ডাক্তারি পেশাটা এরকম হওয়ার কথা কিন্তু এ দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রুমার ছোট চাচার চিকিৎসার জন্য চাচা তার জমিজমা বিক্রি করে ঢাকা শহরের এক নামি হসপিটালে অনেক আশা নিয়ে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলেন।
রুমার চাচাত বোন যখন গ্রাম থেকে রুমাদের বাসায় বেড়াতে আসত, রুমার সঙ্গে কতোরকম খেলা খেলত, তারা একসঙ্গে রুপকথার বই পড়ত। একবার রুমার স্কুলে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় রুমা ‘বঙ্গবন্ধু’ সেজেছিল। ছোট্ট রুমা তার কণ্ঠ ভারী করে বললো, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। রুমার সেই অভিনয় দেখে স্কুলে সবাই খুব খুশি। সুন্দর অভিনয়ের জন্য রুমা সেবার প্রথম হলো। সেদিনের পর থেকে তার চাচাত বোন রুমাকে ‘ছোটবন্ধু’ বলে ডাকত। রুমাও খুব মজা পেত। ছোট্ট রুমা জানে তার বোন আর কোনোদিন আসবে না, তার সঙ্গে খেলা করতে, রূপকথার গল্প বলতে, তারা দুজনে আর কোনোদিন শিউলি ফুলের মালা পরবে না। রুমার বোনের মতো রূপকথার পরীগুলো যেনো ডাক্তারের অবহেলা আর ভুল চিকিৎসায় মারা না যায় তাই রুমা বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়, একজন ভালো মানুষ হতে চায়।
কাকরাইলের মোড়ে খুব যানজট। দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময় লোকাল বাস একটি ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়েছে। চারদিকে হট্টগোল, ভীষণ ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে একটি ছোট্ট বাচ্চার নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। একজন মহিলা পুলিশ বাচ্চাটির আইডি কার্ড দেখে তার নাম বোঝার চেষ্টা করছে। রক্তে ভেজা আইডি কার্ডের একপাশে ‘রুমা’ লেখা মনে হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের গড়ি চলে এসেছে। দ্রুত রিপোর্টটি অন এয়ারে দিতে হবে। মানবাধিকার সংস্থার একটি গাড়ি রং সাইড দিয়ে দ্রুত গতিতে স্পটে এসে থামলো। একজন কর্মকর্তা গোছের লোক গাড়ি থেকে নেমে এই দৃশ্য দেখে হায় হায় করে উঠলো। কর্মকর্তা গোছের লোকটি অস্থির হয়ে গেলো রুমাকে ঢাকার জন্য। কোনোকিছু না পেয়ে রাস্তার ধারে ‘ট্রাফিক সপ্তাহ’র একটি বিশাল ব্যানার খুলে এনে রুমাকে ঢেকে দেওয়া হলো। একটু একটু করে ভিড় কমতে থাকলো, কেউ একজন বললো, মেয়েটার বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়েছে কিনা? রাস্তার ধারে বসা এক পাগল বিড় বিড় করে কী যেনো বললো, বোঝা গেলো না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
এসএনএস