ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বাংলা নববর্ষের আদ্যপান্ত

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
বাংলা নববর্ষের আদ্যপান্ত

ঢাকা: বছর ঘুরে আবার এলো উৎসবপ্রিয় বাঙালির আনন্দঘন দিন পহেলা বৈশাখ। গুটি গুটি পায়ে বাংলা বছর এসে থামলো ১৪২৩ এর দুয়ারে।

প্রতিবছর সব শ্রেণির সব বাঙালি এ দিনটিকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করে।  

বাঙালি সংস্কৃতি ও লোকজ ঐতিহ্যের প্রায় সবখানি জুড়ে রয়েছে বাংলার গ্রাম ও গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রা। ফলে আদিতে বাংলা মাস গণনা করে হতো চাষাবাদ, ব্যবসা ও পালিত হতো উৎসবগুলো।



বাংলা সনের প্রবর্তন
প্রায় সবারই জানা, অখণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। আগে হিজরি সন গণনা করে কৃষিকাজ করা হতো। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় ভারতীয় উপমহাদেশে ফসল বোনা থেকে শুরু করে ফসল তোলার আবহাওয়ার সঙ্গে হিজরি সন ঠিকমতো মিলতো না। ফলে কৃষকরা পড়তেন বিপাকে। সমস্যার সমাধানে সম্রাট আকবর বাংলা পঞ্জিকা দেখে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। ১৫৮৪ সাল থেকে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বছর গণনা শুরু হয়। তবে তা কার্যকর হয় সম্রাট আকবর সিংহাসনে বসার প্রথম দিনটি ১৫৫৬ সালের ০৫ নভেম্বর থেকেই।  



নববর্ষ পালনের সূত্রপাত
আকবরের রাজত্বকালে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে খাজনা ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এরপর বৈশাখের প্রথম দিনে খাজনা নিতে জমির মালিকরা হিসেবের একটি খাতা খুলতেন যাতে খাজনা ও শুল্ক পরিশোধকারীদের নাম ও হালনাগাদ হিসাব লিখে রাখা হতো। এটি পরবর্তীতে হালখাতা নামে পরিচিতি পায়। জমির মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা বুঝে নিয়ে তাদের মিষ্টি মুখ করাতেন। যদিও এখন এই প্রথার অনেকটা বিলুপ্তি ঘটেছে তারপরও পুরাণ ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারি বাজার, শ্যামবাজার ও ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা হালখাতার ঐতিহ্য খানিকটা হলেও ধরে রেখেছেন।  



নববর্ষ উদযাপন ও আনুষ্ঠানিকতা 
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়েজন করা হয় সাংস্কৃতিক ও নানারকম অনুষ্ঠানের। ১৯৮৯ সাল থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউট আয়োজিত বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালি নববর্ষের অন্যতম ‍ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। আরও রয়েছে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ, পান্তা-ইলিশ ইত্যাদি। ছায়ানটের এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুরু ১৯৬৭ সাল থেকে।
আগের মতো নববর্ষে এখনও বৈশাখি মেলা বসে। আগে বৈশাখি মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের খেলা ও প্রতিযোগিতা হতো। হতো লোকগান ও  পুতুল নাচ। বৈশাখি মেলায় বিভিন্ন প্রকার কৃষিজ দ্রব্য, কুটির, তাঁত, বাঁশ-বেত-পাট ও মৃৎ শিল্পজাত এবং চারু ও কারুপণ্য পাওয়া যায়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশজ পণ্যের পাশাপাশি আধুনিক ও বিদেশি পণ্যও চোখে পড়ে।  

সময়ের পরিক্রমায় আদি থেকে বর্তমানের বাংলা নববর্ষ উদযাপনের রীতি ও আনুষ্ঠানিকতা পাল্টেছে। তবে বাঙালি ঐতিহ্য ও বাঙালিয়ানায় পহেলা বৈশাখের এ দিনটি বরাবরই বিশেষ অর্থ বহন করে আসছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
এসএমএন/এসএনএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।