ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

এক বাগানে কলা-পেঁপে, স্বাবলম্বী মুকুল মিয়া

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
এক বাগানে কলা-পেঁপে, স্বাবলম্বী মুকুল মিয়া ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): পুকুর পাড়ে কলাগাছের মন জুড়ানো সারি। আকারে মাঝারি থেকে বড়।

একটি দু’টি গাছ নয়, শত শত। মৃদু বসন্ত বাতাসে কলাপাতাগুলো দুলছে হালকা। এ যেন আকৃষ্ট করা ভিন্ন সৌন্দর্য! 
 
তবে শুধুই কলা নয়; দুলছে  পেঁপে গাছও! কলা গাছে ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে পেঁপেও।
 
পুকুরপাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কলা আর পেঁপে গাছের এমন সারি দেখে জুড়িয়ে গেলো মন। যেন ওরা নীরবে স্বাগত জানালো! ফলদবৃক্ষের এরূপ সার্থকতায় গভীরভাবে ভেতরে ভেতরে উচ্ছ্বাসিত তখন।  

এটি শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বিস্তীর্ণ প্রান্তর। চারদিক উন্মুক্ত। তারই একধারে মুকুর মিয়ার নিজ হাতে গড়া কলা আর পেঁপে বাগান। তাতে রয়েছে মাছের ঘের।
 
সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে মুকুল মিয়ার খামারে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরে মির্জাপুর ইউনিয়নের বৌলাশির নামক স্থান। গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্ত। তারপরই শুরু হয়েছে প্রসিদ্ধ হাইল হাওরের।
  
বাংলানিউজকে মুকুল মিয়া বলেন, চাম্পা ও শবরি- এ দুই প্রকারের কলা এখানে রয়েছে। গাছের সংখ্যা প্রায় তিনশ’। কলাগাছের ফাঁকে ফাঁকে আমি পেঁপে গাছও লাগিয়েছি। তাতে দু’টো ফসলই আসছে।

কলা চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় চাম্পা কলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তাই চাহিদার কথা মাথায় রেখে বেশি পরিমাণে চাম্পা গাছ লাগাই।
 
কথা বলতে বলতে পেছনের দিনগুলোর রেশ চলে আসে। তিনি বলেন, আগে আমি রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ছিলাম। কৃষির উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। কিন্তু জায়গা-জমির অভাবে কিছু করতে পারছিলাম না। এক বছর হলো শ্রীমঙ্গলে এসেছি।

আমার এক আত্মীয় আঠারো কেয়ার জায়গা আমাকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার দু’জন সহযোগী রয়েছে। তাদের নিয়েই কাজগুলো নিত্য পরিচালনা করি। কলা-পেঁপে ছাড়াও আম, লিচু, লাউ, ধনেপাতা, মিশ্র সবজিসহ মাছ চাষ করছি- এমনই জানান মুকুল মিয়া।   
 
পরিচর্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, গাছের গোঁড়ায় গোবর সার, টিএসপি ও ইউরিয়া সার দেই। কলাগাছ লাগানোর ছয় মাস পরে ছড়া আসে। একেকটা কলার ছড়ার দাম দুশো থেকে তিনশো টাকা। আর প্রতি পিস পেঁপের দাম ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা। এ পর্যন্ত আমি ত্রিশ হাজার টাকার কলার ছড়া ও প্রায় দশ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি।
 
কলার ‘ছলাকলা’ বেরিয়ে এলো কথা প্রসঙ্গে। মুকুল মিয়া বলতে লাগলেন, কলা মূলত চার প্রকারের। অধিক বীজমুক্ত কলা, দু-চারটি বীজযুক্ত কলা, বীজমুক্ত কলা আর সবজি কলা। আমার এখনে রোপিত চাম্পা হলো দু-চারটি বীজযুক্ত করা আর শবরি হলো বীজমুক্ত কলা। পর্যায়ক্রমে চার প্রকারের কলার চাষ করার ইচ্ছে রয়েছে আমার।  
 
যাদের অনাবাদি জমিগুলো পড়ে আছে তারা কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই ‘মুকুল মিয়া’ হয়ে উঠতে পারেন।  
 
আমাদের কৃষিনির্ভর দেশে আজ অনেক অনেক মুকুল মিয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।