মূল: আন্তন চেখভ
অনুবাদ : মনজুর শামস
নববর্ষের ঠিক আগের দিনটি। এক ভূস্বামী ও জেনারেলের মেয়ে নেলি।
অস্তিত্বহীন, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এক লম্বা, অপ্রশস্ত বারান্দা- তাতে মোমবাতির অফুরান সারি; তার মুখের, হাতের, দেহ-কাঠামোর প্রতিফলন- এই সবকিছুই কুয়াশায় ঢাকা এক সীমাহীন ধূসর সাগরে মিশে গেছে। সাগরটি তরঙ্গক্ষুব্ধ, থেকে থেকে জ্বলে ওঠে এবং যখন-তখন টকটকে গাঢ় লাল আলো ছড়ায়।
নেলির স্থির দুটি চোখ এবং ফাঁক হয়ে থাকা ঠোঁট দেখে কারো পক্ষে বলা মুশকিল সে ঘুমিয়ে আছে, নাকি জেগে আছে; তা সত্ত্বেও সে কিন্তু দেখছিল! প্রথমে সে কারো চোখের কেবল হাসিটুকু এবং নম্র, রূপ-মনোহর অভিব্যক্তি দেখতে পেল, এরপর বদলে যেতে থাকা ধূসরের পটভূমিতে একটি মাথার রেখাচিত্র, একটি মুখ, ভুরু, দাড়ি ফুটে উঠল ধীরে ধীরে। এ সেইজন, সেই কাঙ্ক্ষিত পুরুষ- অনেকদিনের স্বপ্ন ও আশায় লালিত ধন। এই লালিত আকাঙ্ক্ষার মানুষটি ছিল নেলির সবকিছু৻ তার জীবনের সারকথা, ব্যক্তিগত সুখ, জীবনের গতি, নিয়তি- সব। তাকে বাদ দিলে ঐ আয়নার পশ্চাদ্ভূমির মতোই সবকিছু শূন্য, অর্থহীন। আর তাই এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো ব্যাপার নয় যে, সে তার সামনে সুদর্শন, মনকাড়া হাসিমাখা মুখটি দেখে পরম সুখে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছিল। এমনই মধুর স্বপ্নে বিভোর ছিল সে- যা কথায় বা কাগজে লিখে বোঝানো যায় না। এরপর সে তার গলার আওয়াজ শুনতে পেল। দেখতে পেল- সে তার সঙ্গে একই ছাদের নিচে বাস করছে, তার জীবন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে সেই সুদর্শন পুরুষের সঙ্গে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেটে গেল সেই ধূসর প্রেক্ষাপটে। এবং নেলি তার ভবিষ্যতের খুঁটিনাটি সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পেল।
ছবির পর ছবি ফুটে উঠতে থাকল ধূসর পশ্চাদ্ভূমিতে। নেলি এখন নিজেকে দেখতে পেল- এক শীতের রাতে জেলা-চিকিৎসক স্টেফেন লুকিচের দরজায় টোকা দিচ্ছে। গেটের পেছন থেকে বুড়ো কুকুরটি অলসভাবে ভাঙা গলায় বার কয়েক ঘেউ ঘেউ করল খ্যানখ্যানিয়ে। ডাক্তারের জানালাগুলো অন্ধকারে অদৃশ্য হয়েছিল। চারপাশের সবকিছু সুনশান নীরব।
‘ঈশ্বরের দোহাই, ঈশ্বরের দোহাই!’ ফিসফিসিয়ে বলল নেলি।
শেষমেশ বাগানের গেটটা ক্যাঁচম্যাঁচিয়ে উঠল এবং নেলি ডাক্তারের রাঁধুনিকে দেখতে পেল।
‘ডাক্তার কি বাড়িতে আছেন?’
‘হুজুর ঘুমাচ্ছেন’, জামার হাতা দিয়ে মুখ ঢেকে রাঁধুনি ফিসফিসিয়ে এমনভাবে বলল, যেন সে খুব ভয় পাচ্ছে- এই বুঝি সে তার মনিবের ঘুম ভাঙিয়ে ফেলল!
‘তিনি তার জ্বরের রোগীদের দেখে কেবলই বাড়ি ফিরেছেন, এবং হুকুম দিয়ে রেখেছেন তাকে যেন ঘুম থেকে জাগানো না হয়। ’
কিন্তু নেলি যেন রাঁধুনির কথা শুনতেই পেল না! রাঁধুনিকে এক ধাক্কিয়ে পাশে সরিয়ে মাথা বাড়িয়ে সে দ্রুত ঢুকে গেল ডাক্তারের বাড়িতে। কয়েকটি অন্ধকার এবং জিনিসপত্রে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি কক্ষের মাঝ দিয়ে দৌড়ে গিয়ে, দুই-তিনটি চেয়ার উল্টে ফেলে শেষমেশ সে ডাক্তারের শোবার ঘরে পৌঁছে গেল। পোশাক পরা অবস্থাতেই স্টেফান লুকিচ তার বিছানায় শুয়ে ছিল। অবশ্য শোয়ার আগে কোটটা খুলে রেখেছিল। ফোলানো ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে সে শ্বাস ফেলছিল খোলা হাতটার ওপর। একটি নাইট লাইট টিমটিমিয়ে ক্ষীণ আলো ছড়াচ্ছিল। মুখে কোনো শব্দ উচ্চারণ না করেই নেলি বসে পড়ল এবং কাঁদতে শুরু করল। ডুকরে ডুকরে ভীষণভাবে কাঁদল সে পুরো শরীর কাঁপিয়ে।
‘আমার স্বামী অসুস্থ!’ ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল সে। স্টেফান লুকিচ চুপ করে রইল। এরপর ধীরে ধীরে সে উঠে বসল। মাথার ভার রাখল হাতের ওপর, এবং ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ দুটি স্থির করল তার মেহমানের ওপর। ‘আমার স্বামী অসুস্থ!’ নেলি একই কথা বারবার বলতে থাকল এবং আবারো ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল। ‘দয়াময়ের দোহাই, জলদি আসুন। জলদি চলুন... জলদি চলুন!’
‘এহ্?’ হাতের ভেতর নাক ঝাড়তে ঝাড়তে গর্জে উঠল ডাক্তার।
‘চলুন! এক্ষুণি চলুন! না হলে... ওহ! ভাবতেই ভীষণ ভয়ঙ্কর লাগছে। দয়াময় ঈশ্বরের দোহাই, চলুন!’
বলতে বলতে পাংশুটে, ক্লান্ত নেলি হাঁপাতে লাগল এবং চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ডাক্তারের কাছে তার স্বামীর অসুস্থতা আর তার নিজের অবর্ণনীয় ভীতির বর্ণনা দিতে থাকল। তার এই ভোগান্তির কথা শুনে হয়তো একটা পাথরেরও মন গলে যেত, কিন্তু ডাক্তার তার দিকে কটমটিয়ে তাকালো, মেলে রাখা হাতের ভেতরে নাক ঝাড়ল, এবং- আর কোনো নড়াচড়া করল না।
‘আমি কাল আসব!’ বিড়বিড় করে সে বলল।
‘সেটা অসম্ভব!’ চিল্লিয়ে বলে উঠল নেলি। ‘আমি জানি আমার স্বামীর টাইফাস জ্বর হয়েছে! এক্ষুণি... এই মুহূর্তে আপনাকে দরকার!’
‘আমি... আরে... এইমাত্র আমি ফিরলাম’, বিড়বিড় করে বলল ডাক্তার। ‘তিনদিন ধরে আমি বাইরে, টাইফাসের রোগী দেখে বেড়াচ্ছি, এবং ভীষণ ক্লান্ত আমি, আর তা ছাড়া আমি নিজেও অসুস্থ... আমি স্রেফ পারব না! মোটেই পারব না! আমি নিজেই এখন ঐ রোগে ভুগছি! ঐ দেখুন!’
এবং তার সামনেই ডাক্তার তার বগলতলে একটি থার্মোমিটার ঠেলে ঢোকাল।
‘আমার শরীরের তাপমাত্রা প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট... আমি এক্কেবারেই পারব না। মোটে বসতেই পারছি না! ক্ষমা করবেন। আমি এখন শোব...’
ডাক্তার শুয়ে পড়ল।
‘কিন্তু আমি আপনার কাছে বিনীত মিনতি করছি ডাক্তার’, নাছোড়বান্দার মতো কেঁদে কেঁদে বলল নেলি। ‘আমি আপনাকে কাতর অনুরোধ করে বলছি! আমাকে সাহায্য করুন, করুণাময় ঈশ্বরের দোহাই! ভালোমতো একটু চেষ্টা করুন এবং আসুন! সম্মানির ব্যাপারে ভাববেন না। আমি আপনাকে পুষিয়ে দেব ডাক্তার!’
‘ওহ্, প্রিয় ভদ্রমহিলা!... কেন, আমি কি আপনাকে এরই মধ্যে জানিয়ে দিইনি? এহ্!’
নেলি এক লাফে উঠে দাঁড়াল এবং অসহায়ভাবে শোবার ঘরটার এ-মাথা থেকে ও-মাথা হাঁটাহাঁটি করতে শুরু করল। মনে মনে সে গুছিয়ে নিচ্ছিল ডাক্তারকে যেতে রাজি করানোর জন্য জোরালো যুক্তি তুলে ধরে সে কীভাবে বোঝাবে... সে ভেবে বের করল- যদি কোনোমতে ডাক্তারকে বোঝাতে সক্ষম হয় তার স্বামী তার কতটা প্রিয় এবং এখন সে তার স্বামীর অসুস্থতার জন্য কতটা কষ্ট পাচ্ছে তা হলে নিশ্চয়ই ডাক্তার তার ক্লান্তি এবং অসুস্থতার কথা ভুলে যাবে! কিন্তু কী করে এ ব্যাপারে সে খুব জোরালো যুক্তি তুলে ধরতে পারবে?’
‘জেমস্টভো ডাক্তারের কাছে যান’, সে স্টেফান লুকিচের গলা শুনতে পেল।
‘সেটা অসম্ভব! সে এখান থেকে কম করে হলেও বিশ মাইল দূরে থাকে, এবং সময় খুবই মূল্যবান। আর তা ছাড়া আমার ঘোড়াগুলোও সেই ধকল সইতে পারবে না। এরই মধ্যে আমাদের বাড়ি থেকে ৩০ মাইল ঠেঙিয়ে আপনার এখানে এসেছি এবং জেমস্টভো ডাক্তারের কাছে যেতে আবার প্রায় ততখানি পথই পাড়ি দিতে হবে। না, এটা অসম্ভব! আপনিই বরং আমার সঙ্গে আসুন স্টেফান লুকিচ। আমি আপনাকে বীরের মতো একটা কাজ করতে অনুরোধ করছি। আসুন, সেই বীরের কাজটাই এবার করে দেখান! আমাদের ওপর দয়া করুন!’
‘এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়... আমার জ্বর... আমার মাথা ঘুরছে... আর উনি ব্যাপারটা বুঝতেই পারছেন না! আমাকে একা থাকতে দিন তো!’
‘কিন্তু আপনি এখন ডিউটিতে, তাই যেতে বাধ্য! আপনি কিছুতেই যেতে আপত্তি করতে পারেন না! আমি আপনাকে আদালতের কাঠগড়ায় উঠিয়ে ছাড়ব। ’
নেলি বুঝতে পারল যে সে এক মিথ্যে ও অপ্রত্যাশিত অপমানজনক কথা উচ্চারণ করে ফেলেছে, কিন্তু তার স্বামীর স্বার্থে সে ওসব যুক্তি, কুশলী ভব্যতা, অন্যের প্রতি সহানুভূতি- এইসব ভদ্রতা ভুলে থাকতে পারল... তার এই হুমকির জবাবে ডাক্তার ভীষণ এক অস্থির আগ্রহে ঢকঢক করে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেয়ে নিল। নেলি এবার সবচেয়ে নিচুস্তরের ভিখিরির মতো কাকুতিমিনতি করতে থাকল... শেষমেশ ডাক্তার হাল ছেড়ে দিল। হাঁপাতে হাঁপাতে এবং রাগে গজরগজর করতে করতে ধীরে ধীরে সে উঠে দাঁড়াল, এদিক-সেদিক তাকিয়ে তার কোট খুঁজতে লাগল।
‘এই যে এখানে কোট!’ তাকে সাহায্য করতে করতে চিল্লিয়ে বলল নেলি। ‘দিন, আমাকে কোটটা পরিয়ে দিতে দিন আপনাকে। আসুন আমার সঙ্গে! আপনার এই কষ্টকে আমি পুষিয়ে পরিশোধ করে দেব... সারাজীবন আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব...’
কিন্তু কী যন্ত্রণা! কোটটা গায়ে চড়ানোর পর ডাক্তার আবারো শুয়ে পড়ল! নেলি তাকে টেনে তুলল এবং হলরুমে টেনে নিয়ে গেল। এরপর মহা যন্ত্রণার কাজ হলো তাকে ওভারকোট আর বর্ষায় জুতোর ওপর পরার জুতো জোড়া পরানো... তার টুপিটা তো কোথায় হারিয়েছে খুঁজেই পাওয়া গেল না... কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেলি ডাক্তারকে নিয়ে তার ঘোড়ার গাড়িটিতে উঠতে সক্ষম হলো। এখন কেবল তাদের ত্রিশ মাইল গাড়ি দাবড়ে যেতে হবে, এবং তার পরেই তার স্বামী একজন ডাক্তারের সাহায্য পাবে। অন্ধকারে ডুবে আছে পৃথিবী। এমনকি কেউ এখন তার মুখের সামনেও যদি নিজের হাত মেলে ধরে তো তা দেখতে পাবে না... শীতের ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। তাদের গাড়ির চাকার নিচে মাটির ঢেলাগুলো জমে শক্ত বরফ হয়ে আছে। গাড়োয়ানকে বারবার থেমে দেখে নিতে হচ্ছে কোন পথে যাবে।
পুরোটা রাস্তা নেলি ও ডাক্তার চুপচাপ বসে রইল। ভয়ানকভাবে ঝাঁকুনি লাগছে, কিন্তু শীতও অনুভব করতে পারছে না, ঝাঁকুনিও টের পাচ্ছে না।
‘যেতে থাকো, যেতে থাকো!’ নেলি গাড়োয়ানকে তাড়া দিল।
ভোর পাঁচটায় ক্লান্ত-শ্রান্ত ঘোড়াগুলো গাড়ি টেনে টেনে বাড়ির উঠোনে উঠতে পারল। নেলি তার পরিচিত গেটটা দেখতে পেল, দেখতে পেল কপিকল জুড়ে রাখা কুয়ো, আস্তাবল ও গোলাঘরগুলোর লম্বা সারিটিও। যাক, শেষমেশ তারা বাড়ি আসতে পেরেছে!
‘এক মিনিট অপেক্ষা করুন, আমি এক্ষুণি আবার সরাসরি এখানেই ফিরে আসছি,’ ডাইনিংরুমের সোফায় স্টেফান লুকিচকে বসিয়ে রেখে সে বলল। ‘শান্ত হয়ে বসুন, আমি ঝট করে একটু দেখে আসি তার অবস্থাটা এখন কেমন। ’
স্বামীকে দেখে ফিরে এসে নেলি দেখল ডাক্তার শুয়ে পড়েছে। সে সোফায় শুয়ে আছে এবং বিড়বিড় করে প্রলাপ বকছে।
‘ডাক্তার, প্লিজ!... ডাক্তার!’
‘এহ্? ডোমনাকে বলো!’ বিড়বিড় করে বলল স্টেফার লুকিচ।
‘কী?’
‘মিটিংয়ে তারা বলেছিল... ভ্লোসোভ বলেছিল... কে?... কী?’
এবং আতঙ্কিত হয়ে নেলি দেখতে পেল ডাক্তারও তার স্বামীর মতোই প্রলাপ বকছে। এখন কী করবে সে?
‘আমাকে অবশ্যই এখন জেমস্টভো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে’, সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল।
তারপর আবারো সেই অন্ধকারে পথ চলা। শরীর চিরে ঢুকে পড়া ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, শক্ত বরফ হওয়া মাটির ঢেলা... দেহ ও অন্তরাত্মা- সবখানেই তাকে ভোগান্তি সইতে হচ্ছিল, এবং এই প্রবঞ্চক প্রকৃতির কোনো লালিত্য নেই, এই ভোগান্তির ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো শঠতা নেই...
এরপর সে ধূসর পটভূমির সাপেক্ষে দেখতে পেল তার স্বামী প্রতিটি বসন্তে কত কষ্ট করে ব্যাংকের মর্টগেজের সুদের টাকা জোগাড় করছে। সে ঘুমাতে পারছিল না, ঘুমাতেই পারছিল না, এবং তারা দুজনেই মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত মাথা খাটাতেই থাকল কী করে আদালতের কেরানির সফরটা এড়ানো যায়।
সে তার বাচ্চাকাচ্চাকে দেখতে পেল : সর্দি লাগার চিরস্থায়ী আশঙ্কা, হাম-জ্বর, ডিপথেরিয়া, স্কুলে ব্যাডমার্ক, ছাড়াছাড়ি। এক পাল বাচ্চা-কাচ্চার ভেতর পাঁচটা বা ছয়টা তো মরবেই মরবে।
ঐ ধূসর পটভূমি মৃত্যুর ছোঁয়াহীন নয়। সত্যি বলতে কি, সেখানেও রয়েছে মৃত্যু। একজন স্বামী ও স্ত্রী একই সঙ্গে মরতে পারে না। ব্যাপারটা যেভাবেই ঘটুক, মানে স্ত্রীই আগে মরুক বা স্বামী- একজনকে অবশ্যই অন্যজনকে কবর দিতে হয়। আর নেলি এখন তার স্বামীকে মরতে দেখছে! এই ভয়ঙ্কর ব্যাপারটার প্রতিটি খুঁটিনাটি নিজেকে তার সামনে মেলে ধরছে। সে কফিন, মোমবাতি, পাদ্রি দেখল, এবং এমনকি যে কবর দেবে তার পায়ের ছাপ পর্যন্ত দেখল।
‘এটি কেন, এটি কিসের জন্য?’ ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে স্বামীর মুথের দিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞেস করল।
এবং তার স্বামীর সঙ্গে তার আগের গোটা জীবনটাকেই এর একটি বোকাটে মুখবন্ধ মনে হচ্ছে। নেলির হাত থেকে কিছু একটা পড়ে গেল এবং মেঝেতে আছড়ে পড়ল। সে লাফ দিয়ে উঠে পড়ল এবং বড় বড় চোখ করে তাকাল। দেখতে পেল একটি আয়না পড়ে আছে তার পায়ের কাছে। অন্য আয়নাটি আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে টেবিলের ওপর।
সে আয়নার ভেতর তাকাল এবং একটি পাংশুটে, কান্নাভেজা মুখ দেখতে পেল। এখন আর কোনো ধূসর পটভূমি নেই।
‘আমাকে এখন অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়তে হবে’, স্বস্তির একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে ভাবল।
মনজুর শামস: অনুবাদক, লেখক, সাবেক সাংবাদিক, বর্তমানে একটি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কর্মরত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
এমজেএফ/