ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

বিলুপ্তির পথে গ্রাম অঞ্চলের জনপ্রিয় বিয়ের গীত 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০
বিলুপ্তির পথে গ্রাম অঞ্চলের জনপ্রিয় বিয়ের গীত 

ঠাকুরগাঁও: শত শত বছরের বাংলার রূপ, লাবণ্য, বৈশিষ্ট্য কালক্রমে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। হাজার বছরের লালিত বাংলার জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্র বদলে যাচ্ছে।

বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য বিয়ের গীত। দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এখনও বিয়ের গীতের প্রচলন রয়েছে।

তবে কালক্রমে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্য বিয়ের গীত।

ঠাকুরগাঁও বীরগঞ্জ দুই থানার মাঝামাঝি দামাই ক্ষেত্র গ্রামের সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এখনো বিয়ে বাড়িতে বিয়ে বাড়ির গীতের এর প্রচলন রয়েছে। নারী, বৃদ্ধসহ সবাই মিলে একসাথে দলবদ্ধ হয়ে বিয়ের একদিন দুই দিন আগে গীত গাওয়া শুরু করেন।

মেয়ের পক্ষ থেকে মেয়েকে বিদায় দেওয়া পর্যন্ত মেয়ের বাড়িতে গীত গাওয়ানো চলে। পাত্র পক্ষের বাড়িতে পত্রের গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে পরেরদিন বৌভাত পর্যন্ত বিয়ের গীত চলে।

পাত্রর বাড়িতে পাত্রীকে নিয়ে আসে পরের দিন ছেলে, মেয়ে, বৃদ্ধ, নারীসহ অনেকে বিয়ের গীতে ও রং মাখা কালি-মাখা সহ নাচ-গান করে আনন্দে মেতে ওঠেন। এইসব গ্রামীণ ঐতিহ্য একসময়কার জনপ্রিয় বিয়ের গীত এখন বিলুপ্তির পথে।

আধুনিকতার কারণে এখন আর এইসব বিয়ের গীত ও বর কনে খেলা এখন আর চোখে না পড়ার মতো। কারণ আধুনিকতার কারণেই মানুষ এখন আর আগের মতই করে গায়ে হলুদ গ্রামের গীত গায়না। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার আধুনিক উন্নত ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়া মানুষ এখন গ্রামীণ প্রচলন কে ভুলে যাচ্ছে। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের বিয়ের গীত। তবে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় দিনাজপুর সহ কিছু কিছু জেলা বা এলাকায় এখনো প্রচলন রয়েছে বিয়ের গীত ও বর কনে খেলা।

কোলে বিয়ে করে নিয়ে আসে পরেরদিন বরের বাড়িতে সকালবেলা বরকনে খেলা ও বিয়ের গীত গায় এলাকার স্থানীয় নারীরা। এসময় বিভিন্ন রঙের গান গেয়ে গীত তোলেন নারীরা। "কদুর কুশি আমার খুশি তেলবাজি জাও ওকি ও ও" এইসব বিভিন্ন বিয়ের গীত গেয়ে আনন্দ করেন স্থানীয় নারী-পুরুষ সহ সকলে।

দিনাজপুর জেলার খানসামা থানার সহজপুর গ্রাম থেকে আসা সৈয়দ সালেহ আহমেদ জানান, আমি আমার বউয়ের বড় ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছি। বিয়ের একদিন আগে গায়ে হলুদ দেওয়া হয়। গায়ে হলুদের দিন বরকে যখন গায়ে হলুদ দেয় তখন স্থানীয় নারীরা বিভিন্ন রং এর বিয়ের গীত গায়। এবং পরের দিন বিদায় নিয়ে আসার পর বর পক্ষের বাড়িতে সকালবেলা আবারো শুরু হয় বিয়ের গীত। বিয়ের গীত শেষে দুপুর বেলায় শুরু হয় রং মাখামাখি সহ বিভিন্ন ধরনের খেলা।

ঠাকুরগাঁও থেকে আসা বরের ভগ্নিপতি শরিফুল ইসলাম জানান, কনে কে বরের বাড়িতে বিদায় নিয়ে আসার পর শুরু হয় বিয়ের গীত। চলে বৌভাতের দিন দুপুর পর্যন্ত এবং কি বর কনে কে একসাথে এক চাদরে বেঁধে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলে এবং কনেকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করান। গোয়াল ঘরের গোবর ফেলা, জমি বাড়ি থেকে মাটি আনা, সবজি ক্ষেত থেকে শাকসবজি টেনে আসা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের নতুন খেলা কনেকে নিয়ে খেলে স্থানীয় নারীরা। মহিলারা পুরুষ সেজে বিভিন্ন ধরনের খেলায় অভিনয় করেন। এসব খেলার অভিনয় শেষে সবাই মিলে একসাথে ভাবি ,দেবর, ভগ্নিপতি, দাদী ভাই বোন স্বামী স্ত্রী সহ অনেকে রং মাখামাখি খেলা খেলেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৮০ বছরের বৃদ্ধ রশিদুল ইসলাম জানান, এক সময় গ্রাম অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হত, তখন গ্রামের নারীরা বিয়ের আগের দিন থেকে বিয়ের পরের দিন পর্যন্ত বিয়ের গীত গাইত। এখন দিন আধুনিক হওয়ার কারণে এইসব বিয়ের গীত ও রঙ খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। নিত্য নতুন আধুনিক হওয়ার কারণে সমাজ পরিবর্তন হওয়ার কারণে মানুষ এখন বিয়ের অনুষ্ঠানে ভিডিও ধারণ করে রাখেন এবং সাউন্ড বক্স দিয়ে দিনরাত গান বাজান। তবে আমাদের সমাজে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিয়ের গীত কি জিনিস এই সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকবে না। তারা শুধু বাবা মা দাদা দাদির কাছে গল্প শুনে যাবে বিয়ের গীদের এর কথা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমি শুনেছিলাম গ্রাম অঞ্চলে এক সময় এইসব বিয়ের গীত এর প্রচলন ছিল। এখনো রয়েছে কিছু কিছু জেলা বা গ্রাম অঞ্চলে। কালের পরিবর্তনে আধুনিকতার কারণেই এখন তা হারিয়ে যেতে বসেছে এইসব বিয়ের গীত।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।