ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না পার্কের পথ ধরে হেঁটে হয়তো মনের অব্যক্ত ভাব ব্যক্ত করছে এই যুগল/ছবি: বাদল

ঢাকা: চোখে সৌন্দর্য লেগে গেছে অনেক আগেই। সে সৌন্দর্যে দিক ভুল হয়, তৃষ্ণার্ত হৃদয় আরো তৃষিত হয় প্রিয় মানুষটিকে পাওয়ার জন্য। কিন্তু ঠিক ক্ষণটির অপেক্ষায় মনের লুকানো কথা বলা হয়ে ওঠে না। কি করেই বা হবে? ভালোবাসার কথা প্রিয় মানুষটিকে একটু রোম্যান্টিক মুডে না বললে আবার হয় নাকি!

সত্যিই তাই। একটু মৃদুমন্দ হাওয়া বইবে, রোদের উত্তাপ নয়, বরং মিঠে রোদ বা চাদের আলোয় ছায়া পড়বে একজোড়া হৃদয়ের।

পেছন থেকে ভেসে আসবে কি এক অজানা ভালোলাগার সুর। তবেই না তার সামনে অধিষ্ট হয়ে, চোখে চোখ রেখে, দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করে বলা যায়, ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না’।

সে দিন আজ এসেছে। হৃদয়ে বসন্ত জেগেছে একদিন আগেই। আর আজ সেই বসন্ত ফাল্গুনের রং মেখে প্রিয় মানুষটিকে নিজের না বলা কথাটা জানিয়ে দেওয়ার দিন। দখিনা হাওয়াকে বলার দিন, ‘শোন গো দখিন হাওয়া, প্রেম করেছি আমি’!

হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নেই। তবে সারাবছর ভালোবাসবার যে আয়োজন তা একটি দিনে আরেকটু বাড়তি গুরুত্ব পেলে ক্ষতি কী? আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ফাল্গুনের দ্বিতীয় দিন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। যদিও এই দিবসের একদিন আগেই ঋতুরাজ বসন্ত রাঙিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি। প্রেমের ঋতু বসন্তই ভালোবাসা দিবসের অনন্ত সঙ্গী।

প্রিয়জনকে ভালোবাসার রঙের ফুল উপহারবৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একদিকে ঋতুরাজ বসন্তের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে ভালোবাসা দিবস। আর এই দুটো দিনকে ঘিরে নগরে এখন বইছে ভালোবাসার ঘ্রাণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান, টিএসসি, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, রবীন্দ্র সরোবরসহ নগরীর বিভিন্ন বিনোদনের কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকেই লক্ষ্য করা গেছে তরুণ-তরুণীদের ভিড়।

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তারা বিভিন্ন কার্ড, শোপিসসহ নানা উপহারসামগ্রী কিনে উপহার দিচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে। তবে তার ফুল উপহার দেওয়ার বিষয়টিই গুরুত্ব পায় সবচেয়ে বেশি।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় শাহবাগ মোড়ে ফুল কিনতে আসা সদ্য বিবাহিত আবিদ হাসানের সঙ্গে। সঙ্গিনী ফারহানার জন্য তিনি নিয়েছেন একগুচ্ছ লাল গোলাপ। কথা হলে আবিদ বলেন, প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে প্রিয়জনকে ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিতেই আমাদের নিত্য পরিশ্রম। তবু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার একটি দিন নির্ধারিত হয়েছে। তবে সারাবছর ভালোবাসবার যে আয়োজন তা একটি দিনে আরেকটু বাড়তি গুরুত্ব পেলে ক্ষতি কী? আর ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, প্রিয় মানুষটির উপর একটু মৌতাত ছড়িয়ে তাতে সৌন্দর্য মাখিয়ে দেওয়া। আর সেটি পাওয়া যায় ফুলে। তাই প্রিয় তাকে আজ উপহার দেওয়া হবে একগুচ্ছ ফুল।

ভালোবাসা তাদেরওফুলের দোকানেই কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী নায়লা হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, শুধু ফুল বা কার্ড বিনিময় নয়, আজ ক্যান্ডল-লাইট ডিনারের পরিকল্পনাও আছে তাদের।

আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ বলেন, অনেক অপেক্ষার পর আজ তাকে মনের কথাটি বলে দেবো বলে ঠিক করেছি। যদিও ভীষণ ভয় করছে, তবু আজ সময়টা তাকে রাঙিয়ে দেওয়ার।

শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা আর স্বামী-স্ত্রী নয়, সব সম্পর্কের মানুষই তাদের আত্মিক টানের প্রকাশ ঘটায় এই ভালোবাসার দিনটিতে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে নয়; বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, প্রিয় ব্যক্তিত্ব, এমনকি পোষা প্রাণী থেকে শুরু করে বৃক্ষের প্রতিও।

তাইতো আবিদ, নায়লা বা সোহাগ নিজেদের প্রিয় মানুষগুলোর জন্য ফুল কিনলেও তার আগে ফুলসহ বিভিন্ন উপহার নিয়েছে বাবা-মাসহ পরিবাবের জন্য। তাদের মতে, পরিবারের চেয়ে বেশি ভালোবাসা আর কোথায় আছে! তাইতো এই মানুষগুলো পাশে থাকলে রোজই ভালোবাসা দিবস। সেই ভালোবাসা দিবসে জেগে ওঠা মানবতার আবেগ শুধু একদিন নয়, বয়ে চলুক সারাবছর।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।