ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

লেখকের আগমনে ভিন্নমাত্রা বইমেলায়

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৯
লেখকের আগমনে ভিন্নমাত্রা বইমেলায় অটোগ্রাফ দিচ্ছেন জাফর ইকবাল। ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: মেলার একেবারে শুরুতেই পাঠকপ্রিয় লেখকরা আসেন খুব কম। মেলার সার্বিক অবস্থা নিয়ে বেশ ওয়াকিবহাল তারাও। পাঠক আনাগোনা, বইয়ের বিক্রি, লেখকদের মুখরতা, সব মিলিয়েই তারা সিদ্ধান্ত নেন মেলায় আসার। এবার সেইসব প্রিয় লেখকরা আসতে শুরু করেছেন মেলার প্রথম থেকেই।

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মেলায় এসেছিলেন জনপ্রিয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক জাফর ইকবাল। সন্ধ্যায় জনপ্রিয় এ লেখক মেলা প্রাঙ্গণে আসার পর নীরব মেলা হঠাৎ করেই সরব হয়ে উঠে।

জাফর ইকবালের অটোগ্রাফ নিতে ও তার সঙ্গে সেলফি তুলতে এসময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ভিড় জমায় লেখকের ভক্তরা।

এর আগে বিকেলে মেলায় এসেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের বরপুত্র সাকিব আল হাসান। সঙ্গে ছিলেন কমেন্ট্রি বক্স কাঁপানো দরাজ কণ্ঠের ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত। বর্ষাদুপুর থেকে প্রকাশিত এই ধারাভাষ্যকারের বই ‘চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত বলছি’ সিরিজের এবারের বিষয় ‘নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসান’ এর মোড়ক উন্মোচন করতেই মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে এসেছিলেন তারা।

এর আগে মেলায় পা রেখেছেন ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, শহীদুল্লাহ ফরায়জীসহ আরো অনেকে। আর নবীন লেখকরা প্রতিদিনই আড্ডা আলোচনায় মেলা জমিয়ে রাখছেন। অন্যদিকে প্রকাশকরা বলছেন মেলা এবার আক্ষরিক অর্থেই এক ভিন্ন মাত্রা পেতে যাচ্ছে।

প্রবীন ও নন্দিত লেখকদের মতে, অমর একুশে গ্রন্থমেলা সবসময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই চায়। এই ময়দানেই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, এখানেই তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাব দেয়া হয়, পাকিস্তানিরা এখানেই আত্মসমর্পণ করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশেই শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমি। আমরা চাই না অমর একুশে গ্রন্থমেলা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হোক। ’

চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাতের ব্িয়ের মোড়ক উন্মোচন।  ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদলতবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা পেলে মেলার সার্বিক উন্নয়ন আরো উন্নত হতো। একই সঙ্গে বইয়ের মান এবং মেলার নীতিমালা ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী।

এদিকে এবারের মেলা এলেই কতটা জমে উঠবে, সে বিষয়ে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়খ জানান, পাঠকের সমাগম হওয়া মানেই মেলা জমে গেল, তা কিন্তু নয়। এখানে বিক্রি একটি মুখ্য ব্যাপার। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার মেলায় বিক্রি অনেকটা উপরের দিকে। সেদিক থেকে বলা যায়, মেলা আসছে শুক্রবার থেকেই প্রকৃত অর্থে জমে যাবে এবং সেটা থামবে না।

বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাই: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. সৌমিত্র শেখর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, শহীদ ইকবাল এবং তারিক মনজুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।  

প্রাবন্ধিক বলেন, মুহম্মদ আবদুল হাই বেঁচেছিলেন মাত্র পঞ্চাশ বছর। কিন্তু তাঁর জন্মের শতবর্ষেও আজ আমরা তাঁকে স্মরণ ও শরণ করছি। এ শুধু মনে রাখা অর্থে স্মরণ নয়। আশ্রয় অর্থে শরণও। অর্থাৎ দৈহিক মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পরেও বেঁচে আছেন তিনি। এ বেঁচে থাঁকা দেহধারণ করে অবশ্য নয়, এ বেঁচে থাকা তাঁর কর্ম ও গুণ দিয়ে। ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবার পক্ষপাতী এবং সে-বিচারে বলতে হয়, ঊষার সমকালে বিরূপ রাজনৈতিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে মুহম্মদ আবদুল হাই বাঙালি চেতনার অন্যতম বাতিঘরের মতো কাজ করেছিলেন। সেখানে খানিকটা বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল তাকে অবলম্বন করতে হয়েছিল সত্য, কিন্তু তিনি যা করেছিলেন তা বাঙালির সামূহিক অগ্রবর্তিতার পক্ষে গেছে। এখানেই তাকে শরণ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়।  

অমর একুশে গ্রন্থমেলা।  ছবি:দেলোয়ার হোসেন বাদলআলোচকবৃন্দ বলেন, মুহম্মদ আবদুল হাই ছিলেন বহুমুখী মননের মানুষ। তার মূল পরিচিতি ভাষাবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও তিনি সামগ্রিকভাবে বাংলা সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক। কারণ সাহিত্যক্ষেত্রে তার অবদান মৌলিক এবং নতুনতা- চিহ্নায়ক। ধ্বনিবিজ্ঞানের বাইরে বাংলা ভ্রমণসাহিত্যেও মুহম্মদ আবদুল হাই রেখেছেন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান।  

সভাপতির বক্তব্যে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, মুহম্মদ আবদুল হাই বাংলা সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির নিষ্ঠ সাধকপুরুষ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাধারায় তার অবদান কখনও বিস্মৃত হবার নয়। তিনি নিজে যেমন একজন পুরোধা লেখক ছিলেন তেমনি দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা এবং সারস্বত-সাধনার মধ্য দিয়ে জ্ঞানচর্চার অসামান্য পরম্পরা সৃষ্টি করেছেন। জন্মশতবর্ষে তাকে নিয়ে আরও অনেক আলোচনা ও বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন।  

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি রুবী রহমান এবং শিহাব সরকার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহফুজ মাসুম এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, কান্তা নন্দী, সন্দীপন দাস, সাজেদ ফাতেমী, শান্তা সরকার এবং মো. নূরুল ইসলাম।

শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার অষ্টম দিন। এদিন মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘চিত্রশিল্পী পরিতোষ সেন: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবুল মনসুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মতলুব আলী, সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং আমীরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রফিকুন নবী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯
এইচএমএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।