অধিকাংশ সময়ই আন্ডারডগদের জয় শুধু নৈতিক বিজয়ে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এইবার ব্যতিক্রম ঘটালো ফিলিস্তিনের অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল।
এবারের পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (ডব্লিউএফএফ) চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়, কেউই খুব একটা আশা করেনি ফিলিস্তিনের কাছ থেকে। জর্ডান ছিল হট ফেভারিট, লেবানন ছিল না, আর সিরিয়া অনেক এগিয়ে। ফিলিস্তিনি কুয়েতের চেয়ে একটু ভালো করবে—এই ছিল সাধারণ ধারণা।
প্রস্তুতিও ছিল বেশ অগোছালো। প্রথম ম্যাচের মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে দল একত্রিত হয়। যুদ্ধের কারণে দেশে ফুটবল কার্যত বন্ধ। তাই দল গঠন করতে হয়েছে প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়ে—কেউ সুইডেন থেকে, কেউ কানাডা, কেউবা আবার যুক্তরাষ্ট্র, চিলি বা মিশর থেকে।
তবে মাঠে নেমেই চমকে দেয় ফিলিস্তিন। প্রথম ম্যাচে কুয়েতকে উড়িয়ে দেয় ৯-০ গোলে। এরপর যদিও জর্ডানের কাছে হারে ৩-০ ব্যবধানে, তবুও সিরিয়ার সঙ্গে ১-১ ড্র করে ফাইনালে ওঠে তারা।
ফাইনালেও প্রতিপক্ষ জর্ডান, নিজেদের মাঠে খেলে যারা। উত্তপ্ত আগাবার রোদে প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধে সেলিনা ঘনেইমের হেডে এগিয়ে যায় ফিলিস্তিন। এরপর জর্ডান সমতায় ফেরে। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
এই জায়গাটাই বদলে দেয় সবকিছু। কারণ ফিলিস্তিনের গোলরক্ষক মিরাফ মারুফ ওয়ার্মআপে পা ভেঙে ফেলেছিলেন! তবুও মাঠে দাঁড়িয়ে যান বীরের মতো। প্রথম দুই পেনাল্টিই ঠেকান তিনি। এরপর মিরাল কাসিসের আত্মবিশ্বাসী শেষ শটে নিশ্চিত হয় ইতিহাস—ফিলিস্তিন নারী দলের প্রথম শিরোপা।
খেলার পর আবেগাপ্লুত হয়ে সহকারী কোচ ওমর বারাকাত বলেন, “কৌশল নয়, আমরা খেলেছি গাজার জন্য। আগের ম্যাচের ভুল শুধরে নিয়েছিলাম, আর বাকিটা খেলোয়াড়দের ইচ্ছাশক্তি। ”
ম্যাচ শেষে দলটির খেলোয়াড় মালাক বারাকাত বলেন, “আমরা খেলি গাজার জন্য, ফিলিস্তিনের জন্য, সেই প্রতিটি মায়ের জন্য যিনি তাঁর সন্তান হারিয়েছেন, প্রতিটি শহীদের জন্য। এটা শুরু মাত্র। সামনে আরও অনেক কিছু দেখবে দুনিয়া। ”
এই জয় শুধুই একটা ফুটবল ম্যাচের নয়—এটা প্রতিবাদের, প্রতিরোধের, সম্মানের এবং স্বপ্নের জয়। এক নতুন অধ্যায়ের শুরু ফিলিস্তিন নারী ফুটবলের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৫
এমএইচএম