ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের ব্যাপকতা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের ব্যাপকতা সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করছেন বিশ্বজিত পাল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: বাঙালি সংস্কৃতির আত্মপরিচয়ের নাম মৃৎশিল্প। এক সময় মাটির তৈরি জিনিসপত্র সার্বজনীনভাবে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠে।

ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতির মধ্যে বিরাজ করে দীর্ঘ বছর আগে থেকেই তৈরি হয়ে আসছে মাটির নানান প্রতিমা। কিন্তু যুগ পাল্টেছে। মাটির ব্যবহার্য নানা সামগ্রীগুলোতে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সেখানে ঢুকে পড়েছে প্লাস্টিক।  

পরিবেশবিরোধী এই প্লাস্টিকের এমন কোনো জিনিস নেই যে মাটিকে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত জিনিসপত্রকে ভেঙে-চুরে সেখানে এগুলো প্রবেশ করেনি। সর্বগ্রাসী প্লাস্টিকের দাপটে আজ মৃৎশিল্প তার জনপ্রিয়তা মারাত্মকভাবে হারাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে উপকারিতাটুকু হারিয়ে ভয়াবহভাবে আজ হ্রাস পেয়েছে মৃৎশিল্পের ব্যাপকতা। এমন চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতেই চিরতরে হারিয়ে যাবে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টি এই মাটির জিনিসপত্রগুলো।  সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় মৃৎশিল্পী বিশ্বজিত পাল সে কথারই শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন।  

তিনি বলেন, ‘আমরা মতে যারা মাটির কাজ করে জীবকা নির্বাহী করেন তাদের যদি সরকারি-বেসরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা বা নানা উপায়ে সহযোগিতা না করা হয় তাহলে অনেকেই তাদের পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করে বিকল্প পেশায় চলে যাবেন। তখন চিরতরে হারিয়ে যাবে বাংলার গৌরব ওই মৃৎশিল্প’।  

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে প্রতিবছরের সরস্বতী মূর্তি তৈরি করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন বিশ্বজিত পাল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছোট থেকে বড় নানা আকৃতির সরস্বতী প্রতিমায় শোভা পাচ্ছে তার মৃৎপ্রাঙ্গণ।  

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার এখানে আকৃতি ও ডিজাইন অনুযায়ী ৮০০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মূর্তি রয়েছে। একেকটি মূর্তির উচ্চতা দুই ফুট থেকে আট ফুট। ছোট-বড় মূর্তি মিলিয়ে প্রায় ২শ ৫০টি মূর্তি তৈরি করেছি এবার।  

নিজের পেশা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর এলাকায়। বাবা গৌরাঙ্গ পালের কাছে আমার হাতে খড়ি। ১৯৮৪ সালে শ্রীমঙ্গলে আসি। তারপর এখানকার মানুষদের সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে এ এলাকাটির প্রতি ভালো লাগা সৃষ্টি হয়। প্রথমে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহে, তারপর সিলেটে। কিন্তু শ্রীমঙ্গলের মতো ভালো লাগা আরও কোনো এলাকাতেই হয়নি। তাই শিকড় গেড়েছি এখানে’। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ইমন দেব চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মৃৎশিল্পের টিকে থাকার কথা চিন্তা করে আমি মৃৎশিল্পী বিশ্বজিত পালকে আমার বাড়ির সীমানায় প্রতিমা তৈরির সুযোগ করে দিয়েছি। যাতে এই শিল্পটা সাশ্রয়মূল্যে এ অঞ্চলে তার নিজস্ব অস্তিত্বটুকু ধরে রাখার সুযোগ পেয়ে থাকে।   

তার পেশার সময়সীমা সম্পর্কে বিশ্বজিত বলেন, সারা বছরে আমি দুইবার প্রতিমার কাজ করি। একটা হলো দুর্গাপূজার তিন মাস আগে থেকে। আরেকটি হলো সরস্বতী পূজার দুই মাস আগে থেকে।  

সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে মাসে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার লভ্যাংশের থাকে বলে জানান ওই মৃৎশিল্পী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।