ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক ‘নেলসন-উইনি’ জুটি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৮
বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক ‘নেলসন-উইনি’ জুটি নেলসন ম্যান্ডেলা ও উইনি ম্যান্ডেলা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্বের বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম চরিত্র নেলসন ম্যান্ডেলার সাবেক স্ত্রী ও সংগ্রামের সারথি উইনি ম্যান্ডেলা। তার প্রকৃত নাম 'নমজামো উইনফ্রেদা জানিউই মাদিকিজেলা'। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলাকে যেমন বলা হয় গণতন্ত্রের জনক, তেমনি উইনিকে অভিহিত করা হয় ‘জাতির মাতা’ হিসেবে।

আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (এএনসি) কাজ করার সময় ১৯৫৬ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা আনা হয় নেলসন ম্যান্ডেলার নামে। এ মামলার বিচার চলার সময়ই তার সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণ বর্ণবাদ-বিরোধীকর্মী উইনির সঙ্গে।

 

এ ঘটনার দুই বছরের মাথায় ইভলিনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর উইনির সঙ্গে নেলসন ম্যান্ডেলার বিয়ে হয়। দু’জনেই ছিলেন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সমানভাবে যুক্ত।  তাই দু’জনকেই সমান তালে যেতে হতো কারাগারে। প্রায় সময়ই দেখা যেত এ দম্পতির একজন কারাগারের বাইরে তো অপরজন ভেতরে, নয়তো দুইজনকেই একসঙ্গে কারাবরণ করতে হচ্ছে। তাই নিজেদের নিয়ে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ খুব কমই পেতেন তারা।  

বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন এক বিপর্যয়ের প্রান্তে উপনীত হয় যখন দ্বিতীয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার বিচারে নেলসন ম্যান্ডেলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সময়টা ১৯৬৪ সাল। তাকে বন্দী করা হয় রবেন আইল্যান্ডের কারাগারে।

যেদিন ম্যান্ডেলার কারাদণ্ডের আদেশ হয়, সেদিন সমর্থকদের উদ্দেশ্যে উইনি বলেছিলেন, আমাদের কাউকেই আশা ছাড়া উচিত হবে না। আমি মনে করি, এ আন্দোলন চলতেই থাকবে।
নেলসন ম্যান্ডেলা ও উইনি ম্যান্ডেলা।  ছবি: সংগৃহীত

রবেন আইল্যান্ডে ম্যান্ডেলাকে অনেক কষ্টকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। এসব অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি বড় বিষয় ছিল, স্বজনদের কাছ থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটাতে হয় তাকে। এসময় স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় উইনিকে। ম্যান্ডেলার সঙ্গে দেখা করতে প্রায় হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে রবেন আইল্যান্ডে গিয়েছিলেন উইনি। আর দেখা করার জন্য সময় পেয়েছিলেন মাত্র ৩০ মিনিট।

স্যামুয়েল উলার্ড ক্রম্পটনের ‘মডার্ন পিসমেকার নেলসন ম্যান্ডেলা’ বইতে কারাবাসের সময় ম্যান্ডেলার সঙ্গে উইনির প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনায় বলা হয়, তাদের মাঝখানে ছিল কাচের দেয়াল। নিজেদের যে একটু ছুঁয়ে দেখবেন, সেই উপায়ও ছিল না। আলাপ চালানোর জন্য কাচের গায়ে ছিল কয়েকটি ছিদ্র। সেখান দিয়ে কথা ঠিক মতো শো না যায় না। তাই চেঁচিয়ে কথা বলতে হচ্ছিলো তাদের।

দীর্ঘদিন পর ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ম্যান্ডেলা। খুব রোগা হয়ে গিয়েছিলেন উইনি, তাই তাকে খাওয়া-দাওয়ার প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্য বলেছিলেন তিনি।  

ম্যান্ডেলাকে এসময় দু’টি খবর দিয়েছিলেন উইনি। একটি হলো, ম্যান্ডেলার মায়ের অসুস্থতার খবর। অপরটি হলো, তার ছেলে থেমবির মৃত্যু সংবাদ। এর ঠিক পরপরই কারারক্ষী ঘোষণা করেন, সময় শেষ। উইনির চলে যাওয়ার দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বেদনার ঘন অন্ধকার গ্রাস করে ম্যান্ডেলাকে।

ম্যান্ডেলার সেই ভালোবাসার মানুষটিকে এবার চিরতরে গেলেন হারিয়ে। সোমবার (২ এপ্রিল) ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন উইনি ম্যান্ডেলা। প্রায় তিন দশক ধরে এ জুটি ছিলেন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক। পরবর্তী সময়ে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলেও বর্ণবাদের অবসানে এ জুটির নামই উচ্চারিত হতে দেখা যায় সবখানে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৮
এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।