দেশের ফুটবল ইতিহাসে একের পর এক নতুন অধ্যায় যোগ করেই চলছে বসুন্ধরা গ্রুপের ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। দেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে নিজস্ব আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম ক্লাব হিসেবে নিজেদের স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইট স্থাপন তো আছেই।
আগামী ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ফিফা প্রীতি ম্যাচ দিয়ে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার আন্তর্জাতিক অভিষেক হবে। ম্যাচটিকে সামনে রেখে দ্রুতগতিতে চলছে স্টেডিয়াম সুসজ্জিত করার কাজ। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর হবে দ্বিতীয় ম্যাচ।
আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে যা যা প্রয়োজন ছিল তার সবটাই প্রায় শেষ করেছে কিংস অ্যারেনা। গ্যালারিতে চেয়ার বসানো সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন। সরেজমিনে দেখা যায়, কিংস অ্যারেনার গ্যালারিতে চেয়ার বসানোর কাজ প্রায় শেষ। গতকাল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চেয়ার বসাচ্ছিলেন কয়েকজন। অন্যদিকে চলছিল ডাগ আউট সাজানোর কাজ। উন্নতমানের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলেও বৃষ্টির পানি যেন মাঠে জমে না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখছেন কেউ কেউ। এত সব কর্মযজ্ঞ শুধুই আন্তর্জাতিক অভিষেক রাঙিয়ে তুলতে।
বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে নিজস্ব হোম ভেন্যুতে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলে কিংস ইতিহাস গড়েছে আগেই। এবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করে নতুন দিগন্তের শুরুর অপেক্ষায় আছে ভেন্যুটি। আন্তর্জাতিক অভিষেকে যেন কোনো কমতি না থাকে সে জন্য কিংস অ্যারেনাকে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে কিংসের মিডিয়া ও মার্কেটিং ম্যানেজার আহমেদ শায়েক বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, এই দুই ম্যাচ সাড়ম্বরে আয়োজন করতে। এটা আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। প্রথম ম্যাচ বলে কথা। তাই শুরুটা বিশেষ করতে যা যা করা দরকার, সব উদ্যোগ নিয়েছি। বাফুফের সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছি। ’
আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে হলে শর্ত ছিল গ্যালারিতে চেয়ার বসানোর। এএফসির নির্দেশনা মেনেই গ্যালারিতে বসানো হয়েছে চেয়ারগুলো। বেশিরভাগ চেয়ারের রং করা হয়েছে বসুন্ধরা কিংসের জার্সির সঙ্গে মিল রেখে। উত্তর দিকের গ্যালারিতে লালের মাঝে রাখা হয়েছে সাদা রঙের কিছু চেয়ার। তাতে বড় করে ফুটে উঠেছে ‘কিংস’ লেখা। আজকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে চেয়ার বসানোর কাজ। সাধারণ গ্যালারিতে আসনসংখ্যা পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। ভিআইপি গ্যালারিতেও করা হয়েছে সংস্কার। সেখানেও বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার। সরিয়ে আনা হয়েছে প্রেসবক্সও। আগে দক্ষিণ পাশের গোলপোস্টের পেছনে থাকলেও সেটা এখন পশ্চিম পাশের মাঝ বরাবর নিয়ে আসা হয়েছে। এতে আরো নিখুঁতভাবে ম্যাচ দেখতে পারবেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা। দেশীয় দূর্বাঘাসে তৈরি মাঠের পরিচর্যা করা হচ্ছে নিবিড়ভাবে। যা দেখলে জুড়িয়ে যায় চোখ।
আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তুতির কাজ দ্রুতগতিতেই চলছে, এমনটাই জানালেন মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ‘কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করছে সবাই। দিন-রাত মিলিয়ে দুই শিফটে কাজ চালু আছে। এক মুহূর্তের জন্যও কাজ থেমে নেই। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের ১ তারিখের মধ্যেই সব কাজ হয়ে যাবে। ’
ইউরোপিয়ান ফুটবলের আদলে তৈরি কিংস অ্যারেনার ড্রেসিংরুমে অবশ্য আনা হয়নি কোনো পরিবর্তন। এ ছাড়া এএফসি ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা, রেফারি, ব্রডকাস্টিং ও ধারাভাষ্যকারদের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা আলাদা রুম। আলাদা রুমের নির্দেশনা এসেছে এএফসি থেকেই।
এই মাঠে বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ মানেই কানায় কানায় পূর্ণ থাকে গ্যালারি। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচেও এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাই ফুটবলপ্রেমীরা যাতে নির্বিঘ্নে কিংস অ্যারেনায় যেতে পারেন, সেজন্য ব্যবস্থা থাকছে শাটল সার্ভিসের। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রবেশের তিনটি গেটে অপেক্ষমাণ থাকবে এই বাস সার্ভিস। ম্যাচের টিকিট দেখাতে পারলেই স্টেডিয়ামগামী বাসে উঠতে পারবেন সমর্থকরা। এএফসি নির্দেশনা মোতাবেক দর্শকদের জন্য থাকছে জরুরি চিকিৎসাব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে আহমেদ শায়েক বলেছেন, ‘গ্যালারিতে দর্শকরা অনেক সময় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এ রকম ম্যাচে অপ্রীতিকর কিছু ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই সাবধানতা অবলম্বনে এএফসি থেকেই মেডিক্যাল রুম রাখতে বলেছে। ’
সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া এএফসি কাপের আগেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হচ্ছে কিংস অ্যারেনার। তাতে আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাচ্ছে বসুন্ধরা কিংসের, বড় ক্যানভাসে দেশের ফুটবল ইতিহাসেও।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
এআর/এমএইচএম