১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে আবাহনী-মোহামেডান। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের লড়াই ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের উত্তেজনার পারদ ছিল তুঙ্গে।
প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া মোহামেডান দারুণ এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে দুই দলের খেলা ৩-৩ সমতায় শেষ হয়েছে। খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে।
মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতেও গড়লেন নতুন এক ইতিহাস। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন তিনি।
প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ই মোহামেডানের উপর চড়াও হয়ে খেললো আবাহনী। একের পর এক আক্রমণে মোহামেডানের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখলো পুরোটা সময়। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় মিনিটে আরিফ হোসেনের লম্বা থ্রো-ইন হেডে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিল মোহামেডান। ফিরতি বলে রাফায়েল আগুস্তোর হেড ক্রস বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
সপ্তম মিনিটে ডি-বক্সের ডান প্রান্ত ধরে এগিয়ে এসে শট করেছিলেন এমেকা। তবে তার বাঁকানো শটবারের উপর দিয়ে চলে যায়। তবে গোলের জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি আবাহনীকে। ১৫ মিনিটে এমেকার ডিফেন্স চেরা ক্রস পেয়ে যান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তার নিচু শ্ট গোলরক্ষক সুজনের পায়ে লেগে জালে জড়ায়। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী।
গোল হওয়ার পর আবাহনীর সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠে। গ্যালারিতে নীল-হলুদ ধোঁয়ার মশাল জ্বালিয়ে উদযাপন করেন তারা। ২৯ মিনিটে বক্সের ডান প্রান্ত থেকে কলিনদ্রেসের ক্রস বক্সের ভেতর পেয়ে যান এমেকা। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল দেন বাঁ প্রান্তে থাকা ফয়সালের কাছে। তার শট রুখে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক।
৩৬ মিনিটে ফ্রি-কিক পায় আবাহনী। বক্সের ডান প্রান্ত থেকে কলিনদ্রেস সরাসরি গোলে শট নেন। তবে বল সরাসরি জমা হয় গোলরক্ষকের হাতে। ৪৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কলিনদ্রেস। মাঝ মাঠ থেকে লম্বা করে বল বাড়ান হৃদয়। বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান কলিনদ্রেস। দ্রুত গতির শটে দূরের পোস্টে বল জালে জড়িয়ে দলকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন তিনি।
যোগ করা সময়ে (৪৫+২) ফ্রি-কিক থেকে দলকে এগিয়ে দিতে পরতেন কলিনদ্রেস। তার শট ক্রস বারে লাগলে ব্যাবধান বাড়েনি। প্রথমার্ধে বেশ কিছু আক্রমণের চেষ্টা করলেও তেমন উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করতে পারেনি মোহামেডান।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে বদলে গেল খেলার দৃশ্যপট। বদলে যাওয়া এক মোহামেডানকে দেখা গেল মাঠে। আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয়া মোহাডােনকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হলো আবাহনীকে।
বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় মিনিটেই ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল মোহামেডানের সামনে। বলতে গেলে ম্যাচে তাদের এটাই তাদের প্রথম সুযোগ। উজবেক মিডফিল্ডার মুজাফফরজন মুজাফফরভের ফ্রি-কিক মানবদেয়ালে প্রতিহত হলে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন সুলেমান দিয়াবাতে। মোহামেডান অধিনায়কের শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান আবাহনীর এক খেলোয়াড়।
৫২ মিনিটে আবারও সুযোগ মোহামেডানের। এবার ইমানুয়েল সানডের শট চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। তবে আক্রমণাত্মক ফুটবলে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোলে মোহামেডানকে সমতায় ফেরান সুলেমান দিয়াবাতে। ৫৬ মিনিটে বক্স বরাবর কামরুল ইসলামের শটে বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন রহমত মিয়া। ফাঁকায় বল পান দিয়াবাতে। তার প্লেসিং শট আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলকে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় জালে।
প্রথম গোলের চার মিনিট পর আবারও সুলেমান জাদু। ৬০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মুজাফফরভের শট ফিস্ট করে ফেরান আবাহনী গোলরক্ষক সোহেল। তার ফিস্টে বক্সের বাঁ প্রান্তে বল পান জাফর ইকবাল। জাফরের শট থেকে লাফিয়ে হেডে বল জালে জড়িয়ে মোহামেডান সমর্থকদের উল্লাসে ভাসান মালিয়ান ফরোয়ার্ড।
সমতা ফিরতেই জমে ওঠে ম্যাচ। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আবাহনীর আক্রমণও। ৬৫ মিনিটে এমেকা ওগবাহর হেডে বল ফেরে ক্রসবারে লেগে। পরের মিনিটেই গোল করে সেই আক্ষেপ মেটান আবাহনীর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড। ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের শট ঝাঁপিয়ে ফিস্ট করেছিলেন মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেন। সুযোগের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ওগবাহ। সুজনের গ্লাভসে লেগে ফিরে আসা বলে আলতো টোকায় বল জড়ান জালে।
মোহামেডানকে আবারও সমতায় ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন সুলেমান দিয়াবাতে। সুযোগ ছিল হ্যাটট্রিকেরও। ৭৫ মিনিটে জাফর ক্রস থেকে সুলেমানের হেড সাইডবার দিয়ে চলে যায় বাইরে।
কিন্তু ৮৩ মিনিটে আর সুলেমানকে আর আটকাতে পারেনি আবাহনী। চিরপ্রতিন্দ্বন্দ্বিদের রক্ষণ ভেঙে ঠিকই তুলে নিয়েছেন হ্যাটট্রিক। কামরুল ইসলামের কর্নার থেকে সুলেমানের হেড দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আবাহনী গোলরক্ষকের। ফেডারেশন কাপের ৪৩ বছরের ইতিহাসে ফাইনালে এটিই প্রথম হ্যাটট্রিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
এআর/এমএইচএম