২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করার আগে ও পরে ‘স্পোর্টসওয়াশিং’য়ের অভিযোগ উঠেছিল কাতারের বিরুদ্ধে। এবার একই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে তাদের প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও।
যুক্তরাষ্ট্রের 'ফক্স নিউজ'-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'যদি স্পোর্টসওয়াশিং আমার জিডিপি ১ শতাংশ বৃদ্ধি করে, তাহলে আমরা এটা চালিয়ে যাব। আমি এটাকে (স্পোর্টসওয়াশিংয়ের অভিযোগ) পাত্তা দিই না। এ (ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগের) কারণে আমাদের জিডিপি ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আমি চাই এর সঙ্গে আরও ১.৫ শতাংশ যোগ হোক। লোকে যা বলে বলুক, ওই ১.৫ শতাংশ আমাদের লাগবেই। '
একথা আর অজানা নয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব তার ক্ষুদ্র প্রতিবেশী কাতারের মতো কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করে শুধু ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা ভাবছে না; তাদের লক্ষ্য পুরো ক্রীড়াবিশ্বেই আধিপত্য বিরাজ করা। এরইমধ্যে অনেক সাফল্য পেয়েছে দেশটি। সেখানে বিশ্বের নামীদামী ক্রীড়া তারকাদের পাড়ি জমানোর হিড়িক পড়ে গেছে যেন। তাদের আনতে খরচ করা হচ্ছে অগণিত অর্থ। আয়োজিত হচ্ছে অন্যান্য অনেক খেলার বড় বড় টুর্নামেন্ট।
ক্রীড়াক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের নিয়ন্ত্রণে থাকা 'পাবলিক ইনভেসমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ)। গত বছর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেড অধিগ্রহণ করা হয়েছে এই ফান্ডের মাধ্যমে। সৌদির শীর্ষ চারটি ক্লাবেও বিনিয়োগ রয়েছে পিআইএফ-এর। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার জুনিয়র, করিম বেনজেমা, সাদিও মানের মতো ফুটবল সুপারস্টারদের দলে ভিড়িয়ে রীতিমত চমকে দিয়েছে এই ক্লাবগুলো। সৌদি প্রো লিগের ক্লাবগুলো গত জুনের দলবদলের সময় ইউরোপ থেকে খেলোয়াড় আনতে প্রায় ১ বিনিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।
মুদ্রার উল্টোপিঠও আছে। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিবিসি বলছে, গত বছর দেশটিতে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নারীদের প্রতি বৈষম্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার অভিযোগ; ইয়েমেন যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনা তো আছেই। এসব অভিযোগ মুছে ফেলতেই নাকি 'স্পোর্টসওয়াশিং'য়ের ব্যবহার করছে সৌদি আরব। এজন্য দেশটি কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করছে ক্রীড়াক্ষেত্রে ।
তবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বলছেন, তার দেশের 'অর্থনীতির ভালো'র জন্যেই ক্রীড়াক্ষেত্রে এত বিনিয়োগ। মোহাম্মদ বিন সালমানের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ফুটবল ছাড়াও ফর্মুলা ওয়ান, গলফ, বক্সিং, রেসলিং এবং টেনিসে বিনিয়োগ করেছে 'পিআইএফ'। কিন্তু এত অর্থ খরচ করেও সমালোচনা থেকে মুক্তি মিলছে না তাদের।
এর আগে অবিশ্বাস্য পরিমাণ খরচ করে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল কাতার। তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। বলা হচ্ছিল, অর্থের জোরে সব অভিযোগ আড়াল করে রাখছে কাতার। তাদের ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগকে প্রথমবার 'স্পোর্টসওয়াশিং' বলা শুরু হয়। তাদের বিরুদ্ধে 'সফট পাওয়ার' ব্যবহার করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও কাতার তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সূত্র- বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩
এমএইচএম