ফুটবল ইতিহাসে এমন অনেক গল্প আছে, যেখানে আনন্দের চেয়ে কষ্টই বেশি। তবে লাউতারো মার্তিনেসের কাহিনী সেই ব্যতিক্রমী অধ্যায়গুলোর একটি।
শুরুটা হয়েছিল যন্ত্রণার
ছয় দিন আগে হঠাৎ এক ইনজুরিতে কাঁপে ইন্টার মিলান শিবির। প্রথমার্ধের শেষে মাঠ ছাড়েন লাউতারো, উরুর ওপরের অংশে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে। পরে জানা যায়, এটি ছিল 'ফ্লেক্সর স্ট্রেইন', যার জন্য সাধারণত বিশ্রাম লাগে অন্তত তিন থেকে চার সপ্তাহ। কিন্তু ঠিক তখনই লাউতারো সিদ্ধান্ত নেন—থেমে থাকবেন না।
দুই বেলার অনুশীলন, পেশীতে বরফ, বিশেষ ব্যান্ডেজ—সব কিছুতেই ছিল প্রস্তুতি শুধু একটাই উদ্দেশ্যে: খেলতে নামা, ইন্টারকে বাঁচানো। চিকিৎসকেরা নিরুৎসাহিত করলেও লাউতারো বলেছিলেন, "যতই যন্ত্রণা হোক, আমি খেলবো। ব্যান্ডেজ বেঁধে নামবো যুদ্ধে। "
মাঠে নামা, চোখে জল আর মা’র ফোন
ম্যাচ শেষে আবেগাপ্লুত লাউতারো বলেন, "আমি খেলার উপযুক্ত ছিলাম না। বাসায় কাঁদছিলাম। মা চেয়েছিল না আমি খেলি, কারণ আমি সুস্থ ছিলাম না। কিন্তু এই মাঠটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। "
তার এই সিদ্ধান্ত হয়তো অনেকের কাছে বেপরোয়া মনে হতে পারে, কিন্তু সমর্থকদের ভালোবাসা এবং সতীর্থদের জন্য তার আত্মত্যাগ আবারও প্রমাণ করল—তিনি একজন প্রকৃত নেতা।
বার্সার স্বপ্নভঙ্গ, ইন্টারের স্বপ্ন বাঁচালেন লাউতারো
জোসেপ মিয়াজ্জা স্টেডিয়ামে ৬০ মিনিটের দাপটে বার্সেলোনার স্বপ্নভঙ্গ ঘটান লাউতারো। প্রথম গোলের জন্য দুর্দান্ত পাস বাড়ান ডামফ্রিসকে এবং দ্বিতীয় গোলের আগে জিতিয়ে আনেন এক গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি, যেখানে তার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। সেন্টার-ব্যাকদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন, চোখে-মুখে ছিল যন্ত্রণার ছাপ—তবু থামেননি।
শেষমেশ ক্লান্ত শরীর আর সহ্য করতে পারেনি। তাঁকে তুলে নিতে হয় মাঠ থেকে। কিন্তু ততক্ষণে কাজ শেষ। ইন্টার এগিয়ে এবং বার্সা কোণঠাসা।
একটি লক্ষ্য, একটি বিশ্বাস
ম্যাচের আগে ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, "আশা করি আজকের পর ২০ দিন বিশ্রাম নিতে পারব। কিন্তু এই ম্যাচটা আমি খেলবই। " নিজের শরীর, ক্যারিয়ার কিছুই চিন্তা করেননি—শুধু দলের জন্য খেলেছেন।
লাউতারোর এখন লক্ষ্য সিরি আ শেষ করা এবং তারপরে মিউনিখে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। ততদিনে তিনি নিজেকে আবার শতভাগ ফিট করে তুলবেন, ঠিক যেমন এক প্রকৃত যোদ্ধা করে থাকেন।
এমএইচএম