নির্বাহী কমিটির সভার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে 'সাংবাদিকদের বাপের জুতা পরা ছবি নিয়ে ফেডারেশনে আসতে হবে'- এমন মন্তব্য করেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। যার জেরে সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করেছে দেশের সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।
আজ বুধবার বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদ উল আলম চৌধুরী ও মহাসচিব দীপ আজাদ সাংবাদিকদের নিয়ে কাজী সালাউদ্দীনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে অবিলম্বে কাজী সালাউদ্দীনের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। না হলে, সারাদেশের ফুটবল সংগঠকদের প্রতি তাকে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
বিএফইউজের দফতর সম্পাদক স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'দেশের ফুটবল সংস্থার শীর্ষ পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, তাদের পরিবারকে জড়িয়ে এই বক্তব্য দেয়ার পর বাফুফে সভাপতির মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দেশবাসী সন্দিহান হয়ে পড়েছে। কাজী সালাউদ্দিন দায়িত্ব পালনকালে দেশের এই খেলার মান প্রতিনিয়ত নিম্নগামী। র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থা প্রায় সবার নিচে। '
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'অনিয়ম দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাফুফে। যার সাম্প্রতিক প্রমাণ ফিফার নিষেধাজ্ঞা। বিভিন্ন সময়ে এসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার সর্বশেষ মন্তব্যে। দেশে ও দেশের বাইরে ফুটবলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পর বাফুফে সভাপতি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করে বিএফইউজে। '
সম্প্রতি বাফুফের (সদ্য সাবেক) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে জালিয়াতির দায়ে ২ বছর নিষিদ্ধ ও প্রায় ১২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ফিফা। অনিয়মের অভিযোগে আরও ৩ জন পেয়েছেন কারণ দর্শানোর নোটিশ। মাঠেও ফুটবলের অবস্থা তথৈবচ। বছরের পর বছর র্যাংকিংয়ের তলানিতে পড়ে আছে বাংলাদেশ। কাজী সালাউদ্দিনের চার মেয়াদে ফুটবলে নেই কোনো বলার মতো সাফল্য। এর মধ্যেই নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।
গতকাল বাফুফে ভবনে নির্বাহী কমিটির সভার পর সংবাদ সম্মেলনের আগে সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী এবং সহ-সভাপতি কাজী নাবিল ও আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন কাজী সালাউদ্দিন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসেই সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়া শুরু করেন।
সাংবাদিকেরা প্রশ্ন শুরুর আগে সালাউদ্দিন নিজে থেকেই বলতে শুরু করেন যে, ‘সাংবাদিকরা এখানে (বাফুফেতে) ঢুকতে গেলে তাদের আমার এখানে তাদের বাপ-মায়ের ছবি দিতে হবে। আরেকটা শর্ত হলো তার বাবার ছবি পাঠাবে, জুতা পরা। ঠিক আছে (হাসি)? এটা হতে হবে বাধ্যতামূলক। বাবার জুতা পরা ছবি থাকতে হবে। ’
এমন বেফাঁস মন্তব্য যে গণমাধ্যমকর্মীদের রেকর্ডারে রেকর্ড হতে পারে সেটা হয়তো অনুমান করতে পারেননি বাফুফে বস।
পরবর্তীতে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমে নিউজ দেখছি, সাংবাদিকদের কষ্ট দিয়ে আমি কিছু বলেছি। তবে আমি সাংবাদিকদের কষ্ট দেয়ার জন্য কিছু বলিনি। আমি নাবিলের সঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে মজা করছিলাম। আমাদের এই কথা যে কেউ রেকর্ড করছিল সেটা আমি জানতাম না। ’
‘আমি এই কথায় যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাই। আমি আপনাদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলিনি। এটা আমার ব্যক্তিগত আলোচনা ছিল। সেখানে রেকর্ডার ছিল এটা আমি জানতাম না। ’
তবে ক্ষমা চেয়েও যে সহজে পার পাচ্ছেন না তা একপ্রকার নিশ্চিত। কারণ ক্ষোভে ফুঁসছেন সমর্থক থেকে শুরু করে ক্রীড়া সাংবাদিকরা। সবার এখন একটাই দাবি, কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগ। সাংবাদিকদের সংগঠন বিএফইউজেও বিবৃতি দিয়ে ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমী ও সাংবাদিকদের পাশে থাকার বার্তা দিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৩
এআর/এমএইচএম