ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

অষ্টগ্রাম হাওরে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার চৌদ্দমাদল মেলা

টিটু দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
অষ্টগ্রাম হাওরে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার চৌদ্দমাদল মেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোরগঞ্জ: হাওর এলাকার অন্যতম প্রধান চিত্ত-বিনোদনের উপলক্ষ্য ‘চৌদ্দমাদল মেলা’ জমে উঠেছে।

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে বিনোদনের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এই মেলাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেছে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাদের মধ্যে।



অষ্টগ্রামের বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের খেলার মাঠে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত।

অষ্টগ্রামের হাওরের ‍নিজস্ব ঐহিত্য হয়ে ওঠা চৌদ্দমাদল মেলার শুরুর ইতিহাসও বেশ চমকপ্রদ। আয়োজক সূত্র জানায়, বাংলা ১৩৩৭ সালের (ইংরেজি ১৯৩১) মাঝামাঝি সময়ে বাঙ্গালপাড়ার বাসিন্দা রাধাকান্ত দেবনাথ, নদীয় চাঁদ রায়, রাইচরণ রায় ও প্রকাশ চন্দ্র সাহা ভারতে তীর্থভ্রমণে যান। তারা নবদ্বীপে গিয়ে দেখে চৌদ্দমাদল নামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হন। দেশে ফিরে এসে তারা প্রতি বছরের মাঘ মাসের ৪ তারিখ থেকে নবদ্বীপের নিয়মানুসারে বাঙ্গালপাড়ায় চৌদ্দমাদল পূজা ও কীর্তনের প্রচলন করেন। একপর্যায়ে বাঙ্গালপাড়ায় পূজা ‍উদযাপনের জন্য ‘বাঙ্গালপাড়া চৌদ্দমাদল নাটমন্দির’ তৈরি করা হয়। সেইথেকে শুরু হওয়া চৌদ্দমাদল পূজার সঙ্গে কালক্রমে চৌদ্দমাদল মেলার প্রচলন হয়।

স্থানীয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চৌদ্দমাদল পূজায় কীর্তনের জন্য ১৪টি খোল ও বাদ্যযন্ত্র এবং ১৪ জোড়া করতাল প্রয়োজন। ফলে এটা চৌদ্দমাদল নাম ধারণ করেছে বলে মত তাদের।

মেলার আয়োজক সূত্র জানায়, এবার খোলা মাঠে আয়োজিত এ মেলায় ছোট ছোট ১২০-১৫০টির মতো অস্থায়ী দোকান বসেছে। এসব দোকানে প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র থেকে শুরু করে নানা ধরণের পণ্যের পসরা বসেছে। মেলায় আসা শিশুদের প্রধান আকর্ষণ মাটির পুতুল, পালকি, ঘোড়া, গাড়ি, বল, বেলুন, বাঁশি, ইলেকট্রিক গাড়ি, খেলনা পিস্তল, হেলিকপ্টার, ট্রেন, টেলিফোন ও খেলনা মোবাইল প্রভৃতি।

মেলায় দলবেঁধে আসা গায়ের বধু ও কিশোরীরা কিনে নিচ্ছেন সারা বছর ব্যবহারের মতো প্রসাধনী ও পছন্দের জিনিসটি। তাদের আগ্রহের চূড়ায় রয়েছে আলতা, পাউডার, কাঁচের চুড়ি, ক্রিম, মুখের ক্রিম, ফেইস ওয়াস, লিপিস্টিক, খোঁপা, ক্লিপ, কানের দুল, সাবান, বডি স্প্রে প্রভৃতি।

মেলায় পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকম গৃহস্থালি পণ্যও। ফলে কৃষকরা কিনে নিচ্ছেন দাঁ, বটি, কাস্তে, কুড়ালসহ নানা জিনিস।

মেলায় আরো রয়েছে কাঠের তৈরি খাট, চৌকি, আলনা, চেয়ার, টেবিল, সোফাসেট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিলসহ নানা আসবাব। এর মূল্যও অনেকটা সহনীয়।

হাওরের চিত্ত-বিনোদনের প্রধান এ উপলক্ষে বাদ পড়েনি  মণ্ডা-মিঠাই। পসরা বসেছে রসগোল্লা, দই, নিমকি, চমচম, জিলাপিসহ হরেক পদের মিষ্টান্নের।

সেইসঙ্গে বাহ্যিক বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপের ব্যবস্থা।

ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুর ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাঙ্গালপাড়ার বাসিন্দা মাহাবুর রহমান এসেছেন এ মেলায়।

তিনি বললেন, এ মেলা আমাদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তৈরি করে দিয়েছে। যার জন্য প্রতি বছর অষ্টগ্রামের বাসিন্দারা শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে এ মেলায় ছুটে আসেন।

মেলায় ভৈরব উপজেলা থেকে আসা কসমেটিকস ব্যবসায়ী মো. হোসেন মিয়া বলেন, আমি ১২ বছর ধরে এ মেলায়  কসমেটিকস নিয়ে আসি। মেলায় অনেক ভালো বেচা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার জয় মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক দীপক কুমার ঘোষ মিষ্টির দোকান দিয়েছেন মেলায়। তিনি লেন, সারাবছর এ মেলার অপেক্ষায় থাকি। ভালো ব্যবসার জন্য মেলায় ৩-৪ দিন আগেই চলে আসি।

জানতে চাইলে মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, হাওরে বিনোদনের কোনো  ব্যবস্থা নেই। তাই এ চৌদ্দমাদল মেলা আমাদের প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।