ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হাওরের ভরসা ভাড়ায় মোটরসাইকেল

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
হাওরের ভরসা ভাড়ায় মোটরসাইকেল ছবি: শাকিল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মোহনগঞ্জ-মদনে (নেত্রকোনা) হাওর ঘুরে: ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে/ পূবালী বাতাসে/ বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি/ আমার নি কেউ আসে রে...। ’ হাওর অঞ্চলের বর্ষার চিত্র উকিল মুন্সীর কালজয়ী গানেই পাওয়‍া যায়।

তবে শুষ্ক মৌসুমের চিত্রটা ভিন্ন।

বর্ষার থৈ থৈ পানিতে নৌকায় ভেসে ভেসে হাওর পাড়ি দিলেও শীত কিংবা বসন্তে চলতে হয় ধূলিমাখা মেঠো। দূরপথের তখন ভরসা হয়ে দাঁড়ায় দ্বিচক্র যান মোটরসাইকেল।

কখনও জেলার গণ্ডি পেরিয়ে এ ‘যানে’ই স্থানীয়রা ছুটছেন অন্য জেলায়। এতে কারও কোনো আপত্তি নেই বরং সবাই খুশি। খুশি পরিবার-পরিজনও। কারণ এটা তাদের পেশা। যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে ছুটে যাওয়া এই ‘ভাড়া’র মোটরসাইকেল তাদের জীবিকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দূর-দূরান্তে যেতে এসব রাস্তায় চলাচলের একমাত্র মাধ্যম মোটরসাইকেল। আগে শেলো ইঞ্জিন চালিত টমটম থাকলেও এখন মোটরসাইকেলই প্রধান যান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অনেক বেকার তরুণেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রশংসাযোগ্য।

সম্প্রতি নেত্রকোনার ভাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত মোহনগঞ্জ-মদন ঘুরে স্থানীয়দের কথার সত্যতা পাওয়া গেল।

মোহনগঞ্জ পৌরশহরের টেঙ্গাপাড়া মোড়, যা এখন মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড হিসেবেই বেশি পরিচিত। এখান থেকেই হাওরের বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াত করেন নারী-পুরুষ।

খালিয়াজুরীর জয়খড়া হাওর বাজারের মনোহরী দোকানি আবদুল আলী বলেন, কয়দিন ধইরা আমরার এইনও মটর ‍সাইকেল জনপ্রিয় অইছে। ভাইস্যা (বর্ষা) মাসে হানি (পানি) অওয়ায় পথ-ঘাটে অন্য কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলে না, তহন এইডাই চলে।

বছরখানেক আগেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া তরুণ জসিম উদ্দিন বেকার ছিলেন। বাবার পকেট থেকেই ‘চুরি’ করে হাতখরচার পয়সা নিতে তিনি। কিন্তু এখন মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজে তো চলেনই বাবাকেও নিয়মিত টাকা দেন সদ্য ২৫ পেরুনো জসিম।

শুধু জসিমই নয়, শুধু মোটরসাইকেল চালিয়ে উপার্জিত অর্থ ‘‘বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো’ জসিমদের স্ববলম্বী করে তুলেছে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রথম প্রথম ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতে লজ্জা করতো। কিন্তু এখন তা আপনিতেই কেটে গেছে।

এভাবে আরও দু’টি মোটর সাইকেল কিনেছেন জসিম। ভাড়া নিয়ে অন্যরা তার দু’টি বাইক চালায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মদনে জাহাঙ্গীরপুর সেন্টার মোড় আর মোহনগঞ্জ টেঙ্গাপাড়া মোড়ে মোটরসাইকেলের নির্ধারিত স্ট্যান্ড রয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনা সদরের রাজুর বাজার, খাদ্য গুদাম মোড়, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, খালিয়াজুরীর স্ট্যান্ডে যাত্রী সমাগম বেশি।

তবে মোবাইলে কল করলেও বাড়িতে ছুটে আসেন মোটরসাইকেল চালকরা। দিনরাত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে ছুটে চলেন তারা।

তবে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ে বেশ ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন মোহনগঞ্জের ছেছড়াখালী গ্রামের জালাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমি নিজের মোটরসাইকেলেই যাতায়াত করি। কিন্তু ইদানীং সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। রাস্তায় মাঝেমধ্যেই লোকজন হাত তুলে মোটরসাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞেস করে-এই, ভাড়া যাবে?’

‘এ নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে, তাই মোটরসাইকেল চালকদের নির্দিষ্ট পোশাক থাকা প্রয়োজন,’ জালালের সঙ্গে যোগ করেন স্থানীয় এনজিও কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, মোটরসাইকেল চালিয়ে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাইকেরই রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। নতুন চালকরা দুর্ঘটনাতেও পড়েন।

‘তাই বিভিন্ন সময় যথাযথভাবে কাগজপত্র না পাওয়া গেলে জরিমানাও করা হয়েছে। ’

দূর-দূরান্তে চলার সময় যাতায়াতের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল আরোহীর প্রত্যেককে হেলমেট ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।