ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বিদায়ী সূর্যাস্তে সুন্দরের আশীর্বাদ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮
বিদায়ী সূর্যাস্তে সুন্দরের আশীর্বাদ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বছরের শেষ সূর্য। ছবি: সুনীল বড়ুয়া/বাংলানিউজ

ঢাকা: দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। আস্তে আস্তে তেজদীপ্ততা ছেড়ে মলিন হতে শুরু করেছে সূয্যিমামা। ডিমের কুসুমের মতো গোলাকার সূর্যটা দেখে মনে হতে পারে কপাল জুড়ে লালটিপ দিয়ে সেজেছে বাংলার বধূ। তবে সাজবেই বা না কেন? আজ যে তার বিদায় নেওয়ার পালা!

আর কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হবে ইংরেজি নববর্ষ ২০১৯। মধ্যরাতেই নববর্ষের আনন্দে মাতবে দেশবাসী।

এর আগে ২০১৮ সালের শেষ সূর্যাস্ত দেখা গেল সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়। এই সূর্যের সাথেই প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব নিয়ে বিদায় নিলো আরও একটি বছর। ঢাকায় বছরের শেষ সূর্য।  ছবি: রাজীন চৌধুরী/ বাংলানিউজআবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, রাজধানী শহর ঢাকায় সন্ধ্যা ৫টা ২২ মিনিটে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে গেল ইংরেজি বছর ২০১৮ এর শেষ দিনটি। বছরের শেষ দিনের সূর্যাস্তের সাথে পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে এদিন অনেকেই সূর্যস্নান করেছেন ভিন্ন ভাবে, ভিন্ন স্থানে।

পড়ন্ত বিকেলে শান্ত ছিল রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা। মাঝের ব্রিজটার উপর দাঁড়ালে সূর্যটা চোখে পড়ে বরাবর। কিন্তু সূয্যিমামার দিকে তো তাকানো দায়! রূপের ঝলকানিতে ঝলছে যাওয়ার উপক্রম ঝিলের পানি। সেদিকে তাকাতেই দেখা গেলো সূর্যের আরেক রূপ। সেও পানিতে ঝিলমিল করে নেচে নেচে জানান দিচ্ছে বিদায়ী বার্তা। ঢাকায় বছরের শেষ সূর্য।  ছবি: রাজীন চৌধুরী/ বাংলানিউজএখানেই কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নিবেদিতা বকশির সঙ্গে। নিবেদিতা তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, হাতিরঝিলে এই সূর্যের দৃশ্য সত্যিই অনেক দারুণ। সূর্যের ছায়া নিয়ে পানিতে এই ঢেউগুলোর সাথে আরও একটি বছর জীবন থেকে চলে গেল। বছরের শেষ সময়ের উচ্ছ্বাসে সব গ্লানি মুছে নতুন বছরে সুন্দরের প্রত্যাশা এখন। আর সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে আমাদের। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বছরের শেষ সূর্য।  ছবি: সুনীল বড়ুয়া/বাংলানিউজশুধু হাতিরঝিল বা নিবেদিতা নয়, বছরের শেষ সূর্যটা দেখার জন্য রাজধানীতে বাড়ির বারান্দা, ছাদ, অফিস পাড়ায় কাজের ফাঁকে যে যেভাবেই সুযোগ পেয়েছে, একটিবারের জন্য হলেও উঁকি দিয়েছে সূর্যটার প্রতি। এ প্রসঙ্গে কথা হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের তরুণী মুন্নি আক্তারের সঙ্গে। ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে সূর্যাস্ত দেখছিলো সে। রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকায় বছরের শেষ সূর্যাস্ত।  ছবি: শাকিল আহমেদ/বাংলানিউজকথা হলে মুন্নি বলেন, বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে চেষ্টা ছিলো বিদায়ী সূর্যটা দেখার। ঝিলমিল করা সূর্যটা শেষ বয়সে কত সুন্দর হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। চারপাশে সেই রঙ ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিম দিকে তাকালে দেখা যায়, নারিকেল আর তালপাতার উপরে সূর্যটা দাঁড়িয়ে আছে। এ যেনো এক অন্যরকম সুন্দর দৃশ্য। আর সে সুন্দর দৃশ্য যেন আমাদের সকলের নতুন বছর সুন্দর হওয়ার আশীর্বাদের মতো।

সত্যিই তাই, সুন্দরের অবগাহনে বছরের শেষ সূর্যাস্ত নতুন করে রাঙিয়ে দিতে চাই আগামীর নতুন সময়গুলো। একইসাথে মনে করিয়ে দেয় পুরনো অনেক কিছুই, অনেক স্মৃতি!

কবিগুরুর ভাষায় বলতে গেলে- ‘বৎসর বৎসর চলে গেলো। / দিবসের শেষ সূর্য/শেষ প্রশ্ন উচ্চারিত/ পশ্চিম সাগর তীরে/ নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়/ কে তুমি?/ পেলো না উত্তর…। ’

উত্তর পাই বা না পাই, বছরের শেষ সূর্য দিনে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব মিলাই আমরা বছরের খেরো খাতা ঘেঁটে। সেসব প্রশ্নকে ছাড়িয়ে শেষ সূর্যের সামনের নতুন দিন সবার মনে নতুন বছরে আলোর নাচন আনে। তাই বছরের শেষ সূর্যই হয়ে থাক না আগামীর পথচলার নতুন পাথেয়...।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা; ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮
এইচএমএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।