ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

খান জাহানের বসত ভিটা এখন গো-চারণ ভূমি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৯
খান জাহানের বসত ভিটা এখন গো-চারণ ভূমি খান জাহানের বসতভিটার নাম ফলক ও গরু ঘাস খাচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: বাগেরহাট দেশের অন্যতম প্রাচীন শহর। এ শহরের রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি। বাগেরহাট শহরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরিকল্পিত নগর গড়ে ওঠার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে ইসলামী শাসক ও আধ্যাত্মিক পীর খান জাহান আলীর (রহ.) নাম। 

তার নির্মিত ইসলামী স্থাপত্য রীতির মসজিদগুলোর জন্যই ১৯৮৫ সালে বাগেরহাটকে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ঘোষণা করে ৩২১তম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। এর মধ্যে বাগেরহাটের ১৭টি স্থাপনাকে তালিকাভুক্ত করা হয়।

 

এগুলো হলো- বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ, বিবি বেগুনি মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, দশ গম্বুজ মসজিদ, রণ বিজয়পুর মসজিদ, রেজা খোদা মসজিদ, সিংগাইর মসজিদ, খান জাহান আলী (রহ.) এর সমাধি, এক গম্বুজ মসজিদ, পীর আলী তাহেরের সমাধি, জিন্দা পীরের মসজিদ, জিন্দা পীরের সমাধি, সাবেক ডাঙ্গা প্রার্থনা কক্ষ, দশ গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলী (রহ.)-এর বসত ভিটা, বড় আদিনা ডিবি, খান জাহানের তৈরি প্রাচীন রাস্তা।

ষাটগম্বুজ মসজিদের ২৫০ মিটার উত্তরে ৯ দশমিক ৬৭ একর জায়গা নিয়ে খান জাহান আলী (রহ)-এর বসত ভিটা। সংরক্ষণের অভাবে এ ভিটা-ই এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

সরেজমিন দেখা যায়, খান জাহানের বসতবাড়ির স্থানে গরু বিচরণ করছে। একপাশে স্থানীয় কয়েকটি কিশোর ক্রিকেট খেলছে। উঁচু ঢিবি কেটে মাটি নিয়ে গেছে স্থানীয়রা। বসতবাড়ির ইট নিয়ে বাড়িতে ব্যবহার করছে অনেকে। কিছু খেজুর ও মেহগনি গাছও জন্মেছে স্থানটিতে। একটি বিদ্যুতের পিলারও স্থাপন করা হয়েছে ওই জায়গার মধ্যে। সব মিলিয়ে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ খান জাহানের বসতভিটা এখন পতিত জমিতে পরিণত হয়েছে। যে যার মত যত্রতত্র ব্যবহার করছে। এমন অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে জায়গাটিকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে সচেতন নাগরিকরা।

খান জাহানের বসতভিটা।  ছবি: বাংলানিউজবেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোল্লা মাসুদুল হক বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ খান জাহানের বসতভিটা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খননের মাধ্যমে যেটুকু দৃশ্যমান করেছে, তাও সংরক্ষণের অভাবে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।

খানজাহান ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ খানজাহানের বসতভিটা দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত রয়েছে। ফলে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বসতভিটার ইট ও মাটি খুঁড়ে নিচ্ছে এবং যত্রতত্র জায়গাটিকে ব্যবহার করছে। যত দ্রুত সম্ভব জায়গাটিকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, তা না হলে খানজাহানের বসতভিটার চিহ্ন হারিয়ে যাবে।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইউনেস্কো শুধু ষাটগম্বুজকে নিয়ে বাগেরহাটকে মসজিদের শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যান্য সব মনুমেন্ট বা স্থাপত্য নিয়েই মসজিদের শহর হয়েছে বাগেরহাট। তাই সব স্থাপনা সংরক্ষণ করে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার মান রক্ষা খুবই জরুরি। সেটা না হলে তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটের প্রত্মতত্ত্ব সম্পদের ওপর আরও জরিপ, অনুসন্ধান ও খনন করে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদকে সমৃদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।

খান জাহানের বসতভিটায় ক্রিকেট খেলছে শিশু-কিশোররা।  ছবি: বাংলানিউজষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আকতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, অনেকগুলো নিদর্শন রয়েছে বাগেরহাটে। পর্যটকরা এসে ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণ ছাড়া অন্য নিদর্শনগুলোও ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকায় পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। খান জাহানের বসতভিটাসহ সব স্থাপনাকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার দাবি জানান তিনি।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান গোলাম ফেরদাউস বলেন, শুধু বাগেরহাটে নয় পুরো প্রত্বতত্ত্ব অধিদপ্তরেই জনবল সংকট রয়েছে। ফলে পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের ১৭টি নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে শুধু একটি সাইটে জনবল রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাগেরহাট প্রত্বতত্ত্ব অধিদপ্তরে ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এটা দিয়ে ষাটগম্বুজকে রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যটকদের সেবা দিতেই হিমশিম খেতে হয়। ফলে অন্য নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ ও দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্গানোগ্রাম সংশোধন করে জনবল বৃদ্ধি করতে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বলেন এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ  সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।