ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

কৃষকপর্যায়ে অবমুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় নতুন সবজি টমাটিলো

মহিবুল আলম সবুজ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
কৃষকপর্যায়ে অবমুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় নতুন সবজি টমাটিলো ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশের নতুন সবজি হিসেবে টমেটোর মতো দেখতে টমাটিলো এবার বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে। নতুন জাত হিসেবে পুষ্টিসমৃদ্ধ সবুজ ও বেগুনি টমাটিলো চলতি বছরেই কৃষকপর্যায়ে অবমুক্ত হওয়ার দারপ্রান্তে।

কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদের সুযোগ ও ফলন বেশি পাওয়ায় সবজিটি নিয়ে আশান্বিত গবেষক-কৃষক সবাই।
 
কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করতে নতুন এ সবজিটির মাল্টি লোকেশনাল ইল্ড ট্রায়াল (জাত অবমুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া) সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়া, ঝিনাইদহের দত্তনগর, দিনাজপুরের চেহেল গাজী মাজার ও পটুয়াখালীর দশমিনাতে টমাটিলো চাষ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাহিদ জেবার তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (সাউরেস) প্রকল্পের আওতায় চলছে এ গবেষণা কার্যক্রম।

টমাটিলো আমাদের দেশীয় টমেটোর সোলানেসি গোত্রের একটি সবজি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Physalis  ixocarpa।

টমাটিলোর উৎপত্তি মেক্সিকোতে হলেও আমাদের দেশীয় জলবায়ু টমাটিলোর অনুকূলে থাকায় গড় উৎপাদন দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এদিকে প্রচলিত টমেটো চাষে প্রয়োজন হয় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। কিন্তু টমাটিলো চাষে কীটনাশক ব্যবহার না করেই ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬০-৭০ টন।

বর্তমানে ড. নাহিদ জেবা জেনেটিক্স অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং গবেষণাগারে টমাটিলোর বিভিন্ন পুষ্টি গুণাগুণ ও এন্টি-অক্সিন্ডেন্টের উপাদান নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন।

গবেষক নাহিদ জেবা বাংলানিউজকে বলেন, কীটনাশকেরে ব্যবহার ছাড়াই টমাটিলো উৎপাদন করায় একদিকে এ সবজির চাষ প্রক্রিয়া হয়ে উঠছে পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদন খরচও কমেছে বহু গুণে।

শুধু জমি চাষের সময় গোবর ও চারা গাছে ব্যাসাল ডোস হিসেবে সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়েছে বলেও জানান তিনি। টমাটিলোর গায়ে বৃতির বড় আবরণ থাকায় পোকামাকড় ও টমেটোর মতো পাতা মোড়ানো রোগ, পাতার মোজাইক ভাইরাস রোগ থেকে মুক্ত। প্রতি গাছে চার থেকে পাঁচ কেজি ফলন হওয়ায় গাছকে সোজাভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় খুঁটির। টমাটিলো দেশীয় টমেটোর মতো একগুচ্ছ না হয়ে আলাদা আলাদাভাবে জন্মে। এর উৎপাদন খরচ কম ও দেশীয় টমেটোর চেয়ে আকারে বড় হওয়ায় কৃষক লাভবান হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

গবেষক নাহিদ জেবা বলেন, টমাটিলোতে ফ্ল্যাভিনয়েড থাকায় এটি ফুসফুস ও মুখ গহ্বরের ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এছাড়া এতে পেক্টিনের পরিমাণ বেশি থাকায় এন্টি-কনস্টিপেশন, এন্টি-ডায়রিয়া উপাদান হিসেবে কাজ করে।

নতুন সবজি টমাটিলোর পুষ্টিগুণ ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, প্রোটিন, ক্যানসার প্রতিরোধসহ ভিটামিন সি’র অভাব পূরণ করতে সক্ষম বলে দাবি নাহিদ জেবার।

এ শস্যের উপকারি দিক সম্পর্কে নাহিদ জেবা বলেন, দেশীয় টমেটোর আদলে টমাটিলো চাষ করা হলেও দেশি টমেটোর চেয়ে এক মাস আগেই গাছে ফুল ধরে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা সম্ভব।

নতুন এ সবজিটি কাঁচা অবস্থায় সুস্বাদু ফলের মতো খাওয়া যায়। এছাড়া সালাদ, সস ও তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যাবে টমাটিলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এএ

** সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর সবজি টমাটিলো

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।