ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

সন্তানের সুষম টিফিন

আতিফ আতাউর, ফিচার রাইটার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
সন্তানের সুষম টিফিন

নতুন বছরে এবারই প্রথম স্কুলে যাচ্ছে আপনার সন্তান? স্কুলের ইউনিফর্ম, জুতো, ব্যাগ, পানির বোতল সব কিছুরই আয়োজন করা হয়েছে তার জন্য। কিন্তু টিফিন নিয়েই হয়ত বা খানিকটা দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন অনেক মা।

বিশেষ করে নতুন মায়েদের—বাচ্চার টিফিন নিয়ে চিন্তার শেষ থাকে না। বাড়ন্ত বয়সে স্কুলে কী খেলে সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় থাকবে এ নিয়ে মায়েদের চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ সমস্যায় আপনার করণীয় কী সেটাই জানিয়েছেন গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগম

স্কুল টিফিন কী?
স্কুল টিফিন হচ্ছে স্কুলে অবস্থানকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টি চাহিদা মেটানো এবং স্বাস্থ্যের মান উন্নয়নের জন্য যে টিফিনের ব্যবস্থ্যা করা হয়। সাধারণত স্কুলে পাঠদানকালে মধ্যবর্তী বিরতির সময় এ খাবার পরিবেশিত হয়।

স্কুল টিফিনের উদ্দেশ্য
* শিশুর প্রাত্যহিক আহার্যের সাথে অধিক পুষ্টি সম্পন্ন নতুন খাবারের সমন্বয় সাধন।
* স্বাভাবিক বর্ধনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরবরাহের মাধ্যমে শিশুর বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ।
* প্রাত্যহিক কাজের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে উৎসাহিত করা।

এ বয়সের শিশুদের দৈনিক ১২শ’ থেকে ১৫শ’ কিলোক্যালরি পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট ৬০%, প্রোটিন ২০% এবং ফ্যাট ২০% দেওয়া প্রয়োজন যার মোট ক্যালরির বেশিরভাগ অংশ কার্বোহাইড্র্রেট এবং প্রোটিন থেকে নেওয়া ভালো। বাকি অংশ ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেলস থেকে পূরণ করতে হবে।

কার্বোহাইড্রেট থেকে শিশু শক্তি পাবে। প্রোটিন থেকে বর্ধনের উপাদান, ফ্যাট থেকেও শক্তি পাবে। ভিটামিন আর মিনারেলস থেকে পাবে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা যা শিশুকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে।

বর্তমান যুগে সকল পরিবারে একটি বা দুটি সন্তান থাকে। মা বাবাসহ সংসারের সবাই তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাদের প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়—এই অভিযোগে সন্তানেরা সকল বিষয়ে সকল কাজে এমনকি স্কুল টিফিন নিয়েও মা বাবাদের বিপাকে ফেলে দেয়। তবে বর্তমান বিশ্বে শিক্ষিত মা বাবারা তাদের সন্তানদের জন্য নানা ধরনের ভাবনায় চিন্তিত থাকেন। কী করে শিশু সুস্থ্য থাকবে, শিশুর সঠিক বিকাশ বা বর্ধন ঠিকমত হচ্ছে কিনা, বয়স অনুযায়ী শিশুর সকল পরিপক্কতা এসেছে কিনা ইত্যাদি।

আগের যুগের মা বাবাদের এসব ভাবার খুব একটা ফুসরত ছিল না। এতগুলো সন্তান, কাকে নিয়ে ভাববে? তবে বর্তমানে সচেতন মা বাবারা তাদের শিশুদের সকল বিষয় নিয়ে ভাবেন। যেহেতু শিশুদের বর্ধনের একটি চরম সময় হচ্ছে প্রাক স্কুলগামী এবং স্কুলগামী সময় তাই বাবা মা’র ভাবনা কী করে এসময় শিশুকে সঠিক পুষ্টিকর খাবার দিয়ে শিশুর বেড়ে ওঠা ঠিক রাখা যায়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা মনে করেন বাচ্চাদের খাদ্য যদি সুষম হয় এবং যা তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ যদি ঠিক থাকে তবেই একটি শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার সঠিক বা আদর্শ সময় হচ্ছে ২ থেকে ৬ বছর। এসময়টাতে শিশু খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। ব্রেন ডেভেলপমেন্টও সবচেয়ে বেশি হয় এ সময়ে।

বর্তমান মা বাবারা কর্ম ব্যস্ততার জন্য তাদের ছোট্ট সোনামনিকে আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে স্কুলে পাঠিয়ে দেন। একক পরিবারে শিশুটির দেখাশোনা করার কেউ থাকে না বিধায় কর্মজীবী মা বাবা শিশুকে স্কুলে দিয়েই নিরাপদ বোধ করেন। বেড়ে ওঠার চরম এই সময়টিতে বেশিরভাগ শিশুকে স্কুলে সময় কাটাতে হয়। তাই শিশুর স্কুল টিফিন এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে সকল পুষ্টি উপাদন সঠিক পরিমাণে থাকে। টিফিন যাতে মৌলিক খাদ্যের সমন্বয়ে হয়। সবচেয়ে বড় কথা সব মিলিয়ে টিফিন যেন সুষম বা ব্যালান্স হয়। সেদিকে প্রতিটি মা বাবার খেয়াল রাখতে হবে।

তবে টিফিন শুধু ব্যালান্স ডায়েড হলেই হবে না। এতে যাতে বৈচিত্র থাকে, আকষর্ণীয় হয়, শিশুর যাতে পছন্দ হয়, শিশুর গ্রহণ-উপযোগী হয় সেদিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। একই টিফিন শিশুরা প্রতিদিন পছন্দ করে না। তাই পুষ্টি সম্পন্ন মজার মজার খাবার শিশুর সামনে উপস্থাপন করতে হবে। স্কুলে শিশুরা সহপাঠীদের নিয়ে খেতে ভালোবাসে তাই শিশুর টিফিনের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে করে টিফিনের প্রতি শিশুর আগ্রহ বেড়ে উঠবে। সারাদিনের অর্ধেকটা সময় শিশুদের কাটাতে হয় স্কুলে। তাই তাদের খাবার চাহিদা পূরণে পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। পুষ্টিহীন শিশু যেহেতু শারীরিকভাবে দুর্বল হয় সেহেতু তাদের মেধাও পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে না। তারা জাতির ভবিষ্যত না হয়ে জাতির বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

শিশুর মোট ক্যালরির এক তৃতীয়াংশ চাহিদা স্কুল টিফিনের মাধ্যমে পূরণ করা প্রয়োজন। তাই অল্প সময়ে খাওয়া শেষ হবার মতো সুষম খাদ্য টিফিনে দেওয়া উচিত।

কয়েকটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও আকষর্ণীয় স্কুল টিফিনের নাম
অবশ্যই টিফিনগুলো ঘরে তৈরি হতে হবে। এবং খাদ্য উপাদানের সব এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। যেমন ফিসফিংগার, মাছের চপ, নুডুলস চপ, মাংসের কাবাব, চিকেন ফ্রাই, সবজি নুডুলস, টোনা মাছের কাটলেট, সবজি পাকড়াও ইত্যাদি। ফিস বা মিট, সালাদ বার্গার, সবজি, মাছ, ডিম, মাংস একেকদিন একেকটি দিয়ে তৈরি হতে হবে। স্যান্ডউইচ, চিকেন নাগেট ঘরে তৈরি হতে হবে। চিকেন ললিপপ, সবজি মাংসের শাশলিক মিট, চিকেন এবং বিফ বল। সবজি চিকেন রোল, ব্রেড টোস্ট, বিভিন্ন ধাপের সমুচা, পুর ভরা সবজি ও বিভিন্ন ধরনের ফল একেকদিন একেকটি দিলে শিশু আগ্রহী হয়ে তার টিফিন খাবে। এতে বেড়ে ওঠার সকল উপাদন সঠিক পরিমাণে পাবে এবং শিশু সুস্থ্যভাবে বেড়ে উঠবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
টিকে/

** বাচ্চা টিফিন খেতে না চাইলে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।