখেমুখেও অবিশ্বাস।

বিশাল এক ‘নারকেল কাঁকড়া’ তাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। নারকেল কাঁকড়া শুনে চোখ কপালে উঠলো তো!

‍আসলে এর ইংরেজি নাম কোকোনাট ক্র্যাব। এটাকেই মজা করে বলা হচ্ছে, নারকেল কাঁকড়া।

যা বলছিলাম, সম্প্রতি প্রায় আড়াই কেজি ওজনের একটি কোকোনাট কাঁকড়াকে হাওয়াইয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, সে-ই যেন রাস্তার রাজা!

তবে দিনদুপুরে সল্টলেকের ব্যস্ত রাস্তায় এ বিপজ্জনক প্রাণীর আবির্ভাব কিভাবে ঘটলো, তা কেউ বলতে পারছেন না। শহরটিতে সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে এ কাঁকড়ার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল।

হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের কৃষি গবেষক রবার্ট টোনান বলেন, এটি সত্যিই একটি বিরল ঘটনা।

তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কোকোনাট কাঁকড়ার উপদ্রব ঘটলে হাওয়াইয়ের স্থানীয় প্রাণী ও গাছগাছালির বিপর্যয় ঘটবে। বিশেষ করে গাছ, লতাপাতা, পশু-পাখি ও নারকেলের।

স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী নারীর ভাষ্য, আমি বাচ্চাদের নিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম, তখন সল্টলেক বুলিভার্ডে কাঁকড়াটিকে দেখতে পাই। সবাই গাড়ি থামিয়ে এর দিকে বড় বড় চোখ করে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আমি ভেবেছিলাম, এটা রিমোট-কন্ট্রোল চালিত কোনো বস্তু।  

এবার একটু কোকোনাট কাঁকড়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। মেরুদণ্ডহীন প্রাণীদের মধ্যে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়। সাড়ে তিন কেজির মতো ওজন আর সর্বোচ্চ তিন ফুট চওড়া হয় এরা। বাঁচতে পারে প্রায় একশ কুড়ি বছর।

প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের দ্বীপে এদের বাস। এরা বাগান তছনছ করে দিতে বেশ ওস্তাদ। বিশেষ করে রাতের বেলায় খাবারের খোঁজে বের হয়ে বাগানে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এজন্য এরা ডাকু বা ডাকাত কাঁকড়া নামেও পরিচিত।

কোকোনাট কাঁকড়া শক্তিশালী নখর দিয়ে মুহূর্তেই নারকেল ভেঙে দুই ভাগ করে ফেলতে পারে। অথচ একই কাজ একজন মানুষের করতে তাকে দা বা কুড়াল ব্যবহার করতে হচ্ছে। নারকেলের শাঁস ছাড়াও বিড়াল, পাখির ছানা, ফল-পাতাও এদের খাবার তালিকায় রয়েছে। এদের ঘ্রাণানুভূতি খুবই প্রখর।

যুক্তরাষ্ট্রের নারী বৈমানিক ও লেখক এমিলিয়া এচার্টের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় এ কাঁকড়াকে। অনেকের ধারণা, পানিতে ডুবে এমিলিয়ার মৃত্যু হয়নি। বরং তিনি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলের নিকুমারোরো দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।  

১৯৪০ সালে ওই দ্বীপে গবেষকরা একটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন কঙ্কাল খুঁজে পান। যেটা এমিলিয়ার শারীরিক বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। ধারণা করা হয়, তিনি যখন ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েন, তখন কোকোনাট কাঁকড়া তার ওপর চড়াও হয়েছিলো।  

বিমানে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী এ বৈমানিক ১৯৩৭ সালের ২ জুলাই প্রশান্ত মহাসাগর হয়ে প্রবালদ্বীপ হাউল্যান্ডে যাওয়ার পথে নিঁখোজ হন।

হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের অমেরুদণ্ডী জলজপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ট্রেনটো ইয়াসুই বলেন, সামুদ্রিক কচ্ছপ থেকে শুরু করে তীরের পাখির ছানা, সবার জন্যই এ প্রাণীটি ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় ছোট শিশু, পোষাপ্রাণীর জীবনের হুমকি হয়ে আসতে পারে এ কাঁকড়া।

শক্তিশালী নখরের বিপজ্জনক এ কাঁকড়া হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে নিষিদ্ধ। প্রাণীটিকে অবৈধভাবে শহরে আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিষিদ্ধ কোনো প্রাণী আনা হলে তিন বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ ডলার জরিমানার শাস্তির বিধান রয়েছে হাওয়াইয়ে। তবে অঙ্গরাজ্যের কৃষি বিভাগের বর্তমানে দায়মুক্তি কর্মসূচি চলছে। কেউ স্বেচ্ছায় নিষিদ্ধ প্রাণী হস্তান্তর করে শাস্তি থেকে রেহাই পেতে পারেন।

মানুষ যে কোনো কাকড়া খেতে পারলেও এ বিপজ্জনক ও সর্বভূক কাঁকড়ার মাংস কখনো খাবার টেবিলে আনা হয় না।

কাঁকড়াটিকে বর্তমানে হনুলুলুর চিড়িয়াখানাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে আপাতত কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে ‌একে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।