ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

৭১ একটি চেতনা, তার প্রকাশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
৭১ একটি চেতনা, তার প্রকাশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

ঢাকা: ৭১ একটি চেতনা, একটি আবেগ, একটি টান। তারই বহিঃপ্রকাশই যেন আজকের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে এমনটাই বলছিলেন দর্শনার্থী শাহরিয়ার রাফি।

সত্যিই যেন তাই।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রায় দুই বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের এই জাদুঘরটি যেন আমাদের স্মৃতি, সত্তা, আবেগ আর টানের সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা, প্রকাশনা, ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী, তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো, মৌখিক ইতিহাস সংগ্রহসহ বহুমুখী কার্যক্রমে সম্প্রসারিত এ জাদুঘর। এমনটিই জানান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।

মুক্তিযুদ্ধের স্মারক প্রদর্শনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটিতে রয়েছে চারটি গ্যালারি। ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় গ্যালারিগুলোতে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রত্ননিদর্শন। রয়েছে আলো আধারির খেলাও।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর। র‌্যাম্প পেরিয়ে জাদুঘরের প্রথম গ্যালারিতে ঢুকলেই দেখা যায় প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এ জনপদের প্রতিনিধিত্বমূলক বিভন্ন প্রত্ননিদর্শন। এর মধ্যে বিভিন্ন পাথর, শিলাখণ্ড, নেতাজি সুভাস চন্দ্রের হাতের লেখা, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত উল্লেখযোগ্য।

দ্বিতীয় গ্যালারি সাজানো হয়েছে ২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বর্বরতা তুলে ধরে। এছাড়া স্বাধীনতার ঘোষণা, ৪ এপ্রিল কুষ্টিয়ার যুদ্ধ ও সারা দেশের গণহত্যার নিদর্শন রয়েছে এ গ্যালারিতে। আছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। আর রয়েছে ১ জানুয়ারি ১৯৭১ সাল থেকে ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংগ্রহ। শব্দ ও আলোর প্রক্ষেপণের বিশেষ প্রদর্শনীর এ গ্যালারি আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগের।

মুক্তিযুদ্ধের স্মারক প্রদর্শনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে চারটি গ্যালারি।

পঞ্চম তলায় রয়েছে তৃতীয় গ্যালারি। নাম- আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র। এ গ্যালারিতে রয়েছে ১ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব স্মৃতি। এরমধ্যে উদ্বাস্তুদের জীবনযাপন, তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও যুদ্ধের বিভিন্ন প্রশিক্ষণকে সামনে আনা হয়েছে আলোকচিত্রের মধ্য দিয়ে। এছাড়া শরণার্থীদের ব্যাগ, কম্বল, যুদ্ধের সার্টিফিকেটসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ উপলক্ষে তৈরি বিভিন্ন পোস্টার, শহীদদের ব্যবহৃত সামগ্রী ও আন্তর্জাতিক সমর্থনকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে।

চতুর্থ গ্যালারির নাম আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ। এ গ্যালারিতে ‘বিলোনিয়া যুদ্ধের মডেল’ ব্যবহার করে দর্শকদের দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের স্বাদ। এখানে ঠাঁই পেয়েছে চিথলিয়া রেল স্টেশনে যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ। আছে ৭১ এর যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মেশিন গান, নারী নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত এ্যাশট্রে, কলম, চশমা, যুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নানা কার্যক্রম, দগ্ধ ঘরবাড়ির অংশসহ পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের চিত্র।

গ্যালারিগুলোতে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রত্ননিদর্শন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ইতিহাস সমৃদ্ধ চারটি গ্যালারি যেন জাতির গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার অন্যতম একটি মাধ্যম। একইসঙ্গে এ ইতিহাস সবসময় প্রেরণা সঞ্চার করে বিকশিত একটি সমাজ গঠনের। এমনটাই মত গুণীজনদের। সত্যিই তাই। এ মতের সত্যতা মিললো মণিপুর স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফা সানজিদা রিমের কথায়। বাবার সঙ্গে পুরো জাদুঘর ঘুরে, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পেরে ভীষণ আনন্দিত সে।

কথা হলে রিমা বলে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে অনেক কিছু জানতে পারলাম। অনেক কিছু শেখা হলো। যারা যুদ্ধ-সংগ্রাম করে আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাদের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা বেড়েছে। আমিও যেন এই দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি, এই প্রত্যাশা।

সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সোম থেকে শনি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আর ২০ টাকা প্রবেশ মূল্যে এ জাদুঘর যেকোনো দর্শনার্থীকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
এইচএমএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।