পানাম নগর পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি। প্রাচীন সোনারগাঁওয়ে বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
পানাম নগরে ঢুকতেই হাতের বামে রয়েছে ইটের তৈরি একটি বইয়ের ফলক। সেখানে লেখা রয়েছে এর ইতিহাস। হাতের ডানে রয়েছে পানাম সিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। পানাম নগরের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আছেন অফিসার নরসিংদীর সন্তান সদা হাসিখুশি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, পানাম নগরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন শত শত লোক আসে। তারা এর ঐতিহ্য-ইতিহাসের গল্প জানে। আমরাও যতটুকু সম্ভব তাদের বোঝাতে চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আমরা দর্শনার্থীদের জন্য সবসময় নিরাপত্তার বিষয়টি জোর দিই। আর এর জন্য নতুন করে সিসিটিভি দিয়ে পুরো এলাকাটাকে নজরদারিতে রেখেছি। তাদের জন্য আধুনিক বাথরুম বানিয়েছি। ২০ জন আনসার সবসময় নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকে। তার কাছে থেকে ছবি তোলার অনুমতি নিয়ে বের হলাম পানাম নগর দেখতে।
পানাম নগরের ভেতরে ঢুকতেই মনে পড়ে মালয়েশিয়ার প্রচীনতম শহর মালাক্কার কথা। সেই শহরটাকেও হার মানিয়েছে আমাদের এই পানাম শহর। এই শহরের প্রতিটি ইট-পাথরে রয়েছে এক একটি ইতিহাস। স্থাপনাগুলোর স্থাপত্যে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সঙ্গে মোঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ দেখা যায়। রয়েছে নিখুঁত কারুকাজ। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর ফ্রেমবন্দি করছে মোবাইলে সেলফি তুলে।
কিছুদূর হাঁটলেই দেখা যায় আম, লিচু, নারকেলের শত শত গাছ। পথিককে ছায়া দিতে এই গাছগুলো যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। রয়েছে ছোট-বড় কয়েকটি পুকুর। কিন্তু যত্নের অভাবে আর আশেপাশের ময়লা ফেলার কারণে তা ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে।
প্রতিটি স্থাপনার দেয়ালে রয়েছে সিসিটিভি। আর তিন-চার গজ দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছে আনসার বাহিনী। তার একটাই নজর যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
কিছু ছেলেমেয়ে সখ করে গাছ থেকে আম পেড়ে খাচ্ছে। তাই আনসার দল তাদের বাঁশি বাজিয়ে সাবধান করে দিলো।
যত সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ততই দর্শনার্থী বাড়ছে। আর বাড়তে লাগলো পানাম নগরের রূপ। কনে দেখা আলোয় পানাম নগরের প্রতিটি ইট রক্তলাল হয়ে আছে। আটজনের একটি দল এসেছে চাঁদপুর থেকে। তারা জানান, সবই ভালো শুধু খাবার আর এখানকার তৈরি জিনিসপত্রের অনেক দাম। ১০ টাকার জিনিসের দাম এখানে চায় ১০০ টাকা। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গাড়ি পার্কিং। পানাম নগরে ঢুকতে একটা খালি মাঠ রয়েছে। মাঠটিও উঁচু-নিচু। একটু বৃষ্টি হলেই কাদা হয়ে যায়। দর্শনার্থীরা আসলে সেখানেই গাড়ি পার্কিং করেন। কিন্তু সেখানে নেই কোনো নিরাপত্তা কর্মী। গাড়িতে মালামাল চুরি, গাড়ির লুকিং গ্লাস খুলে নেওয়া প্রতিদিনের কাজ।
বিকেল ৫টা বাজতেই আনসার বাহিনীর হুইসেল-এর আওয়াজ। তার মানে সময় শেষ। সবাইকে নিরাপদে বের হয়ে আসার অনুরোধ করছেন। আমরাও সবার সঙ্গে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বের হয়ে আসলাম। আর মনে মনে বললাম সেই কবিতার লাইন দুটি
বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে, বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপর, একটি শিশিরবিন্দু।
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
আরআর