ঢাকা, শনিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ মে ২০২৪, ১৬ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

‘গরিবের প্রাইভেটকার’ ইজিবাইক!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
‘গরিবের প্রাইভেটকার’ ইজিবাইক! ছবি- অনিক খান- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

ময়মনসিংহ: ‘মেঘলা আকাশ, মেঘলা দিনে, মেঘে ঢাকা জোছনা’ জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সির এ গান বেজে চলেছে একটি ইজিবাইকে। মোবাইলের মেরোরি কার্ডের মাধ্যমে সাউন্ড বক্সে গান শুনে চালকের আসনে বসে তরুণ সোহাগ ইজিবাইক নিয়ে ছুটছেন নগরীর এক মাথা থেকে আরেক মাথায়।

 

সোহাগের ইজিবাইকে রয়েছে আলোকসজ্জা। কিস্তিতে কেনা এ ইজিবাইক সাজিয়েছেন নগরীর মাসকান্দা এলাকার এ বাসিন্দা। তার ভাষ্যে, ইজিবাইক এখন গরিবের প্রাইভেটকার। নিম্নবিত্ত বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের সহজ বাহন।  

শুধু টানা বা ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে কম ভাড়ায় বা দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছার জন্যই নয়, নিম্নবিত্ত পরিবারের বিয়েতেও এখন প্রাইভেটকারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এ বাহন। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির তরুণ-যুবকদের অর্থনৈতিক সফলতা অর্জনেও ভূমিকা রাখছে এ গণবাহন।
 
শহরতলী আকুয়া মোড়লপাড়া এলাকার আইজ উদ্দিনের (৩৫) সংসারে নিত্যসঙ্গী ছিল অভাব। পরিবারের পাঁচ সদস্যের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছিলেন না। জীবনের প্রয়োজনেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ভাড়ায় ইজিবাইক চালিয়ে ঘুরিয়েছেন জীবনের মোড়।  

ইজিবাইক চালানোকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন চালক সোহাগ মিয়া। ৬০ হাজার টাকা নগদে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজিবাইক কিনেছেন। ৬ কিস্তিতে পরিশোধ করবেন এ টাকা।  

নিত্যদিন বিকেলে ইজিবাইক নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা আয় করেন।  

ময়মনসিংহ পৌরসভা থেকে ৭৪৫টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আর লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইকের সংখ্যা কম করে হলেও ১০ হাজার।  

২০১০ সালে সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর আর কোনো ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তবুও নগরীর ১৫ ইজিবাইকের শোরুম থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০টি ইজিবাইক রাস্তায় নামছে।  

জীবিকার তাড়না আর যাত্রীদের চাহিদায় স্বল্প শিক্ষিত থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুনো অনেকেই হাতে তুলে নিয়েছেন ইজিবাইকের হ্যান্ডেল।  

সফুর উদ্দিন নামে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া এক চালক বলেন, যাদের প্রাইভেটকারে চড়ার সামর্থ্য নেই তারা ইজিবাইকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। এ বাহন এখন গরিবের প্রাইভেটকার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর এ থেকে একজন চালক কিস্তির টাকা, রক্ষণাবেক্ষণ বাদে প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা আয় করছেন।  

তবে চালকদের অভিযোগ, ইজিবাইক চালানোয় চরম বিপত্তি দেখা দিয়েছে লাইসেন্স সমস্যা। যানজটের অজুহাতে বছরের পর তাদের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। ফলে মাঝে মধ্যেই ট্রাফিক পুলিশ ইজিবাইক আটক করে।  

‘রিকশার অর্ধেক ভাড়াতেই ইজিবাইকের মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। সময়ও লাগে কম। ইজিবাইক এ কারণেই গরিবের প্রাইভেটকার’ এমন মত তুলে ধরেন নগরীর একটি স্কুলের শিক্ষক জুলহাস কবির।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬ 
এমএএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।