ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

সাতক্ষীরা শত্রুমুক্ত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৯
সাতক্ষীরা শত্রুমুক্ত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর

সাতক্ষীরা: আজ ঐতিহাসিক ৭ ডিসেম্বর, গৌরবোজ্জ্বল সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিন শত্রুমুক্ত হয়েছিল সাতক্ষীরা। গৌরবগাথা এই দিনটির কথা মুক্তিকামী সাতক্ষীরাবাসীর স্মৃতিতে আজও অম্লান। দিনটি ঘিরে ৭ ডিসেম্বর (শনিবার) বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘ নয় মাস পর ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতেই পালাতে শুরু করে পাকবাহিনী। পরদিন প্রত্যুষে রাজাকার আলবদর বাহিনী তাদের অস্ত্র ও মালামাল ফেলে প্রাণ বাচাতে স্ব-স্ব ক্যাম্প থেকে পালাতে থাকে।

৭ ডিসেম্বর ভোরেই মুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। এর আগে ১৯ ও ২০ নভেম্বর মুক্ত হয় শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ। সেখান থেকে পিছু হটে পাকবাহিনী। পরে পাকবাহিনী পারুলিয়া ব্রিজের কাছে প্রতিরোধ করেও ব্যর্থ হয়ে পিছু হটে।

তিনি জানান, ১৬টি মুখোমুখি ও খ- যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুক্ত হয় সাতক্ষীরা। লে. বেগ, ক্যাপ্টেন হুদা, লে. আরেফিন, মেজর জলিলের বাহিনী সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৭ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংবাদ বাহক সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের ছাকুর কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে মাটিয়াডাঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৭ জনের গ্রুপ পুরাতন সাতক্ষীরা হয়ে সাতক্ষীরা আদালত চত্বরে পৌঁছায়। এ গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুল মহিত খান চৌধুলী দুলু। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন আবু নাছিম ময়না। এ গ্রুপে ছিলেন বদরুল, জাহিদ, সাদেক, আবু নাছিম ময়না, আব্দুর রশিদ, আজি, মাহবুব, গফুরসহ অনেকে। মাটিয়াডাঙ্গা ক্যাম্পের মোস্তাফিজ, জজ, মঈদ খানসহ মুজিব বাহিনীর এ দলটি পরে চলে যান খুলনার কপিলমুনি যুদ্ধে। শহরের পশ্চিম দিক থেকে আট নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ ও ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে সোনা, আব্দুল্লাহ, রফিক, মান্নান শহরে প্রবেশ করে যশোরের মনিরামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হাসানুল ইসলাম জানান, প্লাটুন কমান্ডার নাজমুলের নেতৃত্বে আখড়াখোলার রায়পুর থেকে মিজান, রশিদ, কাদের, দিলীপ, হাসান, মোর্জতা, আব্দার, নজরুলের গ্রুপটি সকাল ১০টায় সাতক্ষীরায় পৌঁছায়। মুজিব বানিহীর উপ-অঞ্চল প্রধান কাজী রিয়াজের নেতৃত্বে আনোয়ার, লিয়াকত, শাহাবুদ্দিন, সরোয়ার, আব্দুর রশিদের দল সরাসরি বিনেরপোতায় যায়। এদিকে এফএফ বাহিনীর প্রধান স ম আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধার দল কপিলমুনি যুদ্ধে যোগ দেন। গেরিলা কমান্ডের পদ্মা গ্রুপের প্রধান সুভাষ সরকারের নেতৃত্বে অতুল, সুশীল, বক্কার, কার্তিক, রমেশের দলটি মাগুরা যুদ্ধ শেষ করে কপিলমুনি পৌঁছায়। লে. (অব) রহমতুল্লা দাদু বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে পাইকগাছা হাতিয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করে যুদ্ধ করেন কোকিল, আলফাজ, শফি, বজলু, মুজিবর ও গফ্ফার। দীর্ঘ নয় মাসে পাক সেনাদের সঙ্গে সাতক্ষীরা অঞ্চলে যেসব যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলো- তার মধ্যে টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, ভোমরা যুদ্ধ, কাকডাঙ্গা যুদ্ধ, বসন্তপুর যুদ্ধ ও বেলেডাঙ্গা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।

তিনি আরও জানান, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে সাতক্ষীরার যেসব তরুণ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে শামছুজ্জোহা খান কাজল, নাজমুল আরেফিন খোকন, কমান্ডো সিরাজুল ইসলাম, নারায়ন চন্দ্র ধর, আবুল কালাম আজাদ, জোলযার, হারুনার রশিদ, আনছার আলী, মোজাম্মেল হক, আমিন উদ্দিন গাজী, রফিকুল ইসলাম, আজিজার রহমান, আবু বক্কর গাজী, হাফিজ উদ্দিন, এনামুল হক, আবুল কাশেম, সলিল কুমার, আব্দুল আজিজ, কমান্ডো আব্দুল কাদের, নায়েক সফি চৌধুরী অন্যতম।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।