ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বোম্বাই মরিচের হাট...

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৬
বোম্বাই মরিচের হাট... ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: বোম্বাই মরিচ। রসনাবিলাসী বাঙালি মাত্রই ভর্তা কিংবা ডালসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারে স্বাদ ও সুঘ্রাণ বাড়িয়ে দেওয়া এ মরিচ পছন্দ করেন।

দেশি-বিদেশি অনেকের কাছে ঝাল ও গন্ধে অনন্য এ মরিচের চাহিদা বহুকাল ধরেই। বর্তমানে বিপুল চাহিদা থাকা এ মরিচ বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে বরিশাল অঞ্চলে।

বর্তমানে বৃহত্তর বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার বেশকিছু গ্রামে এ মরিচের চাষ হচ্ছে। এসব এলাকায় এ মরিচের ফলনও হয় বাম্পার।

এদিকে, বোম্বাই মরিচ বিক্রির জন্য বিখ্যাত ঝালকাঠির  নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নে আদমকাঠি ভাসমান ও স্থল বাজার।

পেয়ারা ও সবজির ভাসমান পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত হলেও বর্তমানে বোম্বাই মরিচের বাজার হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ ভাসমান বাজার।

বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর উপজেলা ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম থেকে এ বাজারে নিজেদের খেতের মরিচ নিয়ে আসেন কৃষকরা। প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার বসে এ বোম্বাই মরিচের হাট।

 

হাটবারে পুরো হাটজুড়ে নানা আকৃতির ঝাঁকা ও ঝুঁড়িতে গাঢ় সবুজ ও লাল রঙা বোম্বাই মরিচ বিকিকিনি হয়।

হাটে আনা মরিচের স্থানীয়ভাবে বিচিত্র নামও রয়েছে। এসব নামের মধ্যে কামরাঙা, লকোট মরিচের ঘ্রাণ ও ঝাঁঝ তুলনামূলক বেশি।

হাটে ওঠানো বোম্বাই মরিচ কিনে নিয়ে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এমনকি এ হাটের মরিচ এখন দেশের বাইরেও পাঠানো হচ্ছে।

খুচরা পর্যায়ে বোম্বাই মরিচের ‍দাম ভালো হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিদের অনেকে কম দামেই বিক্রি করেন এ মরিচ।

কুড়িয়ানার আদমকাঠি হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা ঝালকাঠির ১নং গাবাচন্দ্রপুর শাওরাকাঠী গ্রামের দিলীপ সরকার জানান, এ অঞ্চলের কৃষকেরা মাঘ মাসের শেষ দিক থেকে খেত থেকে মরিচের ফলন পেতে শুরু করেন। মৌসুমের শুরু হওয়ায় সে সময় দাম কিছুটা চড়া থাকে। টানা কয়েক মাস চলে মরিচের ফলন। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ দিকে মরিচের মৌসুম শেষ যখন প্রায় শেষ হয়ে আসে, তখনো দাম কিছুটা বেড়ে যায়। তবে ‍মাঝের সময়টাতে মরিচের দাম স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কমই থাকে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় এ মরিচ চাষি জানান, যখন মরিচের উৎপাদন বেড়ে যায় তখন বাজারে দাম পড়ে যায়। মৌসুমের শুরুতে ১০০ বোম্বাই মরিচ ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে তা নেমে গেছে ২৫ থেকে ৬০ টাকায়।

বরিশালের বানারীপাড়ার গাবা এলাকা থেকে হাটে মরিচ নিয়ে আসা মো. সুব্রত বিশ্বাস জানান, তিনি এবার ১ একর জমিতে ৩ হাজার মরিচ গাছের চারা রোপণ করেছেন। মৌসুমের শুরু থেকেই ফলন ভালো পাচ্ছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এখনো ভালো ফলন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি জানান, প্রতি ১৫ দিন পর পর খেত থেকে মরিচ তুলছেন। এ হাটে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ হাজার পিস বড় সাইজের বোম্বাই মরিচ নিয়ে আসেন তিনি। এর দর শ’প্রতি ৮০ টাকা আশা করলেও বাজারে আমদানি বেশি থাকায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন।

আটঘর এলাকা চাষি পুলিশ দেওরী জানান, তিনি এবার ৫০০ মরিচ গাছের চারা রোপণ। তার মরিচ উন্নতমানের। এর বীজ নিজ খেত থেকেই সংগ্রহ করেন তিনি।

হাটে মরিচ কিনতে আসা বেপারি আ. হক জানান, দক্ষিণবঙ্গের আর কোথাও মরিচের এতো বড় হাট বসে না। তাছাড়া এখানে দামে কম ও ভালো মানের মরিচ পাওয়া যায়। এখান থেকে মরিচ কিনে সেগুলো ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠান।

আলাপকালে তিনি জানান, গত ২৫ বছর ধরে এ হাট থেকে নিয়মিত মরিচ কিনছেন তিনি। ১৯৭৮ সালের দিকে স্বল্প পরিসরে এখানে বোম্বাই মরিচ পাওয়া যেতো। এরপর ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে বোম্বাই মরিচের চাহিদা বেড়ে গেলে ১৯৮৫ সাল থেকে চাষাবাদ ব্যাপকহারে বেড়ে যায়।

প্রতিহাটে এ বাজার থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ পিস মরিচ  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে পাঠানো হয় বলে তিনি জানান।

হাটের ইজারাদার পক্ষের মো. সুমন হাওলাদার জানান, আটঘর-কুড়িয়ানা ভাসমান সবজি ও পেয়ারার জন্য হলেও বর্তমানে তা মরিচের জন্য পরিচিত হয়ে উঠছে।

বর্তমানে ‍কুড়িয়ানা খাল তীরবর্তী আদমকাঠি হাটে মরিচ আনা হয়  নৌপথে। সাধারণত ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে হাট শুরু হয়। এরপর মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে  মরিচের বিকিকিনি শেষ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।