ফুটবল মাঠে দীর্ঘদিন পর দেখা মিললো সাম্বা নৃত্যের। হলুদ-নীল জার্সিধারীদের সেই নাচে বিমোহিত হলো ফুটবলবিশ্ব।
২০০২ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে আজ স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। ইনজুরি কাটিয়ে এই ম্যাচ দিয়ে ব্রাজিলের একাদশে ফিরেছেন নেইমার জুনিয়র। ফিরেই গোলের দেখা পেয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। তিনি ছাড়া গোল পেয়েছেন ব্রাজিলের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিচার্লিসন এবং লুকাস পাকেতা। দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে একটি গোল শোধ করেছেন পাইক সেউং-হো।
খেলা শুরুর মাত্র অষ্টম মিনিটেই এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ডান দিক থেকে বল নিয়ে ভিনিসিয়ুসের দিকে ব্যাক ক্রস দেন রাফিনিয়া। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেখেশুনে প্রতিপক্ষের কয়েকজন ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের দেয়ালের ফাঁকা দিয়ে বল জালের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। এটাই বিশ্বকাপে তার (৩ ম্যাচে) প্রথম গোল।
এর মিনিট পাঁচেক পরেই দ. কোরিয়ার ডি বক্সে ফাউলের শিকার হলেন রিচার্লিসন। এবার পেনাল্টি থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নেইমার। ব্রাজিলের জার্সিতে কিংবদন্তি পেলের গোলের (৭৭) রেকর্ড থেকে মাত্র ১ গোল দূরে আছেন তিনি। এছাড়া সেলেসাওদের জার্সিতে এই নিয়ে তিনটি বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তি অর্জন করেছেন নেইমার। এই গোলেই নেইমার নাম লিখিয়েছেন রোনালদো নাজারিও ও পেলের সঙ্গে। ব্রাজিলের জার্সিতে চার বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড রয়েছে পেলের। রোনালদো করেছেন তিন বিশ্বকাপে। ২০১৪ ও ২০১৮ আসরের পর ২০২২ আসরে গোল করে এবার নেইমার ছুঁলেন ব্রাজিলিয়ান ফেনোমেননকে।
খেলার ২৯তম মিনিটে রিচার্লিসনের ম্যাজিক। এবার প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে মার্কুইনোসের কাছে বল দিলেন তিনি। মার্কুইনোস আবার পাঠিয়ে দিলেন থিয়াগো সিলভার কাছে। ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক সেই বল পাস করলেন রিচার্লিসনকে; যিনি নিখুঁত শটে বল জালে জড়িয়ে দিলেন। এর মাত্র ৭ মিনিট পরেই ব্যবধান ৪-০ করলেন লুকাস পাকেতা। এবার রিচার্লিসন বল নিয়ে দৌড়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে কাছে থাকা নেইমারকে খুঁজে নিলেন, যিনি আবার তা বাড়িয়ে দিলেন ভিনিসিয়ুসের দিকে। ম্যাচের প্রথম গোল করা ভিনি সেই বল ব্যাক ক্রসে দিলে গোলমুখের কাছে থাকা পাকেতার কাছে। দারুণ দক্ষতায় নিখুঁত ফিনিশিং দিলেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।
১৯৫৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধে ৪ গোল করল ব্রাজিল। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর এমন নজির আর কোনো দলেরই নেই। সেবার ব্রাজিলের মাটিতে তাদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৪ গোল করেছিল আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। শেষ পর্যন্ত ওই ৪-০ ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় ব্রাজিল।
বিরতির পর অবশ্য ব্রাজিল রক্ষণ কিছুটা জমাট করে ফেলে। দক্ষিণ কোরিয়া সেই সুযোগে উপরে উঠে আসতে শুরু করে। ৪৮তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগও পায় তারা। সতীর্থের লং বল ধরে ব্রাজিলের রক্ষণে ঢুকে পড়েন সন হিয়ুং-মিন। ঠাণ্ডা মাথায় গোলমুখে দারুণ একটা শটও নেন এই টটেনহ্যাম ফরোয়ার্ড। কিন্তু শেষ মুহূর্তে হাত দিয়ে বল বাইরে পাঠিয়ে দেন ব্রাজিল গোলরক্ষক আলিসন।
ব্রাজিলও ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল। ৫৪তম মিনিটে রাফিনিয়ার শট ঠেকান দ. কোরিয়ার গোলরক্ষক কিম সেউং। তবে বলে পেয়ে যান রিচার্লিসন, যিনি আবার বক্সের ভেতরেই থাকা ভিনিসিয়ুসের কাছে ফেরত দেন। কিন্তু ভিনির শট ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ৮ মিনিট পড়ে রাফিনিয়ার প্রচেষ্টা বিফলে যায় গোলরক্ষকের দক্ষতায়। তবে স্রোতের বিপরীতে ৭৬তম মিনিটে এক গোল শোধ করে দ. কোরিয়া। ফ্রি-কিকে বল পেয়ে দূরপাল্লার হাফ-ভলিতে আলিসনকে পরাস্ত করেন কোরিয়ান মিডফিল্ডার।
গোল হজম করার কিছুক্ষণের মধ্যে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মুল গোলরক্ষক আলিসনকে তুলে নেন তিতে। তার বদলে ওয়েভারতনকে নামান ব্রাজিল কোচ। এরপর নেইমারকে তুলে নামানো হয় রদ্রিগোকে। আরও আগেই বদলি হিসেবে নামা দানি আলভেস ব্রাজিলের শেষ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি। ৮৮তম মিনিটে এই অভিজ্ঞ সেন্টার-ব্যাকের বাইসাইকেল কিক প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে বাধা পায়। এরপর আর বলার মতো কোনো আক্রমণের দেখা মেলেনি। ফলে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
এমএইচএম