ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বিলুপ্তির পথে ঢেঁকিনির্ভর পৌষ-সংক্রান্তি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
বিলুপ্তির পথে ঢেঁকিনির্ভর পৌষ-সংক্রান্তি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ঢেঁকিছাঁটা চালের আটার পিঠা, রুটি ছাড়া ঠিক জমে না পৌষ-সংক্রান্তি। কিন্তু ইদানীং ঢেঁকির দেখা পাওয়াই দুষ্কর, আর ঢেঁকিছাঁটা চাল, আটা তো রীতিমতো সোনার হরিণ! শহুরে হাওয়া আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় গ্রাম প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকি।

এখন গ্রামের দশটি বাড়ি ঘুরেও একটি ঢেঁকির সন্ধান পাওয়া বড় কঠিন।

ঢেঁকির পরিবর্তে এখন যন্ত্রই ব্যবহৃত হচ্ছে বেশি। এক সময় সম্পূর্ণ ঢেঁকিনির্ভর ছিল পৌষ-সংক্রান্তি। আবহমান গ্রাম-বাংলার লোকজ কৃষ্টি আর সংস্কৃতির অন্যতম আত্মপরিচয়দানকারী বস্তু ছিল এটি। ‘ঢুমম...’ ‘ঢুমম...’ শব্দ আর জানান দেয় না পৌষসংক্রান্তির পিঠা তৈরির বারতা।

পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের পথে পথে হেঁটে ঢেঁকিবাড়ি খুঁজে পেতে খানিকটা বেগ পেতে হলো। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা শংকর কান্তি দাশের সহযোগিতায় এ কাজটি অনেকটাই সহজ হয়ে উঠলো পরে।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের গ্রাম দক্ষিণ উত্তরসূর। এই গ্রামের ঈরেশ সূত্রধরের বাড়িতে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে গিয়ে পাওয়া গেল ঢেঁকির ব্যস্ততা। ঢেঁকি তখন অপন ছন্দে নৃত্যরত!

গ্রামের এমন একটি দৃশ্য বহুদিন দেখা হয়নি! মনে পড়ে গেলো সেই শৈশবের কথা!

দু’জন নারী ঢেঁকির পাশে সমান দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছেন। দু’জনেই দু’পায়ের চাপে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট তাল, লয়ে। বিপরীত দিকে অপর একজন নারী ঢেঁকির মাথায় বসে চালগুলোকে বারবার নাড়িয়ে দিচ্ছেন।      

সুমিত্রা সূত্রধর বলেন, সংক্রান্তির পিঠা তৈরির জন্য আমরা ঢেঁকিতে আতপ চাল কুটাই। প্রথমে তিন/চার ঘণ্টা চাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর চালনিতে রাখা হয় পানি চাল থেকে ঝরানোর জন্য। পানি পড়ে গেলে তারপর ঢেঁকিতে কুটানো হয়।

চাল কুটানোর সময়সীমা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢেঁকিতে তিন কেজি চাল কুটাতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লাগে।

ঈরেশ সূত্রধর ঢেকির বর্ণনা তুলে বলেন, আমাদের বাড়িতে ঢেঁকিতে ধানও কুটাই। সব ঢেঁকি আবার এক নয়। আমাদেরটা বিশেষ ধরনের। এখানে ধানও কোটা যায়। সাধারণ ঢেঁকি থেকে ধান কোটার ঢেঁকি আলাদা থাকে। এর মাথায় লোহার একটা রিং লাগনো রয়েছে।

একই পরিবারের প্রণতি সূত্রধর বলেন, ঢেঁকিতে কুটানো আতপ চাল দিয়ে সাদা রঙের পাটিসাপ্টা পিঠা তৈরি করা হয়। এই পিঠা খেতে খুব সুস্বাদু। আতপ চাল ছাড়াও ব্রি-ধান ঊনপঞ্চাশ এবং বিরুন চাল (বিন্নি ধানের চাল) বকফুল, সুজির পিঠাও তৈরি করা হয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শংকর কান্তি দাশ বলেন, আমাদের গ্রামবাংলা থেকে ঢেঁকি আজ বিলুপ্তি পথে। তবে এ অঞ্চলের কয়েকটি বাড়িতে এখনো প্রাচীন কালের এ নিদর্শনটি বেঁচে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪১ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।