ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

স্বপ্নের শাটল ট্রেন

মাহবুব আলম, চবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১১
স্বপ্নের শাটল ট্রেন

‘শাটল ট্রেনকে শুধুমাত্র ট্রেন বললে ভুল হবে। শাটল হলো আমাদের বিনোদনের স্বর্গ আর ভালোবাসার রাজ্য।

যেখানে প্রেম, গল্প, গান, পড়াশোনা একসঙ্গে  চলে। ’ কথাগুলো বলছিলো রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হৃদয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ  শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথিবীতে শুধুমাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন সার্ভিস আছে। আজ থেকে প্রায় ছাব্বিশ বছর পূর্বে চবিতে শাটল ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। সালটা ১৯৮৪।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গর্বের দুটো জিনিসিই আছে, একটি হলো শাটল ট্রেন আর  একটি হলো ঝুপড়ি।
শিক্ষার্থীদের মাঝে মুখরোচক কথা প্রচলিত আছে। সেটি হলো- চবিতে পড়বেন আর শাটলে চড়বেন না তা কি হয়!

শাটল ট্রেনের প্রতিটি বগির রয়েছে আলদা আলাদা নাম। নাম গুলো হলো- দোস্ত ,ককপিট, অলওয়েজ, আড্ডা ,খাইট্টা খা, অক্টোপাস, ৬৯, একাকার, ফাইট ক্লাব, ফাটাফাটি,  সিএফসি, উল্কা, এফিটাফ সহ আরো এরকম বাহারি নাম।                                                                           

চট্টগ্রাম থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে চবি ক্যাম্পাসে পৌছতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা। তবু শাটলের উপর বিরক্ত হয়েছেন এমন লোক পাওয়া ভার।        

‘সারাক্ষন ক্লাস টিউটোরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, আমার মনের মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলার সময় পাই শুধু মাত্র শাটলেই। শাটলে আসি। শাটলে যাই। শাটলের সঙ্গেই আমরা মিশে গেছি। ’ বলছিলেন শাটলে চড়া প্রেমিক যুগল পলাশ ও মুন।
এমন কোনো আলোচনা নেই যে শাটলে হয় না। জাতীয়, আর্ন্তজাতিক সব বিষয়েই তর্ক-বিতর্ক হয় বন্ধুদের সাথে। রাজনীতির খবর

,গণতন্ত্রের খবর, নতুন প্রেমে পড়ার গুজব সহ এমন সব গাল-গপ্প নিয়ে মেতে থাকতে দেখা যায় সব শিক্ষার্থীদের।
অনেকে বন্ধুদের সাথে বসে যায় তাস খেলতে।

আবেগী কবিরা তাদের কবিতার ঝুড়ি ছড়িয়েছেন শাটল ট্রেনের গায়ে। দারুন উপভোগ্য এসব কবিতার পঙক্তিগুলো মিলে যায় জীবন দর্শনের সাথে। আবার কখনও বা হেসে গড়াগড়ি খেতে হয়।   ‘ছ্যাকা খাইছেন অমুখ ভাই ,সুন্দরীদের রেহাই নাই। ’
শাটলের প্রতিটি বগিতেই রয়েছে নিজস্ব শিল্পীগোষ্ঠী। যারা সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখে যাত্রীদের। তাদের কন্ঠে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজী ,প্যারোডিসহ সব ধরনের গান চলতে থাকে। কেউ কেউ ফোক, ভাটিয়ালি, আধুনিক, মাইজভান্ডারীও গায়।

গান আর আড্ডার পাশাপাশি রয়েছে কিছু সমস্যাও। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত জোড়া ট্রেন চলাচল করে নগরী ও ক্যাম্পাসে। যাতায়াত করে প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী। ইতিহাস বিভাগের নাজিয়া ফেরদৌসী বলেন, ‘কি বলব ভাই! বর্ষায় ভিজে যাওয়া। জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ,বগি লাইনচ্যুত হবার আশংকা আর ক্যাম্পাসে পৌছতে ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়া এমন ভয় তো থাকেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর নিজের অজান্তেই মনের সঙ্গে মিশে গেছে শাটল যা তারা নিজেরাই জানে না। ভাবতে ভাবতে কখন যে ট্রেন চলে আসে চবি জংশনে তা টেরই পাওয়া যায় না। আর অনেক সময় শিক্ষা জীবনের মহেন্দ্রক্ষণে এসে শাটলকে ছেড়ে যেতে অনেকের চোখে পানি এসে যায়। অনেকে আবার গেয়ে উঠে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলি হায়,যায় ...হারিয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫, জুন ৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।