ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মণিপুরী তাঁতে সম্ভাবনার হাতছানি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৯
মণিপুরী তাঁতে সম্ভাবনার হাতছানি মণিপুরী তাঁতে কাপড় তৈরি করছেন এক তরুণী। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: সুদিন ফিরে পেতে সুতা আর কাঠের মেশিনের সাহায্যে বিরামহীনভাবে কাপড় বুনন করে চলেছেন মণিপুরী একজন তরুণী। ছোট সাংসারিক তাঁতশিল্পালয়ে জড়িয়ে আছে পরিশ্রম আর মমতার পরশ। এখানে শাড়ি, ওড়না, বিছানার চাদর সবই তৈরি করা হয়ে থাকে।

মণিপুরী তরুণীরা ঘরে ঘরে তাঁতশিল্পের চর্চা করে তাদের সুদীর্ঘ কালের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছেন। প্রতিদিনই সুতো দিয়ে বুনচ্ছেন বাহারি ডিজাইনে পোশাক।

এর ফলেই সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে মণিপুরী তাঁতে।  

রোববার (৩১ মার্চ) সরেজমিনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মণিপুরীপাড়ায় গিয়ে দেখা গেলো এমন দৃশ্য।

বিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রানু সিংহ। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি সময় পেলে তাঁতচর্চায় ব্যয় করেন। নিজে তাঁতবুননের পাশাপাশি পাশের বাড়ির মেয়েদেরকেও শেখান তিনি। মায়ের কাছ থেকে তাঁতবুনন শিখেছেন বলেও জানান তাঁতশিল্পী রানু সিংহ।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মণিপুরী তাঁত আমাদের ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের কুটিরশিল্প। প্রতিটি ঘরেই রয়েছে এ তাঁতের বুনন । নিজেদের পরিহিত পোশাকের পাশাপাশি আমরা অতিরিক্ত কাপড় তৈরি করে বাজারে পাইকারী মূল্যে বিক্রয় করে থাকি। খরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি ভালই লাভ হয়ে থাকে।

বিভিন্ন পোশাকের মূল্য সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে জানানন, একেকটি ছোট গামছার মূল্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বড় ধরনের গামছার ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা’, ওড়না পাওয়া যাবে ২০০’ থেকে ৪০০ টাকায়, শাড়ি ১৫০০’ থেকে সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে, ফানেল (মণিপুরীদের পরিহিত পোশাক) ৮০০’ থেকে ১৫০০’, গায়ের চাদর ৫০০’ থেকে ১২শ’, বিছানার চাদর ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, উলের কম্বল ১৫শ’ থেকে ২৫শ টাকা।  

তাঁতের কাপড়গুলো তৈরির দিনক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, শাড়ি ও ওড়না তৈরি করতে তার প্রায় দুই থেকে তিনদিন সময় লাগে। বড় কম্বল বা বিছানার চাদর বানাতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে।  

মণিপুরী তাঁতে কাপড় তৈরি করছেন এক তরুণী।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনতাঁতশিল্পী রানু সিংহ বলেন, ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্পল থেকে সুতো আনলে কাপড়গুলো অনেক উন্নতমানের হয়। কারণ ওই সুতোগুলো খুবই উন্নতমানের। তবে এতে করে খরচ বেড়ে যায়। ফলে বেশি দাম দিয়ে ক্রেতারা কাপড় ক্রয় করতে চায় না। তবে ভালো এবং বেশি টাকার অর্ডার পেলে আমরা ইম্পলের সুতো দিয়ে কাপড় তৈরি করে থাকি।  

রানুর মা সোনামুখী সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, মেয়ে ও আমি মিলেই একটি শাড়ি, বিছানার চাদর, ওড়না প্রভৃতি বুনন করি। দু’জনের একটা কাপড় বুনন শুরু করলে কাজটা দ্রুত শেষ হয়।  

বাংলাদেশের বাজারেরও সুতোর দাম ক্রমশ বাড়ছে, কিন্তু মান বাড়ছে না। আমাদের এই তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সুতোর দাম কমানো পাশাপাশি স্থানীয় ব্যাংকগুলোতে স্বল্পমূল্যে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে বলেও জানান তাঁতশিল্পী রানু সিংহ।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৯ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।