ঢাকা: ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাস। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে পা রাখেন লন্ডনের মাটিতে।
৮ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। সেখানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। হোটেল ক্লারিজে একটি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলা শেষে ওইদিন বিকেল ৫টায় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্র্ড হিথ-এর আমন্ত্রণে এক বৈঠকে মিলিত হন মহান এই নেতা। সেখানে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং সব প্রটোকল ভঙ্গ করে নিজ হাতে বঙ্গবন্ধুর গাড়ির দরজা খুলে দেন, যে ঘটনার নজির ইতিহাসে বিরল। সে সময়ে এ ঘটনা আন্তজার্তিক গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়। আর এমনই বিরল কিছু ঘটনার কিছু আলোকচিত্র এবং পেপারক্লিপ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শুরু হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
সিঁড়ি বেয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে উঠতেই চোখে পড়বে জাদুঘরের উন্মুক্ত লবিতে ঠাঁই করে নেওয়া এই বিশেষ প্রদশর্নী। পঞ্চাশ বছর পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যেন এই প্রদর্শনীর ছবিগুলোর ক্যানভাসে আবারো সজীব হয়ে উঠেছে। ২৫ মার্চ রাতে পাক সামরিক বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর আটক, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্ববাসীর তৎপরতা, প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত তথ্যাবলী দিয়ে সাজানো হয়েছে এই আয়োজন।
শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের লবিতে আয়োজিত মাসব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মতিয়া চৌধুরী। এ সময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যারা সাংবাদিকতা করছেন তাদের এ সাংবাদিকতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ও ত্যাগের কথা বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশই জানে না। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে সম্পৃক্ত রেখে এ কাজটি করলে তা আরও কার্যকরী হবে। ’
ডা. সারওয়ার আলী বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হলেও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তা পূর্ণতা পায়নি। তাকে মুক্তি দেওয়ার আগেও হত্যা করবার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি কনফেডারেশন গঠনের জন্যও সেসময় তাকে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিজের মুক্তি বা জীবন রক্ষার জন্য হলেও কোনো আপোস করেননি। কারাগারে থাকলেও পাকিস্তানের এসব প্রস্তাবের কারণে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ’
বিজয়ের স্বাদ উপলব্ধি করলেও যতক্ষণ না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আসেনি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্ণতা। তাইতো তৎকালীন সময়ে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন- ‘আমার আনন্দ, বঙ্গবন্ধু বিজয়ের বেশে ফিরেছেন’। সেই সংবাদের ক্লিপও ঠাঁই পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে। আরও রয়েছে লন্ডনের পরে দিল্লীতে বঙ্গবন্ধুর আগমন ও সেখানে জনগণের সামনে তার ভাষণের চিত্র।
এর আগে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর আটক, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্ববাসীর তৎপরতা এবং প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এ প্রদর্শনীর অন্যতম অংশ। রয়েছে ২৫ মার্চ কাল রাতে বঙ্গবন্ধুর আটকের ছবি এবং বিদেশি সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টের আলোকচিত্র। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন বাংলার মাটিতে পা রাখলেন, তাকে ঘিরে জনতার উল্লাস আর রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে জিপে করে রেসকোর্স ময়দানে যাওয়ার ঐতিহাসিক আবেগঘন মুহূর্তের আলোকচিত্রটিও বাদ যায়নি প্রদর্শনী থেকে। রয়েছে ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের আলোকচিত্রও।
এছাড়া প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে উদ্বেলিত ছিল বাংলার মানুষ। লাখো জনতার মহাসমুদ্র সেদিন স্বাগত জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান ছিল লোকে লোকারণ্য। বাহারী শিরোনাম আর বিশেষ ক্রোড়পত্র ও বিজ্ঞাপনে সংবাদপত্রগুলো ইতিহাসের মহানায়ককে সেদিন স্বাগত জানিয়েছিল। সেসব আলোকচিত্র ও সংবাদপত্রের ক্লিপিংসসহ ১৫টি আলোকচিত্র, ১৮টি ম্যাগাজিন ও পত্রিকার কপি এবং ১টি ডকুমেন্ট দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো প্রদর্শনী। আর এটি চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সোম থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী উম্মুক্ত থাকবে সবার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
এইচএমএস/এমআরএ