ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

গল্প

হৃদয়ে প্রেমের স্মৃতি | মাসুদুর রহমান মান্না

গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
হৃদয়ে প্রেমের স্মৃতি | মাসুদুর রহমান মান্না মাসুদুর রহমান মান্না

তোমার মনে পড়ে? স্কুলে পড়ি তখন, আমি যখন বাসার সামনের মাঠে সাইকেল চালানো শিখতাম, তুমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে, দেখতে আমায়। বসে বসে গুনতে আমি কতবার পড়ে গেলাম।

হ্যাঁ, খুব মনে আছে, উত্তর দেয় জেরিন। একবার তুমি সাইকেল চালাতে চালাতে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে ঢুকে গেলে সাইকেল নিয়ে।

ইশ, খুব ব্যথা পেয়েছিলে সেবার। ২১ দিন প্লাস্টার করা ছিল তোমার হাত। খুব রাগ হয়েছিল তোমার ওপর। মনে হয়েছিল ওই ভাঙ্গা হাতে লাঠি দিয়ে দুটো বাড়ি মেরে আসি। আমি ভেবেই পাই না সাইকেলে ব্রেক আছে, হ্যান্ডেল আছে, সেগুলো দিয়ে তুমি কি করছিলে?

ফাহাদের উত্তেজিত উত্তর, আরে বাবা, তখন তো কেবল চালানো শিখছিলাম। আর প্রথম প্রথম এসব রপ্ত হতে সময় লাগে! সামনে যখন কিছু চলে আসে তখন কী করব ভাবতে ভাবতেই সময় চলে যায়। ব্রেক চেপে ধরা, হ্যান্ডেল ঘোরানোর কথা ভুলে যেতাম। কেন তোমার মনে নেই? কলেজে উঠে যখন বাইক চালানো শিখতাম, একবার পাশের বিল্ডিংয়ের শম্পার গায়ে ধাক্কা লাগিয়ে দিলাম পেছন থেকে। আমি ওকে চিৎকার করে ডেকে বলছিলাম সামনে থেকে সরে যেতে। কিন্তু আমার হাত পা যেন আটকে গিয়েছিল, ব্রেকও ধরতে ভুলে গেছিলাম। বিচার এসেছিল বাসায়, কী যে বকা খেয়েছিলাম বাবার কাছে। হৃদয়ে প্রেমের স্মৃতিসে তো তুমি ইচ্ছে করে করেছিলে। লাইন মারতে তুমি শম্পা আপুর সাথে। আপুদের বাসার সামনের দেয়ালে চকখড়ি দিয়ে বড়বড় করে লিখে দিয়েছিলে- শম্পা+ফাহাদ। সেই থেকে আপু আর তোমাকে দু’চোখে দেখতে পারত না। তা না হলে তো এতদিন তার পেছনেই পড়ে থাকতে। তোমাকে তো মানুষ বানিয়েছি আমি।

ধুর, কী যে বল! লাইন মারতাম না, একটু ইয়ার্কি করতাম এই যা। তাছাড়া তখন তো তুমি ‘তুমি’ ছিলে না, ছিলে ‘তুই’। ছোট্ট মেয়েটি ছিলে। স্কুলের গণ্ডিও পেরোওনি। তোমাকে নিয়ে সেসব মাথায় আসেনি কখনও। আর তাছাড়া আমার কখনো ইচ্ছেও ছিল না প্রেম করার।

খোঁটা দেয়ার সুরে জেরিন বলে, ও, তাই! কে এসে আমার কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো? রোজ আমার বকা না খেলে পেটের ভাত হজম হতো না তোমার। আমি জোর করে প্রেম করিয়েছি তোমাকে?

গলাটা নামিয়ে ফাহাদ উত্তর দেয়, হ্যাঁ, করিয়েছই তো। আমাকে এতটাই ভালবাসলে যে, আমি তোমাকে ভাল না বেসে পারলামই না!

ওয়েটার এলো অর্ডার করা ফুড নিয়ে।

ফাহাদ জিগ্যেস করে আচ্ছা, কতদিন পরে এলাম এই রেস্টুরেন্টে বলতো?

অনেকদিন। তা প্রায় সাত-আট বছর হবে। লম্বা সময়। আমার খুব মনে পড়ে, প্রথমবার যখন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলে সেদিন আমার জন্মদিন ছিল। কি এলাহি কাণ্ডই না করেছিলে তুমি! রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ান আমাকে উইশ করল। আমরা অবাক হয়ে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকালাম। ভাবলাম কাকতালীয় হবে হয়তো। কিন্তু একে একে ওয়েটার, স্টাফ সবাই আমাকে উইশ করছিল। মিউজিক সিস্টেমে জন্মদিনের গান বাজছিল। সমস্ত রেস্টুরেন্ট ছিল বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো। দেখেই মনে হচ্ছিল কোনো উৎসব। আর তুমিও এমন ভান করছিলে যেন তুমি কিছুই জানো না। একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাবু এসে আমাকে ফুল দিয়ে উইশ করল। আমি এতটাই অবাক হয়েছিলাম যে খুশিতে কেঁদেই ফেললাম। আমার সবচেয়ে প্রিয় জন্মদিন ছিল সেটা।

ছিল!!! এখন নেই? খেদ নিয়ে বললো ফাহাদ।

কীভাবে থাকবে বলো! যখন আমার ছেলেটা একটা পেইন্টিং করে আমাকে দিয়ে বলে, আম্মু, এটা তোমার জন্মদিনের উপহার। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আর মায়াভরা আকর্ষণীয় উপহার মনে হয় সেটা আমার কাছে।

হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে যায় ফাহাদ। চুপচাপ কেটে যায় কিছুটা সময়। পকেট থেকে একটা কয়েন বের করে পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী আঙ্গুলের ফাঁকে ঘোরাতে থাকে। জেরিন বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। কিছু একটা নিয়ে গম্ভীর হয়ে গেছে ফাহাদ। অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। ফাহাদের এ আচরণ জেরিনের পরিচিত। জেরিনও কিছু বলল না। অপেক্ষা করল। মিনিট দুয়েক বাদে ফাহাদই স্বাভাবিকভাবে জিগ্যেস করল জেরিনকে, আমি আর তুমি একটা ছোট মেয়েকে রাস্তায় পেয়েছিলাম মনে আছে?

হ্যাঁ, মনে আছে। মেয়েটি হারিয়ে গিয়েছিল। তাকে নিয়ে তোমার যে কী কাণ্ড! মেয়েটার বাবা টাকার অভাবে ওর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ফুল বিক্রি করতে পাঠাতো রাস্তায় রাস্তায়, সিগনালে সিগনালে। সেবার রাস্তা ভুল করে হারিয়ে গিয়েছিল মেয়েটি। ওকে তুমি স্কুলের ড্রেস কিনে দিলে। আবার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে বই-খাতা কিনে দিলে। স্কুলের বেতনের টাকা দিয়ে দিলে ওর বাবা-মায়ের হাতে। আর বলে এলে, ওকে যদি আর কখনো রাস্তায় ফুল বিক্রি করতে দেখো তাহলে ওদের পুলিশে ধরিয়ে দেবে।

কে জানে কেমন আছে ও,  কি যেন নাম ছিল মেয়েটার?

জরি। ওর নাম ছিল জরি। ভাল আছে। চাকরি করে। বিয়েও করেছে। তুমি আমাকে জেরি বলে ডাকতে। আমার নামের সাথে মিল ছিল বলেই তুমি খুব যত্ন করে এতকিছু করেছিলে। আর এখন নামটাই ভুলে গেছ!


ফাহাদ অবাক হয়ে জিগ্যেস করে তুমি খবর রেখেছ সব!!! কই আমাকে তো বলোনি একবারও।

বলেই চুপ হয়ে যায় ফাহাদ। সে বুঝতে পারে প্রশ্নটা করা ঠিক হয়নি।

ফাহাদ তুমি চলে যাবার পর আমার জীবনে যা কিছু হয়েছে তার কোনো কিছুর সম্পর্কেই তুমি কিছু জানো না। জানার কথাও না। তাহলে জরির কথা কিভাবে জানবে বলো?  আমি সম্পর্ককে মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করি। একটি সম্পর্ককে মাঝপথে ছেড়ে যেতে শিখিনি। অন্তত আমার তরফ থেকে সবসময়ই সে চেষ্টাটুকু থাকে। আর সেজন্যই জরির খোঁজখবর আমি এখনও রাখি। যথাসাধ্য চেষ্টা করি ওকে সাহায্য করতে। জরিও আমার ভালবাসার প্রত্যুত্তরে ভালবেসে সম্পর্ক রেখেছে। অনেকেই তা করে না।

ফাহাদ বুঝল অভিযোগটা তার ব্যাপারেই ছিল। তবু কিছু বলল না। আর বলবেই বা কি! অভিযোগটা তো সত্য। ও তো চলেই গিয়েছিল। জেরিনের ঝরে পড়া অভিমান বয়ে যেতে দিতে চাইল ফাহাদ। এত বছরের জমে থাকা অভিমান কিছুটাও যদি কমে।

খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে হয়েও রাগ ধরে রাখতে পারছে না জেরিন, তোমার কাছে ক্যারিয়ার, অর্থ, সফলতা এগুলোই সব? ভালবাসা, বন্ধন, প্রতিশ্রুতি এসবের কোনও মূল্য নেই? সুখ, আনন্দ, নির্মলতা এগুলোর অর্থ বোঝো তুমি? কাড়িকাড়ি টাকা থাকলেই মানুষ সুখী হয়ে যায়? জীবনে সফলতা এলেই মানুষ পৃথিবী’র সবচেয়ে সুখী ব্যাক্তিটি হয়ে যায়? আরামে থাকা আর সুখে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। অনেক অর্থ, সফলতা থাকলে হয়তো আরামে থাকা যায়। তার সাথে সুখে থাকার কোনও সম্পর্ক নেই। আরামে থাকা মানুষটিও অসুখী হতে পারে। আবার খুব বেশি আরামে না থাকা মানুষগুলোও অনেক সুখী হতে পারে। এজন্যই সুখী রিক্সাচালক স্বামী রাতে ঘরে ফিরে বউয়ের বেড়ে দেয়া ভাত খেতে খেতে হেসে কথা বলতে পারে। নিশ্চিন্তে পাশাপাশি ঘুমাতে পারে। আর বিশাল অট্টালিকাতে থেকেও মানুষ এতসব বিলাসিতার মাঝেও একাকি জীবন কাটায়। বাড়িভর্তি দামি দামি টাইলস। ঘরভর্তি বিদেশি ফার্নিচার। কিন্তু পাশে বসে এক কাপ চা খাওয়ার মত মনের মানুষ নেই। জীবনে কাছের মানুষের কি কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই? পরিবার, পরিজন, বন্ধু, ভালবাসার মানুষ এদের মূল্য কি অর্থ, সফলতার চেয়েও কম!

ঝর ঝর করে ঝরে পড়ছে এতগুলো বছরের চাপা অভিমান।

অনেকক্ষণ দুজন নীরব থাকল। জেরিন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসার পর ফাহাদ বলতে শুরু করল:

তোমাকে একটা গল্প বলি। একটি ছেলে তার পরিবারের সঙ্গে বিরোধিতা করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে। গ্রাম থেকে শহরে আসে জীবিকার আশায়। লজিং মাস্টার হয়ে একটি বাসায় থাকত। যেটুকু টাকা পেত তা দিয়ে বাকি পড়াশোনাটা শেষ করে একটা ভাল চাকরি পাবে এই আশায়। পেয়েও যায়। ছেলেটা শান্ত স্বভাবের আর মিষ্টভাষী ছিল; তাই তাকে সবাই আপন করে নেয়। একদিন ছেলেটার এক কলিগ ওকে তার ছোট বোনের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছেলেটাও রাজি হয়ে যায়। ছেলেটার বেতনে দুজনের সংসার ভালই চলে যাচ্ছিল। তারপর তাদের একটি সন্তান হয়। শুরু হয় সংসারযুদ্ধ। তারপরও সন্তানের কোনও কমতি রাখেনি। কোনও বাবা-মা’ই রাখে না। ছেলেটার প্রমোশন হয়, অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। তারপর এক এক করে আরেকটি ছেলে এবং একটি মেয়ে হয় তাদের। মোটামুটি টানাটানির সংসার। কিন্তু সুখের কমতি ছিল না। পরিবারে সকলের মধ্যে ভালবাসা ভরপুর। এই ছিল আমার বাবা-মায়ের গল্প।

অভাবের মধ্যেও আমার পড়াশোনা সবসময়েই ঠিকভাবে চালিয়ে গেছেন আমার বাবা-মা। হয়তো আমার কাছে তাঁরা আশা করেননি কিছুই। শুধু এতটুকুই যে তাদের ছেলে বড় মানুষ হবে, ভালো থাকবে।

ছেলে বড় হয়েছে। এখন মানুষ হবার পালা। দায়িত্ব গ্রহণের পালা। ছোট ভাইটার পড়াশোনা শেষ করাতে হবে, বোনটার বিয়ে দিতে হবে। বাবা-মায়ের বয়েস হয়েছে, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এতসব কিছুর মাঝে আমি তোমার দায়িত্ব নেয়ার জন্য তৈরি ছিলাম না। আমার আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তোমার হাতে অতটা সময় ছিল না। তোমার বাবা তোমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তার উপর তুমি সচ্ছলতায় বড় হওয়া মানুষ। আমার এত দায়িত্ব নেয়া নুয়েপড়া-কাঁধ আমি তোমার সাথে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারবো কিনা এই দুশ্চিন্তা লেগেই থাকতো। আমি জানি না, হয়তো তুমি মেনে নিয়ে চালিয়ে নিতে পারতে। কিন্তু বাধ সাধল আমার ভালোবাসা। তোমার সুখে থাকা জীবনের সাথে আমার টানাটানির সংসারের অসমতা আমাকে বার বার বাধা দিচ্ছিল। মন শুধু বলছিল, ভালবাসার মানুষ কাছে না থাকুক, ভাল থাকুক। সুখে থাকুক। এতটুকু ভরসা ছিল নিজের উপর যে, কোনও পিছুটান না থাকলে আমি একাই পারব এই সংসারে সুখের দিন ফিরিয়ে আনতে। বাবা-মায়ের না পাওয়া হাসিঝরা দিনগুলো ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তাঁরা এখনও কিছুই চান না আমাদের কাছে। ছেলেমেয়েগুলো ভালো আছে দেখেই মনের আনন্দে সুখে দিন কাটাচ্ছেন। ছেলেমেয়েগুলো মানুষ হয়েছে। মেয়েটার ভালো বিয়ে দিয়েছেন। ও স্বামী সংসার নিয়ে সুখে আছে। ছেলে দুটো কম বেশি ভালো চাকরি করছে। একটি পরিবারের জন্য এর চেয়ে সুখের কি হতে পারে!

বাড়তি পাওনা হিসেবে জেনে গেলাম ভালোবাসার মানুষও ভালো আছে, সুখে আছে। আমার আর কীইবা চাওয়ার থাকতে পারে? এক জীবন কাটিয়ে দেবার জন্য এই কি যথেষ্ট নয়? এখন আমি নিশ্চিন্ত চিত্তে ফিরে যেতে পারি আমার একাকী প্রবাসজীবনে। বুকভরা ভালোবাসা আর সন্তুষ্টি নিয়ে।

প্রশ্ন করতে পারো, এসব করে আমি কী পেয়েছি। উত্তরে তেমন কিছুই বলার নেই আমার। শুধু বলতে পারি আমি পেয়েছি অসীম, অনাবিল সুখ। বাবা মা, ছোট ভাইবোনদের মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে নির্মল আনন্দ আর পৃথিবীতে আছে কিনা আমার জানা নেই।

কথা শেষ হতে না হতেই তিন-চার বছরের একটি ছেলেকে কোলে নিয়ে একটি মেয়ে জেরিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। ছোট্ট ছেলেটি আম্মু বলেই জেরিনের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি জেরিনকে জিগ্যেস করে, আপা হঠাৎ ফোন করে এখানে আসতে বললেন, কোনো জরুরি বিষয়?

জেরিন ফাহাদকে দেখিয়ে বলে, দেখ তো এই ভাইয়াটাকে চিনতে পারিস কিনা।

আমতা আমতা করতে থাকে মেয়েটি।

‘তোর ফাহাদ ভাইয়া। ’

মেয়েটি উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রায় কেঁদেই ফেলে। ফাহাদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে চায়। ফাহাদ অস্বস্তিতে একলাফে দু’পা পিছিয়ে যায়। অবাক হয়ে জেরিনের দিকে তাকায়।

জেরিন বলে, ও হচ্ছে জরি, তুমি যাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলে। এবার ফাহাদের মুখও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, কেমন আছো, জরি?

ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের দোয়ায় অনেক ভাল আছি।

বাচ্চাটাকে দেখিয়ে বলল, আপনাদের দেয়া নতুন জীবন, স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক সুখে আছি ভাইয়া। সেদিন আপনার ওই সহযোগিতা আর তারপর থেকে আমার প্রতি আপুর যে ভালোবাসা তাতেই আমি নতুন জীবন পেয়েছি ভাইয়া। নাহয় আমাকেও হয়তো আজ বস্তির অন্য আট-দশটা মেয়ের মতো জীবন কাটাতে হতো, বলেই কেঁদে ফেলল জরি।

আরে না না কি বলছ এসব! আল্লাহর ইচ্ছায়ই সব হয়েছে। সবকিছুতেই কেউ না কেউ অছিলা হয়ে আসে। সেদিন আল্লাহর ইচ্ছাতেই আমরা দুজন তোমাকে খুঁজে পেয়েছিলাম। তার পরেরটা তুমি তোমার যোগ্যতা দিয়েই করে নিয়েছ।

‘ভাইয়া আমি যে আপনার কথা কতো জিগ্যেস করেছি আপুকে। আপনি কোথায় যে হারিয়ে গেলেন! এবার কিন্তু আর ছাড়ব না। জেরিনের দিকে তাকিয়ে বলে, আপু এবার কিন্তু ভাইয়াকে আর হারাতে দেবো না।

জেরিন খুব শান্ত গলায় বলল, চলে যাবার মানুষকে কখনো ধরে রাখতে নেই জরি। সেদিনও রাখি নি। আজও রাখব না। তবে তুই অবশ্যই যোগাযোগ রাখবি তোর ভাইয়ার সঙ্গে। তুই ওর কাছে আজীবন ঋণী।

জি আপু। অবশ্যই রাখব। আপু তাহলে আজকে ওকে বাসায় নিয়ে যাই। কালপরশু আবার নিয়ে আসব আপনার কাছে। ফাহাদ ভাই দোয়া করবেন আমাদের জন্য।

কোলের বাচ্চাটা জেরিনকে জড়িয়ে ধরে বায়নার সুরে বলছে, আম্মু আমি যাবো না। তোমার কাছে থাকব।

জেরিন ওর দু’গালে, কপালে আদর করে দিয়ে বলল, আজ যাও, আবার যখন আসবে আমরা বেড়াতে যাব। ঠিক আছে? জেরিনের দেয়া চকলেটটা হাতে নিয়ে বাচ্চাটি ওর মা’র কোলে ফিরে গেল।

ফাহাদ নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জেরিনের দিকে। ফাহাদ বুঝতে পারছে না জেরিন কি তার উপর অভিমান করে একা থেকে গেছে নাকি তাকে ভালবেসে। জেরিনও উঠছে চলে যাবে বলে। ফাহাদ ভাবছে ও কি জেরিনকে আটকানোর চেষ্টা করবে?

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৯

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

গল্প এর সর্বশেষ