ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

গন্ধমাখা পূজার ঘোর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৮
গন্ধমাখা পূজার ঘোর -

রাতের জার্নি শেষে ট্রেন থেকে রাজশাহী স্টেশনে নামতেই মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। বহু স্মৃতি উঁকি দিচ্ছে। সহযাত্রীদের বিদায় দিয়ে রিকশা নিলাম। গন্তব্য অলোকার মোড়, বড়মার বাসা। 

তখনও শহরটা জাগেনি। রিকশায় যেতে যেতে চিরচেনা শহরটা দেখছি তৃষিতের মতো।

দুই-একজনকে চোখে পড়লো প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন। বিন্দুর মোড় হয়ে নিউ মার্কেটের দিকে রিকশা চলছে। হঠাৎই চোখে পড়লো দেয়ালে সাঁটানো দুর্গা পূজার একটা পোস্টার। মনে পড়লো পূজা চলে এসেছে।  

কানে বাজছে ঢাকের শব্দ, ধূপের গন্ধ পাচ্ছি অবচেতন মনে। চোখে ভাসছে একপাল নানা বয়সের ছেলেপেলে, একইরকম জামাকাপড় পড়ে দলবেঁধে মন্দিরে ছুটছে।  

আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। পূজাতেই জ্যাঠা-জ্যাঠি, কাকা-কাকি, দাদা-বউদি, দিদি-জামাইবাবু, আরও আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে আসতেন। মূলত পূজাতেই সবার সঙ্গে দেখা হতো।  
 
বাড়ির সামনের রাস্তার পাশের মাচাঙে গিয়ে আমরা বাচ্চারা বসে থাকতাম। আর এক-এক করে স্বজনেরা আসতেন। তাদের ব্যাগপত্র নিয়ে হৈ-হৈ করতে করতে বাড়িতে ঢুকতাম।

এরপর শুরু হতো কে কয়টা জামা পেলাম পূজাতে তার হিসাব। কার জামার রং কেমন, কোন জামাটা পূজার কোনদিন পরবো তা নিয়ে চলতো জোর আলোচনা। রাতভর বোন, ভাগনি-ভাতিজি মিলে আমরা হাত রাঙাতাম মেহেদির রঙে। সকালে উঠে চলতো সূক্ষ্ম পরখ। কার মেহেদির রং কতটা গাঢ় হয়েছে, কার ডিজাইনটা ভালো হয়েছে।  

পূজার কয়েকদিন খুব ভোরে উঠে দল বেঁধে হাতে সাঁজি (ফুল রাখার পাত্র) নিয়ে যেতাম ফুল তুলতে। পাছে আবার পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েরা না কুড়িয়ে নিয়ে যায়। আমাদের বাড়ির সামনের দিকটাই ছিল শিউলি ফুল গাছ। দূর থেকেই শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধে এক অদ্ভুত মায়াজাল তৈরি হতো। ফুলগুলো শুভ্র কোমল পাপড়ি ছড়িয়ে স্নিগ্ধতায় ভারিয়ে তুলতো চারপাশ। গাছের নিচে শিশিরে ভেজা ঘাসের ওপর যেন শ্বেতশুভ্র গালিচা বিছিয়ে রেখেছে কেউ।  

আমরা ফ্রক ভাঁজ করে তার ভেতরে ফুল তুলে রাখতাম। কে কতো বেশি ফুল কুড়ালো তার চলতো প্রতিযোগিতা। সাঁজিতে রাখা মুক্তোর দানার মতো ফুলগুলো যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসতো। নিজেদের বাড়ির গাছের ফুল তোলা শেষ করে যেতাম অন্য বাড়িতে। পথে পাড়ার কাউকে যদি দেখতাম ফুল তুলতে তবে দেখে নিতাম সে কতটা ফুল কুড়িয়েছে। পুরো পাড়ার থেকে আমাদের বাড়ির ফুল বেশি না হলে যে মুখ দেখানো যাবে না! পুরো পাড়া ফুল তোলা শেষে যুদ্ধ জয়ের হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরতাম একেকজন।  

‘মামা নামেন’ রিকশাওয়ালা মামার ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। বাসার সামনে চলে এসেছি। কলিংবেল চাপতেই বউদি মেইন গেট খুলে দিলেন। ভেতরে পা রাখতে গিয়েই দেখি আমার জন্য শ্বেতশুভ্র গালিচা বিছিয়ে রেখেছে কে যেন! গন্ধে মৌ মৌ করছে চারদিক। শিউলি ফুল! গেটের পাশেই ছোট একটি শিউলি গাছ। আর তা থেকেই ঝরে পড়ে যেন আমাকে সাদরে গ্রহণ করছে তারা। প্রাণভরে শ্বাস নিলাম।  

বউদি বললেন, পূজার জন্য কুড়িয়ে নিয়ে যাই। আমিও বউদির সঙ্গে ফুল কুড়াতে শুরু করলাম।

তখনও পূজার ঘোর কাটেনি। ফিরে গেছি ছেলেবেলায়। একরাশ ভালোলাগা নিয়ে স্মৃতির ঘোরেই সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩  ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৮
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।